Ameen Qudir

Published:
2019-11-21 23:15:56 BdST

কাছে পিঠে অল্প খরচে আকাশে হাঁটতে চান: চলুন পেলিংএ


 

ডা. সাইদুর রহমান , পেলিং থেকে ফিরে
______________________________________

স্কাই ওয়াক ! আপনি কি আকাশে হাঁটতে চান ! আবার খরচটাও হওয়া চাই খুব কম! তাহলে কোনরকম চিন্তা না করেই চলুন পেলিংএ। একদম কাছে। এত কাছে এতো কম খরচে আর কোন স্কাই ওয়াক নেই কিন্তু।

ভূমি থেকে কয়েক শত ফুট ওপরে স্বচ্ছ কাচের রাস্তা। সেখানে হাঁটার জন্য স্বচ্ছ কাঁচের পথ। এমনটা চীনে আছে, তেমনই জানতাম সবাই ফেসবুক ও অনলাইনের নানা ছবি ভিডিওর কল্যাণে। কিন্তু ঘরের একদম কাছে পেলিং এ যে আছে জানাই ছিল না। পাহাড়চূড়ায় বড় বড় স্টিলের পাতের ওপর স্বচ্ছ কাচের তৈরি পথ। ভয় হতে পারে। মনে হবে এই বুঝি পড়ে গেলাম। দুর্বল চিত্ত হলে না যাওয়াই ভাল।
স্বচ্ছ কাচের ওয়াক ওয়ের ছোট্ট গেট দিয়ে এখানে জুতা খুলে ঢুকতে হয়। । দুই পাশে স্বচ্ছ কাচের কোমরসমান দেয়াল আর পায়ের নিচে ৫ থেকে ৬ ফুট প্রশস্ত কাচের পথ। পাহাড়ের গায়ে স্টিলের কাঠামোর ওপর এই কাচের হাঁটাপথ। পৃথিবী এখানে অনন্য সুন্দর। যা না গিয়ে উপলব্ধি অসম্ভব। কাছেই পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশছোঁয়া বিশাল এক বুদ্ধমূর্তি।

 

স্কাই ওয়াকের ভিডিও লিঙ্ক

https://www.youtube.com/watch?v=NHY0Oplo3Yo

 

 


পশ্চিম সিকিমের ছোট্ট জনপদ পেলিং। মূলত তিনটি ভাগে পেলিংকে ভাগ করা হয়েছে— আপার, মিড্‌ল এবং লোয়ার। হোটেলগুলিও এই অবস্থানগতভাবে ভাগ করা। আপার পেলিংয়ে হোটেলের ভাড়া বেশি, লোয়ারে কম।

• কীভাবে যাবেন— ঢাকা থেকে কলকাতা বা শিলিগুড়ি। কলকাতা থেকে সিকিমের নতুন বিমান বন্দর পাকিয়াংএ যেতে পারেন। আর এনজেপি স্টেশন এবং শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি পেলিং যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। ভরা সিজনে গাড়ির ভাড়া হাজার দুয়েক পড়ে যাবে। এনজেপি স্টেশনে প্রিপেড ট্যাক্সি-গোত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আর যাওয়া যায় গ্যাংটক থেকে। তবে পেলিং ঘুরে গ্যাংটক আসাই ভাল। কেননা, তাতে সময় বাঁচবে। কীভাবে, তা ক্রমশ আলোচনা হবে ভবিষ্যতে। গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে একটু দরদস্তুর করে নেবেন। এ-ও বলে নেবেন, আপনাকে যেন হোটেলের সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে সাধারণ নিয়মে হোটেলের সামনেও চালকরা ড্রপ করেন। গাড়ি ভাগ করেও নিতে পারেন। তেমন ব্যবস্থাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অনেকটাই কম পড়বে।

• কোথায় থাকবেন— আপার পেলিংয়ে হোটেলের ভাড়া কিঞ্চিৎ বেশি। মিড্‌ল এবং লোয়ার পেলিংয়ে কম। মোটামুটি হাজার দে়ড়েক থেকে দুইয়ের মধ্যে ভাল হোটেল পেয়ে যাবেন। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘামুখী ঘরের ভা়ড়া স্বাভাবিকভাবেই বেশি।

• কোথায় খাবেন, কী খাবেন, খরচ কত— হোটেলেই খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। রান্না গড়পরতা সব হোটেলেই চলনসই। তবে পেলিংয়ে কয়েকটি ভাল রেস্তোরাঁ রয়েছে। সর্বাগ্রে নাম আসে ‘‘মেলটিং পয়েন্ট’’-এর। রান্নার মান বেশ ভাল। দামও আয়ত্তের মধ্যে। এর পরেই আসবে কাবুর রেস্তোরাঁ, বিগ বোল এবং রাবডান্টসে-র নাম। মদ্যপানের জন্যও এই সব রেস্তোরাঁ বেশ ভাল। দামও কিন্তু কোথাওই খুব বেশি নয়। খাবারের মানও যথেষ্ট ভাল।

 


• কী কী দেখবেন— পেলিংয়েই রয়েছে সাইট সিয়িংয়ের ব্যবস্থা। হোটেল থেকেই গাড়ির ব্যবস্থা করে নিন। এশিয়ার অন্যতম উঁচু সিনশোর ব্রিজ অবশ্যই দেখার মতো। পেমিয়াংশি মোনাস্ট্রি থেকে কাঞ্চজঙ্ঘার দৃশ্য চোখে লেগে থাকবে। পুরনো রাজবাড়ি রাবডান্টসের ধ্বংসাবশেষ থেকে সন্ধে নামতে দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। চারপাশে গাছ থাকলেও, খেচোপেরি লেকে কোনও পাতা পড়ে না বলে মিথ রয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, কোনও পাতা লেকের জলে দেখবেন না।


• সাংঘা চোয়েলিং মোনাস্ট্রি— পেলিংয়ে এসে এখানে অনেকেই যান না। ট্রেকিং পছন্দ করলে এবং পেলিং ভ্রমণ পুরোপুরি উপভোগ করতে চাইলে চলে যান সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন এই গুম্ফায়। ব্রেকফাস্ট করে সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়ুন। আপার পেলিংয়ে হেলিপ্যাডকে ডানহাতে রেখে ধরুন পাহাড়ি রাস্তা। অনতিদূরেই দেখতে পাবেন পাহাড়ের মাথায় গুম্ফার পতাকা। জঙ্গল ভেঙে উঠতে থাকুন চড়াই বেয়ে। খাড়া যেটি ধরে গুম্ফায় উঠবেন, তাতে রাস্তা বলা চলে না। পাথর ফেলে একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে মাত্র। পৌঁছতে কষ্ট হলেও, উপর থেকে যে দৃশ্য দেখবেন, তাতে সব ক্লান্তি ভুলে যাবেন। বসুন, গুম্ফায় আরাম করুন। তার পরে অতি সাবধানে নেমে আসুন খা়ড়া পথ বেয়ে। এই জিনিসটি না-দেখলে কিন্তু মিস করবেন।

• সূর্যোদয়— পেলিংয়ে হোটেল ভাড়া কমবেশি হয় সূর্যোদয়ের জন্য। কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে এত সুন্দর রঙের খেলা অন্য কোথাও চট করে পাবেন না। প্রধান চুড়োর একেবারে মাথায় একটু আলো পড়ে প্রথমে। তার পরে সেই আলো মাখামাখি হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে। পাল্টাতে থাকে রং। প্রকৃতির এক অনবদ্য কারসাজি।

 

পেলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়

• অতি প্রয়োজনীয় টিপ্‌স— যে কোনও প্রয়োজনে হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলুন। উনিই আপনাকে সাহায্য করবেন। কোনও খারাপ ব্যবহার করবেন না। মনে রাখুন, আপনি পাহাড়ের অনেকটা ভিতরে একটি ছোট্ট জনপদে রয়েছেন। তাই যাঁদের সঙ্গেই আলাপ হবে, তাঁদেরই বন্ধু করে নিন।

• আনুমানিক খরচ (১ জনের)- ধরে নেওয়া যাক, সর্বোচ্চ তিনরাত পেলিংয়ে থাকবেন। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হচ্ছে, একসঙ্গে একাধিকজন যাবেন। একা গেলে হোটেলের ভাড়া বাড়বে। বাকিটা কমবেশি একই থাকবে। কেননা, সাইট সিয়িংয়ে শেয়ারে যাবেন, সেটা ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে হোটেল ভাড়া মোটামুটি ৭৫০ প্রতি দিন, খাওয়া ২০০ টাকা প্রতিদিন, সাইট সিয়িং ৭০০ টাকা। এর সঙ্গে জুড়ে নিন কলকাতা-এনজেপি যাতায়াত খরচ, এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে পেলিং যাওয়ার খরচ। একটি গাড়ি হাজারদুয়েক টাকা নেবে। যাত্রী সর্বোচ্চ ৮জন। সেই হিসেবে ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাওয়া উচিত। তবে ভাড়ার হেরফের ঘটে।

রাবডান্টসে ধ্বংসাবশেষ

• শেষ কথা— সিকিম ট্যুর করতে হয় একটি নির্দিষ্ট রুট ধরে। আপনি যদি পেলিং যেতে চান, তাহলে পেলিং দিয়েই শুরু করুন। কেননা, আগে গ্যাংটকে গেলে, সেখান থেকে পেলিং গিয়ে ফিরতি পথে আবার গ্যাংটক আসতে হবে। অর্থাৎ, একটা গোটা দিন এবং হোটেলভাড়া নষ্ট। তাই শুরু করুন পেলিং দিয়েই। আর পাহাড়ে যেখানেই যান, পানি কিনে খাবেন।

আপনার মতামত দিন:


ভ্রমণ এর জনপ্রিয়