Ameen Qudir
Published:2019-04-01 21:24:44 BdST
"আমার মেয়েরা ওদের বাবার কাছে নিরাপদ নয়, তাই আমি ওকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি "
ডা. সুলতানা আলগিন
_____________________
সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ।
কনসালটেন্ট, ওসিডি ক্লিনিক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
_____________________
এক দম্পতি এলেন চেম্বারে। মহিলা গোছালো। আর ভদ্রলোকের উস্কুখুস্কো কাঁচাপাকা চুলদাড়ি। মাথায় চিরুনির আঁচড় পড়েনি। দুজনেই বসলেন।
জিজ্ঞাসা করলাম সমস্যা কার ?
দুজন দুজনের দিকে তাকাচ্ছেন কিন্তু মুখ খুলছেন না। সমস্যাটা কে বলবেন আগে থেকে ঠিক করেন নি। অস্বস্তি পেয়ে বসেছে দুজনকেই।
অবশেষে মহিলাটি বললেন সমস্যাটি উনার মানে আমাদের । আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে এই সংসার টিকবে কি না ?
কেন ? এত অল্প সময়ের মধ্যে আমাকে এতবড় একটা নেগেটিভ সিদ্ধান্ত দিতে হবে আমি ভাবতে পারছি না।
ভদ্রলোকটি করুণ চোখে তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। চোখের ভাষা তাকে যেন ছেড়ে না যায়।
মহিলাটি বললেন তুমি বললে বল নতুবা বাইরে গিয়ে বস।
বাইরে যাওয়ার পর মহিলাটি বললেন আপা আমার দুই মেয়ে। এমন বাবার কাছে আমার মেয়েরা নিরাপদ নয় । তাই আমি ওকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি।
কি হয়েছে বলুন ?
মহিলাটি বলতে শুরু করলেন যে তাদের ১০ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। প্রেমের বিয়ে। যদিও দুই মেয়ে তাদের কিন্তু কোনদিন সেক্সুয়াল পরিতৃপ্তি পায় নাই। দুজনে আলাদা রুমে ঘুমায়। তার প্রতি স্বামীর কোন আগ্রহ সে দেখতে পায় না।
কেন ? কোন পরকীয়া বা শারীরিক রোগ ?
মহিলাটি বললেন তাহলেও কোন কারণ বোঝা যেত। কিন্তু যা ঘটেছে তা বলতে লজ্জা লাগছে। তার স্বামী পেশায় শিক্ষক । কোচিং সেন্টার চালায় বিয়ে আগে থেকেই। গত সপ্তাহে একজন ছাত্রী তার বাসায় এসে এমন ঘটনা বলল যে তিনি একেবারে থ ।
কি ব্যপার ?
ছাত্রীটি জানাল যে তার শিক্ষক তাকে পড়া বোঝানোর সময় আড়াল করে প্যান্টের জীপার খুলে পুরুষাঙ্গ বের করে পড়া বুঝাচ্ছিল। মেয়েটির সেদিকে চোখ পড়তেই শিক্ষকের অঙ্গ আরও সামর্থ্যবান হয়ে উঠল আর কিছুক্ষণ পর বমি করে ধপাস করে হেলে পড়ল। মেয়েটি আর সেখানে বসে নাই । তাকে জানিয়েছে । এতে উনি যদি তাকে খারাপ মনে করে তবে সে দায় তার।
এর কিছুদিন পর অরেকটি ঘটনা আরেকজন জানাল। তার কাছে ভ্যাসলিন চেয়েছিল তার স্বামী। তারপর এক ছাত্রীর পিছু পিছু বাথরুমে গিয়ে মেয়েটির সামনে আবারও পুরুষাঙ্গ বের করে মনের আনন্দে ঘষছিল। সে দৌড়ে বের হয়ে এসেছিল।
এবার বাইরে বসা লোকটিকে ডাকলাম। জিজ্ঞাসা করলাম এতক্ষণ যা শুনলাম তা কতখানি সত্য ?
উনি বললেন সবই সত্য। ম্যাডাম আমি আর কোচিং সেন্টারে যাব না। স্ত্রীর দিকে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন যেন সংসার অটুট থাকে। ।
লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন, কবে থেকে এই সাইকোসেক্সুয়াল বিকৃতি করে চলেছেন ?
উনি জানালেন বিয়ের আগে থেকেই। যেহেতু তার আগ্রহ কোচিং সেন্টারেই শেষ হয়ে যেত তাই স্ত্রীর প্রতি কোন আগ্রহ পেতেন না। বাসায় এসে অহেতুক রাগারাগি করে ঘুমিয়ে পড়তেন।
এতই যখন বোঝেন তাহলে এই বদঅভ্যাস ছাড়েন নাই কেন ?
লোকটি জানালেন যে , আমি চেয়েছি কিন্তু পরপর ক্লাশ নিতে নিতে মাথা ভার হয়ে আসত । আর এই জিনিষ দেখানোর পর মাথা ঠান্ডা,হালকা হতো । ভালই লাগতো । ছাত্রীদের চেহারাগুলো দেখার মত হতো। দৌড়াদৌড়ি অস্বস্তি তার উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিত।
এরপর পাশে বসা স্ত্রী ক্ষেপে উঠলেন। বললেন আপা এর কি ভাল হওয়ার কোন ইচ্ছা আছে ? বা সম্ভাবনা আছে! আদৌ কি ভাল হবে ?
আমি বললাম এধরণের সাইকোসেক্সুয়াল বিকৃতির লোক রাস্তাঘাটে হরহামেশাই দেখা যায়। বিশেষ করে অলিগলি চিপাচাপায়। এরা পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে মানুষকে বেকায়দায় ফেলে যৌনতৃপ্তি পায়। তাতে কোন নারীসঙ্গ দরকার হয় না। মেয়েদের হোস্টেলের আশেপাশে খেয়াল করলে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
ডিভোর্স কোন সমাধান নয়। ভদ্রমহিলাকে বললাম এতদিনের সংসার আপনি চাইলেই ছেড়ে যেতে পারেন। কিন্তু উনি যখন সব ছেড়ে পথে আসতে চাইছেন তাকে সুযোগ দিলে ক্ষতি কোথায় ? এখানে কোন তৃতীয় পক্ষ নাই। ।এখনও দুজনই আছেন। পরষ্পরকে সাহস দিন । একজন আরেকজনের রক্ষক হোন। ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিন । ওষুধগুলো চালিয়ে যাবেন আর কাউন্সেলিং সেশনে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো নিয়মিত পালনের চেষ্টা করবেন। নিজেদের চেষ্টায় নিজেদের সুখ খুজে নিন।
আপনার মতামত দিন: