Saha Suravi
Published:2025-01-14 12:53:15 BdST
ওসিডি ডায়েরি নতুন এপিসোডভদ্রমহিলা টিফিন ক্যারিয়ারে তালা লাগিয়ে অফিসে খাবার নিয়ে যান : যদি পোকামাকড় খাবারে ঢুকে যায়
প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন
প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ,কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক এবং জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক, প্রধান, সাইকোথেরাপি উইং,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
_________________________
ভদ্রমহিলার বয়স ৩০-৩৫ হবে । মুখে মেছতার দাগ। চেহারাটা একটু মলিন। ¯স্বাস্থ্য একটু ভারীই মনে হলো। মা মানসিক রোগী। গত তিন বছর যাবৎ মেছতা পড়া শুরু হয়েছে। দেড় বছরের একটা ছেলে আছে । কোন ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল খান না।
তার আতংক হচ্ছে মেছতায় পুরো মুখ ছেয়ে যাবে। গত ৩-৪মাস যাবৎ এই চিন্তায় তিনি আতঙ্কিত। চোখের সামনে মেছতায় ঢাকা নিজের কালো কুচকুচে চেহারা ভেসে উঠছে। চোখ বুজলেই কালো রং চেহারা ভেসে ওঠে। ঘুমাতে পারছেন না কিছুতেই। ঘুমাতেও চান না। মনে হয় এই ঘুম থেকে যদি আর উঠতে না পারেন! মৃত্যুভয় পেয়ে বসেছে। এ অবস্থায় কি করবেন পরামর্শ নিতে এসেছেন।
এরপর আরো কাহিনি আছে। বলেন ,তিনি তার অফিসে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে যান। টিফিন ক্যারিয়ারে তালা লাগান। অফিসে সবাই হাসাহাসি করেন। পাপোশ ,জায়নামাজের নীচে সারাক্ষণ চেক করেন। পাপোশ জায়নামাজ ঝাড়াঝাড়ি করেন। মনে হয় পোকামাকড় ঢুকে গেছে কি না? সারাক্ষণ আতংকে থাকেন।
প্রশ্ন করি সবাইতো টিফিন বক্সে খাবার আনে। আপনি একেবারে তালা মেরে আনেন কেন?
আপনার খাবার কেউ কি খেয়ে ফেলে?
উত্তরে জানান, উনি অন্যদের সাথে কখনোই খাবার শেয়ার করে খান না । তালা লাগান এই ভেবে যদি কোন পোকামাকড় খাবারে ঢুকে যায়। কেউ যদি নোংরা হাতে খাবারে হাত দেয়। উনার অফিসে সবাই মজা করে একসাথে নিশ্চিন্তে দুপুরের খাবার খায় । আর উনি একা একা খাবার খান। পেটটা ভ'রে , মনটা ভ'রে খাবারটাও খেতে পারছেন না। ওজন কমে যাচ্ছে। দুর্বলতা বাড়ছে।
তাকে বলি,
মেছতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রে,হরমোনাল পরিবর্তন, বংশগত কারণে, মানসিক চাপে হতে পারে।
তাছাড়া গর্ভধারণের সময় ,জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলেও মেছতা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা , এডিসন ডিজিজ থাকলেও চামড়ার রংয়ের পরিবর্তন দেখা যায়।
বললাম, যেহেতু আপনার বাচ্চা বছর খানেক হলো হয়েছে । আপনার শরীরেও হরমোনের পরির্তন হয়েছে। এগুলো সাময়িক । বার বার চেক করা ঝাড়ামোছা করা ,অহেতুক যে তালা লাগাচ্ছেন এসবই আপনার ওসিডি বা শুচীবায়ু রোগের লক্ষণ। আপনার চোখের সামনে যে ছবি ভাসে; আপনার না চাওয়া সত্বেও তা আপনাকে বিব্রত করে কষ্ট দেয়। আপনি ওসিডি রোগে ভুগছেন অনেক আগে থেকেই। বাচ্চা হওয়া ,তার লালনপালন, নিজের এবং পরিবারের যত্ন নেয়া সবছিুই আপনাকে মানসিক চাপে ফেলেছে।
হয়তো বা এসব কারণেই আপনার এইসব অহেতুক চিন্তা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে। ওসিডি রোগের চিকিৎসা শুরু করেন । দেখবেন অনেকখানি ভালো হয়ে গেছেন। এই রোগে চিকিৎসার প্রথম শর্ত হচ্ছে আগের তুলনায় আপনি কতখানি ভালো আছেন তা মাপবেন। খারাপ অংশটা যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
যা করণীয়:
ওসিডি রোগের চিকিৎসা শুরু করেন । দেখবেন অনেকখানি ভালো হয়ে গেছেন। এই রোগে চিকিৎসার প্রথম শর্ত হচ্ছে আগের তুলনায় আপনি কতখানি ভালো আছেন তা মাপবেন। খারাপ অংশটা যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। পজিটিভ চিন্তা করবেন। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ছাড়া চিকিৎসা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
১১.১.২৫
ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
__________________________
কিছু দরকারি পরামর্শ
বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম
।
____________________
প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?
একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় আসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের টিকেট নিতে হবে।
লেখার সৌজন্য
ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
আপনার মতামত দিন: