Ameen Qudir
Published:2018-03-12 20:11:14 BdST
ওসিডি ডায়েরি পর্ব ১৭'বেসিন, কমোড,টয়লেট সবখানেই মনে হয় মেঝে জিহবা দিয়ে চাটছি :অসহ্য ফিলিংস!'
ডা. সুলতানা আলগিন
_________________
একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এলেন সাথে মেয়ে । ৩৫বছর বয়স। অবিবাহিত। প্রচন্ড বিরক্তি চোখেমুখে। বাবা কিছু বলতে গেলেই মেয়েটি ঝাঝিয়ে ওঠে। তখন বাবা চুপ হয়ে যান।
মেয়েটির বাবাকে বলি ঠিকআছে আমিই ওর সাথে কথা বলি । দরকার হলে আপনার সাহায্য নিব। তারপর মেয়েটির দিকে তাকাই।
আপা আমার যে কি কষ্ট তা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি কত বছর যে হয়ে গেল নিজের রুম ছেড়ে সহজে বের হই না। নিজের রুমটাকে পবিত্র মনে হয়। সেখানে নাপাক জিনিষ নিয়ে ঢোকা যাবে না। কাউকে ঢুকতে দেই না। আমার মা ছাড়া।
বাবাকে দেখলে রাগ লাগে। নোংরা থাকে অবশ্য আমাদের তুলনায়। আমাদের মনমত চলে না। আমার মায়েরও এই ওসিডি রোগ। বাবামায়ের সম্পর্ক তেমন ভাল না। শুধুমাত্র এই রোগের কারণে।
এবার আমার কষ্টের কথা বলি। আমার রুমের বাইরে যেখানেই যাই যেমন অন্য রুম,ডাইনিং, রান্নাঘর, সিড়ি সবখানেই মনে হয় মেঝে জিহবা দিয়ে চাটছি। বাথরুমও বাদ যায় না। সবকিছু চাটার ফিলিংস আপনি কি বুঝতে পারছেন ? কমোড চাটছি ভাবতে পারেন। গত ৩মাস যাবৎ গোসল করি না। আমার মাথা গরম থাকে। রুমের মধ্যে বালতিতে মা পানি এনে দেয় । সেটুকুতে যা হয়।
বেসিনে মুখ ধুতে গেলে মনে হয় নোংরা পানি দিয়ে মুখ ধুচ্ছি। চোখে মুখে ময়লা পানি যাচ্ছে। সাথে সাথে সাবান দিয়ে যেই ধোয়া শুরু করি তা শেষ হতে ২-৩ঘণ্টা। আমার তখন কি যে বিরক্ত লাগে বোঝাতে পারব না। আমি এসব করতে চাই না। কিন্তু আমার বাবা বলে এটা আমি চাইলেই কন্ট্রোল করতে পারি। ইচ্ছে করে করি না। আপনিই বলেন আমার কি এখন বাথরুমে সারাদিন কাটানোর কথা ? আমার কি ইচ্ছে করে না আর ৫টা মেয়ের মত ¯^াভাবিক জীবন কাটাতে। বিয়ে করতে সংসার করতে। বাচ্চা পালতে। সবার তিতা কথায় মন এত খারাপ হয় যে মনে হয় সুইসাইড করি।
আমার রুমটাকে কাবাশরীফের মত পবিত্র মনে হয়। এই চিন্তাগুলো আমার রুমে থাকলে আসে না। তাই আমি রুমের বাইরে বের হই না। আমার মা চেক করে দিলে বের হই।
এতক্ষণে বাবা একটু সরব হয়ে উঠলেন। আপা আমিও অনেক কষ্টে আছি। এটা যে একটা রোগ এখন বুঝি। ওর কিন্তু হাইপোথাইরয়েডের সমস্যাও আছে। অনেক দেরী হয়ে গেল। আমিও আর সহ্য করতে পারছি না। স্ত্রীকন্যা সবার কষ্টে আমার জীবনটাও আজকে অর্থহীন মনে হয়। এতদিন বউয়ের গজগজ সহ্য করেছি। আর এখন মেয়ের রাগারাগি জিনিষপত্র ছোড়াছুড়ি ভাঙ্গাভাঙ্গি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তাই না পেরে আপনার শরনাপন্ন হলাম। আমার পরিবার সংসার জীবন এখন ধ্বংসের পথে ।
শুনছিলাম আর ভাবছিলাম “ক্যান্সার” নাকি নীরব ঘাতক । তবে এই “ওসিডি” কি তার চেয়ে কোন অংশে কম ? মানসিক রোগের এই নীরব ঘাতক যখন সরব হয় তখন তার তীব্রতা সহ্যের বাইরে চলে যায়। তার আগপর্যন্ত রোগকে প্রশ্রয় দেয় সবাই জেনেশুনে। মেয়ে গোছানো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন , বেশীর ভাগ সময় ঘরেই থাকে। পটপট করে কথা বলে না। ছেলেদের সাথে কথা বলে না,মিশে না। সবাই রোগের লক্ষণগুলোকে রিচুয়াল,সংস্কৃতির অংশ ভেবে মেনে নেয়।
আসুন “ওসিডি” রোগটিকে চিহ্নিত করি। জানি। মানি এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে সমাজকে নীরব ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা করি।
_______________
কতগুলো কমন অজুহাত আছে ।
যেমন *একটু ভাল বোধ করলে ওষুধ আনার কেউ ছিল না বা পাওয়া যায় নাই বা *আপনার কাছে আসার সময় হয়ে গেছে তাই নতুন কোন ওষুধ যদি দেন আর কেনা হয় নাই। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে কোন ওষুধ চলবে কোনটা কতদিন পর বন্ধ হবে তারা কেউ একবারও চোখ বুলায় না বা কাউকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করে না। আবার ওষুধ বাজারে কিনতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা নিয়মিত একটা ব্যপার। অথচ প্রথম দিনের ইন্টারভিউটা যে কত প্রয়োজনীয় বুঝতে চায় না।
ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
__________________________
কিছু দরকারি পরামর্শ
বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম
।
____________________
প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?
একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।
লেখার সৌজন্য
ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
________________________
ডা. সুলতানা আলগিন ।
সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। কনসালটেন্ট, ওসিডি ক্লিনিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: