Saha Suravi
Published:2025-01-22 10:21:41 BdST
ওসিডি ডায়েরি : নতুন এপিসোড"দাঁড়ি গোঁফহীন লোক দেখলে ছেলেটির মধ্যে কামোত্তেজনা তৈরী হয়:এজন্য মা বোনদের এড়িয়ে চলে"
প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন
প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ,কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক এবং জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক, প্রধান, সাইকোথেরাপি উইং,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
____________________________
কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মায়ের সাথে এসেছে। তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে । নানা,মামারাই তাদের দেখাশোনা করে। মা জানান, ছেলে পড়াশোনায় অমনোযোগী। সবার সাথে রাগারাগি মারামারি করে। এমনকি গালিও দেয়। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে না। খেতে বসে না।
ওর সমস্যা হলো সবাইকে খুটিয়ে দেখা । পাশে বসা হোক বা দূরে দৃষ্টিসীমার মধ্যে হলেই হলো ,তা পরিচিত বা অপরিচিত যাই হোক না কেন ;লোকটা কিভাবে কথা বলে; কিভাবে বসছে তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। তার মনে সারাক্ষণ প্রশ্ন আসে। কি কেন এসবের প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য মাথা ভার হতে থাকে। কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না।
আমি তাকে সাহস দিলাম। বললাম এটা একটা ভালো গুণ । খুটিয়ে দেখার ক্ষমতা সবার কিন্তু থাকে না। তাহলে সমস্যা কোথায়?
ছেলেটি বলল এসবের মধ্যে আমি ডুবে যাই। কি কেন এসবের প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য মাথা ভার হতে থাকে। আশেপাশের কিছু খেয়াল থাকে না। সবকিছু ভুলে যাই। আর এসব দেখে আমার তো কোন লাভ নাই। কোন দরকারও নাই।
ছেলেটি জানায়, নিজেকে বেশী মেধাবী মনে করে । তাই সবাইকে তা বোঝানোর জন্য আস্তে আস্তে পড়ে।
কিন্তু তাতে ফল হয় না। বরং পড়াশোনায় সে এখন মনোযোগ দিতে পারে না। দাড়ি গোঁফবিহীন লোক দেখলে তার মধ্যে কামোত্তেজনা তৈরী হয়। এজন্য সে তার মা বোনদের এড়িয়ে চলে তাদের দিকে তাকায় না। কথা বলে না। একটা মানসিক দূরত্ব তৈরী হচ্ছে। মন সবসময় খারাপ থাকে। পাপবোধে ভুগছে। রাগ হয় । এরা কেউ কাছে আসলে আঘাত পর্যন্ত করে।
প্রচন্ড গরমে পাখা বন্ধ করে রাখে । মনে হয় পাখার শব্দের জন্য আজানের শব্দ যদি শুনতে না পায়। অজু করার সময় কতবার ধোয়া হলো তিন বার নাকি কম ? প্রত্যেকটা লোমকূপে পানি লেগেছে কিনা এ নিয়ে সারাক্ষণ সন্দেহ কাজ করে ।কানের মধ্যে পানি গেল কিনা ঠিক মত, হাতে আঙুলের ফাঁকে ধোয়া ঠিক মত হল কিনা, তা নিয়ে সারা দিন চিন্তার শেষ নেই।
যা করণীয়:
ওসিডি রোগীদের চি›তা ভাবনা একা থাকলেই বেশী আসে। পড়ার সময় কেউ সামনে থাকার চেষ্টা করবেন । অভিভাবক কাজে ব্যস্ত থাকলেও পড়ার সময় মাঝে মাঝে এসে কথা বলবেন। এতে ঐ চিন্তাগুলো রোগীকে পেয়ে বসবে না। চিন্তায় মগ্ন হওয়ার সুযোগ কমে যাবে। একা থাকার জায়গাগুলো খেয়াল রাখবেন। সেখানে পরিবারের সদস্যরা সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করবেন।
কাজে ব্যস্ত থাকবেন। এতে বাজে চিন্তাগুলো মাথায় প্যাচ লাগানোর কম সুযোগ পাবে। ওসিডি রোগের চিকিৎসা শুরু করেন । দেখবেন অনেকখানি ভালো হয়ে গেছেন। এই রোগে চিকিৎসার প্রথম শর্ত হচ্ছে আগের তুলনায় আপনি কতখানি ভালো আছেন তা মাপবেন। খারাপ অংশটা যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। পজিটিভ চিন্তা করবেন। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়।
ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
__________________________
কিছু দরকারি পরামর্শ
বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম
।
____________________
প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?
একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় আসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের টিকেট নিতে হবে।
___________
লেখার সময়কাল ১৬.১.২০২৫
লেখার সৌজন্য
ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
আপনার মতামত দিন: