Saha Suravi
Published:2025-01-16 12:45:12 BdST
ওসিডি ডায়েরি : নতুন এপিসোড"মেয়েটি জানালো ওর কানে অনবরত হারাম গানের কলি বাজতে থাকে: দিলকো ইয়াদ আয়া"
প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন
প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ,কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক এবং জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক, প্রধান, সাইকোথেরাপি উইং,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
____________________________
দশম শ্রেণীতে পড়ে মেয়েটি। দেখতে শুনতে ভালোই। মায়ের সাথে এসেছে। মায়ের প্রথম অবজেকশন হলো তার মেয়ে পড়াশোনায় অমনোযোগী। এ নিয়ে মেয়েকে প্রচন্ড বকাঝকা মারধোর করেছেন । কিন্তু এখন নিজে অনুতাপে ভুগছেন। অহেতুক না বুঝে মেয়েটাকে মেরেছেন। বকাঝকা করেছেন, ঠিক আছে ; কিন্তু মারপিট ঠিক হয় নি। মেয়েটা তাকে সমস্যাগুলো বলা সত্বেও উনি দুষ্টামি; পড়াশোনা না করার বাহানা ভেবেছেন।
জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে জানলেন এটা ওর রোগ। ও ইচ্ছে করে করছে না?
মা জানালেন, ম্যাডাম আপনার ভিডিও দেখেছি ইউটিউবে। তারপরেই বুঝলাম ওর ওসিডি হয়েছে । চিকিৎসার প্রয়োজন।
কি কি সমস্যা বা লক্ষণগুলো দেখে বুঝলেন ?
মা জানালেন, তার মেয়ে বিশেষ করে পড়ার সময় কানে হাত দিয়ে রাখে । মাথা ঝাঁকায় । আর কান্নাকাটি করে।
চেম্বারে সামনে বসা মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কানে কেন হাত দিয়ে রাখ?
উত্তরে মেয়েটি জানালো ওর কানে অনবরত হারাম গানের কলি বাজতে থাকে।
হারাম গান আবার কি?
মেয়েটি বলে “দিলকো ইয়াদ আয়া” গানটির এই লাইনটি বাজতেই থাকে। তখন ওর মনে হয়, সে খারাপ মেয়ে। ওদের পরিবারে এসব প্রশ্রয় দেয়া হয় না। মেয়েটি একটা ছেলেকে পছন্দ করে। কিন্তু কখনো কথা হয় নাই।
আমি বললাম প্রেম করা , প্রেমে পড়া জীবনের অংশ। প্রেম আছে বলেই তো এই পৃথিবী টিকে আছে। কাউকে ভালো লাগা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু এটা ভেবে সময় নষ্ট করা চিন্তার বিষয়।
তোমার মা বললেন যে তুমি অংক , বিজ্ঞান আর ইংরেজীতে দুর্বল। সে বিষয়ে কি ভেবেছ?
মেয়েটি জানায় ,পড়তে বসলেই ওই গান বাজতে থাকে । “দিলকো ইয়াদ আয়া” গানটি। তারপর সব নোংরা চিন্তা মাথায় আসতে থাকে । কিছুতেই সরাতে পারে না। পড়ায় মনেযোগ ধরে রাখা দিন কে দিন অসহনীয় হয়ে পড়ছে। মেয়েটি কাঁদতে শুরু করলো। ওর বাবাও ওসিডি রোগী আলোচনার একপর্যায়ে জানা গেল।
যা করণীয়:
ওসিডি রোগীদের চি›তা ভাবনা একা থাকলেই বেশী আসে। পড়ার সময় কেউ সামনে থাকার চেষ্টা করবেন । অভিভাবক কাজে ব্যস্ত থাকলেও পড়ার সময় মাঝে মাঝে এসে কথা বলবেন। এতে ঐ চিন্তাগুলো রোগীকে পেয়ে বসবে না। চিন্তায় মগ্ন হওয়ার সুযোগ কমে যাবে। একা থাকার জায়গাগুলো খেয়াল রাখবেন। সেখানে পরিবারের সদস্যরা সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করবেন।
কাজে ব্যস্ত থাকবেন। এতে বাজে চিন্তাগুলো মাথায় প্যাচ লাগানোর কম সুযোগ পাবে। ওসিডি রোগের চিকিৎসা শুরু করেন । দেখবেন অনেকখানি ভালো হয়ে গেছেন। এই রোগে চিকিৎসার প্রথম শর্ত হচ্ছে আগের তুলনায় আপনি কতখানি ভালো আছেন তা মাপবেন। খারাপ অংশটা যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। পজিটিভ চিন্তা করবেন। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়।
___________
লেখার সময়কাল ১৬.১.২০২৫
ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
__________________________
কিছু দরকারি পরামর্শ
বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম
।
____________________
প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?
একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় আসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের টিকেট নিতে হবে।
লেখার সৌজন্য
ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
আপনার মতামত দিন: