Ameen Qudir
Published:2017-02-23 18:47:20 BdST
শাওনের জন্য মাঝে মাঝে বেশ মায়া লাগে
ডা. নাসিমুন নাহার
____________________________
শাওনের জন্য মাঝে মাঝে বেশ মায়া লাগে। আমার ভীষন পছন্দের লেখক হুমায়ুন স্যারের অথবা একজন বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনসঙ্গী বা তার সন্তানের মা বলে নয় বরং একজন নারী হিসেবে আরেকজন নারীর প্রতি এই গভীর মমত্ব বোধ।যদিও আমাদের সমাজে নাকি নারীই নাকি নারীর শত্রু ! ভাবনার পরিবর্তনের সময় এসেছে ।
দয়া করে, চিল্লাচিল্লি শুরু করবেন না। আমার মন যা চায় তা বলার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে।
শাওন সম্ভবত আমার দু/তিন বছরের সিনিয়র হবেন। কাছাকাছি বয়সের হওয়ায় এবংতার সাথে আমার জীবনের অদ্ভুত কিছু মিল থাকায় হয়তো এই মায়ার জন্ম ।
শাওন যখন নতুন কুড়ি চ্যাম্পিয়ন তখন থেকেই আমি তার ভক্ত।একটা মেয়ে কত গুণের অধিকারী ছিল---- নাচ, গান, অভিনয় সবকিছুতেই সে ছিল চ্যাম্পিয়ন, সেই সাথে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী।একজন মেয়েকে পছন্দ করার জন্য এই গুণগুলোই যথেষ্ট।
যেখানে আমাদের অদ্ভুত সমাজে 'আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী' হিসেব চলে সেখানে হুমায়ূন স্যারের মতো বয়সে পরিপক্ক এবং যথেষ্ট ম্যাচিউর এবং অজস্র মেয়ের গুণমুগ্ধ লেখককে ছিনিয়ে নেয়া চাট্টিখানি কথা না !!! তাও স্কুল পড়ুয়া কোন বালিকার কাছে স্যারের নিজেকে সঁপে দেয়াটা কেউই মেনে নিতে পারেনি।তখন না বুঝলেও এখন একটা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছে।
শাওন নাহয় বয়সের দোষে না বুঝেই লেখকের সৃষ্টির ফাঁদে আটকা পড়ে গিয়েছিল (!) কিন্তু স্যারের মতো ম্যাচিউর পুরুষ সংসারে থাকা একজন মানুষ কেন সমাজ সংসারের পরোয়া না করে সর্বনাশা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ?
যদিও এটা অবশ্যই তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।কিন্তু একজন হুমায়ূন আহমেদ যে জাতীয় সম্পদ।তাই তাকে নিয়ে কথা হবেই।
শাওন নিশ্চয়ই স্যারকে জুজুর ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে নেয়নি, শাওন নিশ্চয়ই ছেলে ধরা সেজে চার বাচ্চার বাপকে ছিনতাই করে নাই।স্যার নিজেই শাওনের কাছে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিলেন।জী এটাই সত্য।অবশ্যই আগের সংসারের প্রতি স্যারের আচরন অন্যায় ছিল। কিন্তু তার জন্য গণহারে সবার শাওনকে দায়ী করাটা তার থেকেও বেশি অন্যায়।শাওন না হলেও অন্য কোথাও স্যার ঠিকই আশ্রয় খুঁজে নিতেন।সুর কেটে যাওয়া সংসারে সবাই আটকে থেকে হাঁসফাঁস করতে করতে দমবন্ধ জীবন কাটিয়ে দিতে পারে না।আর পৃথিবীতে এটাই প্রথম অসম বয়সী বিয়ে নিশ্চয়ই নয়।
শাওনের জন্য মায়ার আরো একটি কারন তার দুই শিশু সন্তান।আমাদের এই কিম্ভূত সমাজে একজন একা মায়ের পথ চলা কখনোই সহজ না।একজন পঁয়ত্রিশ/ ছত্রিশ বছরের মেয়ের জন্য শুধুমাত্র নিজের জীবন নিয়ে নতুন করে না ভেবে সন্তানদের জন্য জীবন সাজানো ব্যাপারটা খুব কিন্তু সহজ না .........।
কত অব্যক্ত শব্দ, নিশ্চুপ রাত, চোখের জল,অজস্র স্মৃতি বয়ে চলা যৌবনের হাত ধরে 'একা'---- 'সম্পূর্ণ একা' পৃথিবীর পথ পাড়ি দেয়া।আশেপাশে নিশ্চয়ই লোকের অভাব হয় না 'একা মেয়ে' র। কিন্তু লোকের ভিড়ে 'মানুষের' যে বড্ড অভাব........।
শাওন তুমি ভালো থেকো।
সমাজটা কেমন দুমুখো তা নিশ্চয়ই জানো।
সমাজের অন্যতম কাজ হচ্ছে কথা শোনান।
তুমি যদি আজ 'বেচারী' হয়ে থাকতা দেখতা সবাই কত আহা উহু করত।কিন্তু যেহেতু তুমি সমস্ত ঝড় ঝাপটা সাথে নিয়েই টিকে আছ, সেহেতু সমাজের তা সহজে হজম হবে কেন !!!
এই সমাজ ঘরে বৌ/জামাই রেখে বিবাহিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বাইরে have some fun/time pass কে নিতে রাজী কিন্তু স্যারের তোমাকে বিবাহিত স্ত্রীর মর্যাদা দেয়াতে জ্বলে পুড়ে ছারখার।
হিপোক্রিয়েট সোসাইটি ইনডিড !
_____________________________
লেখক ডা. নাসিমুন নাহার । দেশের জনপ্রিয় কলাম লেখক।
আপনার মতামত দিন: