Ameen Qudir
Published:2019-02-07 22:36:43 BdST
উত্তরাখণ্ডবরফ দেখতে মুসৌরি, উত্তরাখণ্ড ভ্রমণে কি দেখবেন, কি কিনবেন, কোথায় থাকবেন
ডেস্ক
_______________________
ভারতের উত্তরে অবস্থিত পাহাড়ী রাজ্য উত্তরাখণ্ড, পূর্বে উত্তরাঞ্চল নামে পরিচিত ছিল। দূন উপত্যকায় অবস্থিত উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুন, তার সুন্দর পরিবেশের জন্য সুবিখ্যাত। এই রাজ্যের মোট আয়তন হল ৫৩,৪৮৩ বর্গ কিলোমিটার এবং এই রাজ্যকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে; যথা – গড়বাল এবং কুমায়ুন। এই রাজ্য তার সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ, ঘন বনাঞ্চল, হিমবাহ এবং বরফ-পরিহিত শৃঙ্গের জন্য বিখ্যাত।
হিমালয়ের প্রান্তে অবস্থিত উত্তরাখণ্ড, চীন (তিব্বত) ও নেপালের সাথে তার সীমানা ভাগ করে নিয়েছে। এই রাজ্যের উত্তর পশ্চিমে হিমাচল প্রদেশ এবং তার দক্ষিণ দিকে উত্তর প্রদেশ অবস্থিত।
উত্তরাখণ্ড পর্যটন
“দেবতাদের দেশ” বা “দেব ভূমি” হিসাবে সুপরিচিত উত্তরাখণ্ডে, হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র মন্দির বা চার ধাম; যথা – বদ্রীনাথ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রী অবস্থিত। দেশের দুটি সবচেয়ে পবিত্র এবং বিখ্যাত নদী গঙ্গা ও যমুনা এই রাজ্য থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। উত্তরাখণ্ড “ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স” এর আবাসস্থল এবং এটি ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে গণ্য।উত্তর ভারতের সমস্ত বিখ্যাত শৈল শহর যেমন নৈনিতাল, উত্তরকাশী, মুসৌরি, চামোলির বাসস্থান হল উত্তরাখণ্ড। উত্তরাখণ্ডের ঘন জঙ্গলে ১২-টি জাতীয় উদ্যান এবং অভয়ারণ্য অবস্থিত।এই রাজ্য চিত্রানুগ পাহাড়ের পাশাপাশি ধর্মীয় গন্তব্যস্থল, বিভিন্ন দু:সাহসিক খেলাধুলো; যেমন – ট্রেকিং, আরোহণ, র্যাফটিং-এরও উপলব্ধি করায়।
উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি অঞ্চল
উত্তরাঞ্চল তার বিখ্যাত শৈল শহর যেমন মুসৌরি, চোপতা, আলমোড়া, নৈনিতাল, দেরাদুন, ল্যান্সডাউন্, ফুলের উপত্যকা এবং সাততাল এর জন্য সুপরিচিত। এইগুলি ভারতের কয়েকটি অদ্ভূত শৈল শহর যা সবুজ গাছপালা, সুশোভিত তুষারাবৃত শৃঙ্গ এবং সুন্দর বন্য ফুলের সৌন্দর্য দ্বারা অলঙ্কৃত। বন্য ফুলের ২৫০-টি প্রজাতি নিয়ে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স গঠিত, যা আপনার চোখকে আকর্ষিত করে। ব্রিটিশ আমলের সবচেয়ে সুন্দর শৈল শহর হল, উত্তরাঞ্চলের রাজধানী দেরাদুন। এটি ভারতের একটি অত্যন্ত পুরনো শহর এবং নয়নাভিরাম স্থান হিসাবে বিখ্যাত। মুসৌরির নিজস্ব সবুজ পাহাড় এবং সমৃদ্ধ উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুল রয়েছে। আপনি এই শহর থেকে তুষারবৃত হিমালয়ের চমকপ্রদ পরিসরকে দেখতে পাবেন। ভ্রমন করার জন্য নৈনিতাল হল আরেকটি সুন্দর পর্যটনস্থল।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জাতীয় উদ্যান
এই রাজ্যে অনেক অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যান পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। দেরাদুন জেলার যমুনা এবং আসান নদীর সঙ্গমস্থলে বিখ্যাত আসান বাঁধটি রয়েছে। কথিত আছে, এই স্থানটি আকট্ কস্তুরীমৃগ অভয়ারণ্য-এর কস্তুরীমৃগর জন্য বিখ্যাত। এখানে চিতাবাঘ, হরিণ, বাদামি ভালুক, গন্ধনকুল বিড়াল, সেরো এবং আরও অনেক প্রজাতি রয়েছে। জিম করবেট জাতীয় উদ্যানটি হল শ্রেষ্ঠ এবং প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যান যা নৈনিতাল জেলার মধ্যে অবস্থিত। এই উদ্যানটি বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্যময়তা এবং ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত ব্যাঘ্র প্রকল্পের জন্য বিখ্যাত। উত্তরকাশী জেলার গোবিন্দ অভয়ারণ্যটি বিপন্ন প্রাণীদের জন্য এবং ভেষজ উদ্ভিদ সমৃদ্ধ হওয়ার কারনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হিসাবে পরিচিত। এখানে তুষার চিতাও দেখা যায়।
তীর্থযাত্রা কেন্দ্র
হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে উত্তরাঞ্চলকে গণ্য করা হয়ে থাকে, এখানে অনেক পবিত্র মন্দির আছে এবং এই স্থানে ভগবান শিব বসবাস করেন বলে মনে করা হয়ে থাকে। বদ্রীনাথ এবং কেদারনাথ হল দুটি শতাব্দী প্রাচীন তীর্থস্থান। অন্যতম পবিত্র স্থান বদ্রিনাথের চারটি ধাম রয়েছে। শিবের বারোটি জ্যোর্তিলিঙ্গের মধ্যে একটি হল কেদারনাথ, যা হিমালয়ের একটি পবিত্র মঠ হিসাবে গণ্য এবং এখানে একটি শিব মন্দির রয়েছে। গঙ্গোত্রী হল গঙ্গার একটি স্থান এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটি এখানেই পৃথিবীকে স্পর্শ করেছে। দেবী এখানে একটি নদীর আকারে নেমে এসেছেন। পশ্চিম মঠ এবং যমুনা নদীর উৎসস্থল হল যমুনোত্রী। হরিদ্বার গঙ্গা নদী তীরে অবস্থিত এবং এটি হিন্দুদের একটি প্রাচীন পবিত্র শহর। ঋষিকেশ হল এইসব পবিত্র তীর্থস্থানের প্রবেশদ্বার।
উত্তরাখণ্ডে পৌঁছানোর উপায়: বিমান মাধ্যমে
দেরাদুনের জলি গ্র্যান্ট বিমানবন্দর এই রাজ্যের সবচেয়ে নিকটতম বিমানবন্দর এবং এটি নিয়মিত উড়ানের মাধ্যমে দিল্লীর সাথে সংযুক্ত। এছাড়াও কুমায়ুন অঞ্চলে পন্তনগর অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দর-এর মাধ্যমেও এই রাজ্যে পৌঁছানো যায়।
ট্রেনের মাধ্যমে_______
এই রাজ্যে শুধুমাত্র ৩৪৫ কিলোমিটার বিস্তৃত রেললাইন আছে। কাঠগুদাম রেলওয়ে স্টেশনটি হল উত্তর-পূর্ব রেলপথের প্রান্তিক স্থান, যা নৈনিতাল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি নৈনিতালকে দেরাদুন, দিল্লি ও হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এছাড়াও এই রাজ্যের পন্তনগর, লালকুঁয়া, হলদোয়ানিতে রেল স্টেশন রয়েছে। দেরাদুন এবং হরিদ্বার রেলওয়ে স্টেশন দেশের অন্যান্য শহরের সাথে সু-সংযুক্ত। ঋষিকেশ, রামনগর এবং কোটদ্বারে রেললাইন প্রান্ত রয়েছে।
সড়ক মাধ্যমে
এই রাজ্যে ২৮,৫০৮ কিলোমিটারের একটি সুসংবদ্ধ সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা আছে, যার মধ্যে ১,৩২৮ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক এবং ১,৫৪৩ কিলোমিটার রাজ্য সড়ক রয়েছে। অনেক ব্যক্তিগত পরিবহন পরিচালক সহ এই রাজ্যের পরিবহন ব্যাবস্থার প্রধান মাধ্যম হল উত্তরাখণ্ড পরিবহন সংস্থা। দেশের সকল প্রধান শহর থেকে সড়ক মাধ্যমে এই রাজ্যে পৌঁছানো যায়।
উত্তরাখণ্ডের পরিদর্শনমূলক স্থান
উত্তরাখণ্ড হল হিমালয়ের পাদদেশে দেবতাদের বাসস্থান। উত্তরাখণ্ড সারা পৃথিবীর পর্যটকদের আকর্ষন করে। উত্তরাখণ্ডে অনেক পর্যটন গন্তব্যস্থল আছে, তাদের বেশিরভাগই নয়নাভিরাম এবং ধর্মীয় তাৎপর্য্যে পরিপূর্ণ। রাজ্যটি কূমায়ুন ও গড়বাল-এই দুটি অঞ্চলে বিভক্ত, এই অঞ্চলে প্রচুর পর্যটনস্থল রয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের পরিদর্শনমূলক শহর
উত্তরাখণ্ডের পরিদর্শনমূলক শহরগুলি নিম্নলিখিতরূপে বর্ণনা করা হয়েছে –
দেরাদুন।
মুসৌরি।
নৈনিতাল।
রানিখেত।
ধনৌলটি।
আউলি।
হরিদ্বার।
ঋষিকেশ।
কেদারনাথ।
গঙ্গোত্রী।
উত্তরকাশী।
চামোলি।
পিথোরাগর।
ভীমতাল।
আলমোড়া, ইত্যাদি।
দর্শনীয় স্থান
উত্তরাখণ্ড রাজ্যের মধ্যে দেশের কিছু শ্রেষ্ঠ পর্যটন গন্তব্যস্থান রয়েছে। কিছু আবশ্যক দর্শনীয় স্থানগুলি হল : বদ্রীনাথ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, পঞ্চ কেদার, জিম করবেট জাতীয় উদ্যান, নৈনিতাল, রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি, উত্তরকাশী, হরিদ্বার, আলমোড়া, রাজাজি জাতীয় উদ্যান, ঋষিকেশ, হেমকুণ্ড সাহেব গুরুদ্বার, রূপকুণ্ড, আউলি, নন্দা দেবী এবং গোমুখ।
তপকেশ্বর মন্দির।
হর-কি-পৌরি।
ভারত মাতা মন্দির।
বদ্রীনাথ যাত্রা।
চার ধাম যাত্রা।
উত্তরাখণ্ডের মন্দিরসমূহ।
লক্ষণ ঝুলা।
মুসৌরি হ্রদ।
নয়না দেবী মন্দির।
উত্তরাখণ্ডের পরিদর্শনমূলক স্থানগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান সম্পর্কে নীচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।- মুসৌরি
মুসৌরি দেরাদুন থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরত্বে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৩০৩ মিটার উচ্চতায় গড়বাল পাহাড়ে অবস্থিত। ভারতের একটি চিত্তাকর্ষক শৈল শহর হল মুসৌরি। হিন্দুদের মুখ্য তীর্থস্থানগুলি; যথা – কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী, বদ্রীনাথ, হরিদ্বার, যমুনোত্রী ও ঋষিকেশ এই স্থানের কাছাকাছি অবস্থিত।
মুসৌরির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যস্থল নিচে দেওয়া হল :
গুনা হিল
এটি মুসৌরির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। গুনা পর্বত হিমালয় শৈল শ্রেণীর বুন্দেরপুঞ্চ, পিথবারা শ্রীকান্তা এবং গঙ্গোত্রীর একটি সুন্দর দৃশ্য প্রদান করে থাকে। এটি মুসৌরি শহর এবং দূন উপত্যকার একটি পক্ষীসুলভ দৃশ্য দেখার প্রস্তাব দেয়।
মিউনিসিপাল গার্ডেন
মিউনিসিপাল গার্ডেন একটি বিস্ময়কর পিকনিক স্থল, এখানে একটি সুন্দর বাগান এবং একটি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে যেখানে নৌকাচালনের সুবিধাও পাওয়া যায়।
চিলডারস লজ
এটি লাল টিব্বার কাছাকাছি মুসৌরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এটি পর্যটন অফিস থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এই স্থান থেকে আকর্ষনীয় তুষারপাতের দৃশ্য দর্শন করা যেতে পারে।
ক্যামেল’স ব্যাক রোড়
এই রাস্তাটি প্রায় ৩ কিলোমিটার বিস্তৃত, রিঙ্ক হলের কাছাকাছি কুলরি বাজার থেকে শুরু হয়ে লাইব্রেরী বাজারে শেষ হয়েছে। এই জায়গাটির প্রধান আকর্ষণ হল অশ্বারোহন। এখানে হিমালয়ের চিত্তাকর্ষক সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য পরিত্যাগ করা উচিত নয়।
ঝরিপানি জলপ্রপাত:
এটি মুসৌরির মুসৌরি-ঝরিপানি রাস্তা থেকে ৮.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভ্রমনার্থীরা বাসে করে বা গাড়িতে ৭ কিলোমিটার ভ্রমণ করে ঝরিপানি আসেন এবং সেখান থেকে ঝর্ণা আরও ১.৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
ভট্ট জলপ্রপাত:
এটি মুসৌরির মুসৌরি-দেরাদুন রাস্তা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গাড়ী বা বাস দ্বারা বালটা গ্রামে পৌঁছে সেখান থেকে আরোও ৩ কিলোমিটার দূরত্বে ঝর্ণা অবস্থিত।
রানিখেত: উত্তরাখণ্ডের রানিখেত, রাজা সুধারদেভ-এর রানি পদ্মিনীর মন জয় করেছিল এবং তিনি তার বাসস্থান হিসাবে এই নয়নাভিরাম স্থানটিকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই এটির নামকরণ করা হয় (রানির ক্ষেত্র) রানিখেত। এটি দর্শকদের হিমালয়ের সেরা দৃশ্য – যথা তুষারাবৃত নন্দা দেবী (৭৮১৭ মিটার) সহ ঘন সবুজ অরণ্য ও বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণীদের দেখার সুযোগ করে দেয়।রানিখেতের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যসমূহ :
ঝুলা দেবী মন্দির:এটি দূর্গা দেবীকে উৎসর্গীকৃত একটি নির্জন মন্দির। এখানে সুন্দর ঘন্টাধ্বনি আছে। ভগবান রামের মন্দির এই স্থানের কাছাকাছি অবস্থিত।
চৌবাতিয়া:চৌবাতিয়া বাগানের ভিতর একটি বিস্ময়কর স্থান। মোটরোপযোগী রাস্তায় এটি রানিখেত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এখানে সরকারি ফল গবেষণা কেন্দ্রটি অবস্থিত। পরিষ্কার সকালে চৌবাতিয়া থেকে ৩০০ কিলোমিটার ব্যাপী তুষারাবৃত হিমালয়ের শিখরগুলি পরিষ্কার দেখা যায়। এখান থেকে নন্দা দেবী, নন্দা ঘুণ্টি, ত্রিশূল এবং নীলকান্ত শিখর পরিষ্কার দেখা যায়। এখান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে ভালুধামে একটি কৃত্রিম হ্রদ আছে।
উপাত এবং কালিকা:উপাত আলমোড়া রাস্তার উপর অবস্থিত। এখানে একটি ৯ গহ্বরের গলফ ক্ষেত্র রয়েছে। কালিকা তার কালী মন্দির ও বন নার্সারির জন্য পরিচিত।
কূমায়ুন
উত্তরাখণ্ডের কূমায়ুন তুষারাবৃত পর্বত, উপত্যকা, হিমবাহ, আলপাইন তৃণভূমি, হ্রদ এবং বনাঞ্চল সহ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যস্থল। গড়বাল সহ এটি রাজ্যের দুটি বিভাগের একটি। কূমায়ুন হিমালয়ের ৬-টি জেলা নিয়ে গঠিত; যথা – আলমোড়া, চম্পাওাত, বাগেশ্বর, পিথোরাগড়, নৈনিতাল এবং উধম সিং নগর।কূমায়ুনের নৈনিতাল : এটি ১৯৩৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এর প্রধান আকর্ষণ হল :ডরোথীস সিট।
চীনা পিক।
হনুমান মন্দির। নন্দা দেবী :ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত হল নন্দা দেবী। এটি গড়বাল হিমালয়ের একটি অংশ। এটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পূর্বে গোরিগঙ্গা উপত্যকা ও পশ্চিমে ঋষিগঙ্গা উপত্যকার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। হিমালয়ের এই পর্বত শিখরগুলি উত্তরাখণ্ডের রক্ষাকর্তা-দেবী বলে মনে করা হয়। উত্তরাখণ্ডের নন্দা দেবীর প্রধান আকর্ষণ হল ট্রেকিং এবং নন্দা দেবী জাতীয় উদ্যান।
বিনসার
বিনসার, আলমোড়া থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে চাঁদ রাজাদের সময়কালে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল বিনসার। বিনসার হল কূমায়ুন হিমালয়ের একটি নয়নাভিরাম স্থান এবং একটি জনপ্রিয় পাহাড়ি গন্তব্যস্থল। বিনসার পাহাড়ের উচ্চতা হল ২৪১২ মিটার।
এই স্থানের প্রধান আকর্ষণ হল কূমায়ুন পাহাড়, আলমোড়া শহর, এবং বৃহত্তর হিমালয়। ফার্ণ, অ্যালপাইন উদ্ভিদকুল, বন্য ফুল এবং ঝুলন্ত শৈবালের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনসার-এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। বিনসার-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হল এখান থেকে ৩০০ কিলোমিটার বিস্তৃত হিমালয়ের বিস্ময়কর দৃশ্য অবলোকন, যা অন্তর্ভুক্ত করে কতগুলি সুপরিচিত শিখরকে; যথা – চৌখাম্বা, কেদারনাথ, নন্দা দেবী, ত্রিশূল, পঞ্চচুলি এবং নন্দা কোট।
রুদ্রপুর
উধম সিং নগর জেলার সদর দপ্তর হল রুদ্রপুর। ‘কূমায়ুন পর্বতের প্রবেশদ্বার’ উধম সিং নগরে কাশীপুর, রুদ্রপুর এবং খাতিমা নামক তিনটি উপবিভাগ রয়েছে। রুদ্রপুর একটি সমৃদ্ধিশালী শহর। রুদ্রপুর পরিদর্শন ছাড়া উত্তরাঞ্চল সফর অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
ঐতিহাসিকদের মতে, অনেক বছর আগে, রুদ্র, সম্ভবত ভগবান রুদ্রের উপাসক বা মূখ্য নেতা রুদ্রপুর গ্রামটি নির্মাণ করেছিলেন।
পঞ্চ ধারা :উত্তরাখণ্ডের পঞ্চ ধারাকে এই রাজ্যের একটি অন্যতম গন্তব্যস্থল হিসাবে বিবেচনা করা হয়, বদ্রীপুর-এ অবস্থিত এই স্হান আগ্রহী তীর্থযাত্রীদের দ্বারা ঘন ঘন পরিদর্শিত হয়ে থাকে। উত্তরাখণ্ডের পঞ্চ ধারা পাঁচটি দর্শনীয় পান্না নীল জলপ্রবাহের প্রতিনিধিত্ব করে। এইগুলি যথাক্রমে প্রহ্লাদ, কূর্ম, ভৃগু্, উর্বশী এবং ইন্দিরা ধারা নামে জনপ্রিয়।
যদিও এক একটি জলধারার সমন্বয়ে উত্তরাখণ্ডের পঞ্চ ধারা গঠিত, ইন্দিরা ধারা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ঈপ্সিত এবং বিখ্যাত। ইন্দিরা ধারা বদ্রীপুর নামে পরিচিত শহরের উত্তর পরিধি জুড়ে প্রসারিত। মনে করা হয় ইন্দিরা ধারার পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ জলে পাপমুক্তি হতে পারে।
উত্তরাখণ্ডের পঞ্চ ধারার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহ ভৃগু ধারা, কয়েকটি উৎকীর্ণ গুহার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আপনাকে একটি সন্মোহনের রাজ্যে নিয়ে যাবে। এখানে বিস্ময়কর গুহার দেওয়ালের ভিতর অনেক কাল্পনিক পৌরাণিক গল্প অঙ্কিত করা রয়েছে। এই রাজকীয় গুহাগুলি প্রকৃতপক্ষে এতো মনোরম যে আপনি চোখ ফিরিয়ে নিতে পারবেন না।
দেরাদুন
মনোরম জলবায়ু সহ চিত্রবৎ শহর হল দেরাদুন,দূন উপত্যকায় অবস্থিত। এটি উত্তরাঞ্চলের রাজধানী এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। দেরাদুন উত্তরাখণ্ডের একটি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন নামটি সম্ভবত মহাভারতের গুরু দ্রোণাচার্যের নাম থেকে গৃহীত হয়েছিল। বিখ্যাত ধর্মীয় শহর ঋষিকেশ, পাহাড়ের রাণী মুসৌরি, প্রখ্যাত গন্ধক প্রস্রবণ সহস্রধারা এবং রাজাজি জাতীয় উদ্যানের একটি অংশ, চক্রতা পাহাড়, সবই এই অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত।
ল্যান্সডাউন্:এটি ১,৭০৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং পৌরী থেকে প্রায় ৮১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি ভারতের একটি নির্জনতম শৈল শহর। ল্যান্সডাউন্, ১৮৮৭ খ্রীস্টাব্দে লর্ড ল্যান্সডাউন্ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত ব্রিটিশ শাসনাকালে ল্যান্সডাউন্ একটি জনপ্রিয় শৈল শহর ছিল। গড়বাল রাইফেলস্ কেন্দ্রের প্যারেড গ্রাউন্ডে অবস্থিত যুদ্ধ স্মারক দর্শকদের আকর্ষিত করে। এটি পুরু ওক এবং নীল পাইন অরন্য দ্বারা বেষ্টিত। এই শহরের প্রধান আকর্ষণ হল টিপ-এন-টপ, চার্চ পয়েন্ট এবং সন্তোষী মাতার মন্দির। এই শহর থেকে ভ্রমণের সময় তারকেশ্বের মহাদেব মন্দির এবং ভৈরব গিরি মন্দির পরিদর্শন করা যেতে পারে।
কৌসানী:এটি আলমোড়ার উত্তরে ৫৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। হিমালয়ের ৩০০ কিলোমিটার ব্যাপী একটি সুস্পষ্ট দৃশ্য কৌসানীকে চিত্রবৎ শৈল শহর হিসাবে গড়ে তুলেছে। উত্তরাখণ্ডের কৌসানী সমুদ্রতল হইতে ৬০৭৫ ফুট উচ্চতায় একটি সংকীর্ণ শৈলশিরার উপর অবস্থিত। কৌসানীকে তার অসাধারণ সৌন্দর্যের জন্য সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে।
হরিদ্বার:উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, সমুদ্রতল হইতে ২৯৪,৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, পবিত্র গঙ্গা নদীর ডান তীর বরাবর অবস্থিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় হিন্দু তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি। হরিদ্বার বা ‘দেবতাদের প্রবেশদ্বার’ শব্দটি মায়াপুরি, কপিলা ও গঙ্গাদ্বার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে গঙ্গা উত্তর ভারতীয় সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। হিন্দু তীর্থযাত্রী এবং উপাসকমণ্ডলীরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রার্থনা করার জন্য উত্তরাখণ্ড-এর হরিদ্বারে সমবেত হন।
উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার একটি মিলনস্থল হিসেবে কাজ করে যেখানে কুম্ভ মেলা (প্রতি বারো বছর অন্তর) এবং অর্ধ কুম্ভ মেলা (প্রতি ছয় বছর অন্তর) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে, এটি কেবলমাত্র সাধু ও সন্ন্যাসীদের আধারই নয়, এটি কলা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিরও এক কেন্দ্রবিন্দু। হরিদ্বার শিল্পক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ এখানে এস.আই.ডি.সি.ইউ.এল উওরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শিল্প ক্ষেত্র।
হরিদ্বার ভ্রমন একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে প্রবেশ করার মতো মনে হয়ে থাকে, এখানে গঙ্গার জলের ঝিলিমিলি, শান্ত পরিবেশ, খাড়া পাহাড়, আশ্রমে সাধুদের প্রার্থনা, এইসব কিছুই একটি বিস্ময়কর পরিবেশের সৃষ্টি করে। এই শহরে অসংখ্য মন্দির ও আশ্রম রয়েছে।
জানকীচট্টি
আপনি যদি যমুনোত্রীর চিত্রানুগ স্থান পরিদর্শন করতে ইচ্ছুক থাকেন, তাহলে উত্তরাখণ্ডের জানকীচট্টিতে একটি সংক্ষিপ্ত অচিরপ্রবাস করতে পারেন। এর স্বচ্ছ এবং নির্মল বায়ুমন্ডল আপনাকে সব বিশৃঙ্খলতা এবং বিরক্তি থেকে মুক্ত করবে এবং আপনার মন ও আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে। আপনার এটিকে বিস্মৃত না হওয়ার কারণ হল এখানকার উচ্ছসিত জলপ্রপাতের পাশাপাশি মনোরম সবুজ ক্ষেত্র, আড়ম্বরপূর্ণ টিলা, সবচেয়ে দম্ভিত এক সুন্দর মন্দির।
উত্তরাখণ্ডের জানকীচট্টি থেকে যমুনোত্রী তীর্থক্ষেত্রের প্রায় ৮ কিলোমিটার প্রসারিত ট্রেকিং শুরু হয়। জানকীচট্টিতে একটি প্রাচীন মঠ রয়েছে যেখানে লক্ষীনারায়ণ মন্দির প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এই মধ্যযুগীয় মন্দির এত সুন্দরভাবে তৈরী যা দেখে আপনার চক্ষু সার্থক হয়। যদি প্রকৃতপক্ষে আপনার পবিত্র আত্মা প্লাবিত এবং সত্য আলিঙ্গন করতে চায় তাহলে জানকীচট্টি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান।
বাসুকী তাল:এটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের কম পরিদর্শিত একটি পর্যটন স্থান যা গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র কেদারনাথ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি সমুদ্রতল হইতে প্রায় ৪১৩৫ মিটার (প্রায় ১৪.২০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত, এই বাসুকী তাল হ্রদটি চিত্তাকর্ষক এবং বিস্তীর্ণ হিমালয় পর্বতের পরিসরের দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে এবং এর কাছাকাছি চৌখাম্বা শিখরের একটি দর্শনীয় দৃশ্য দেখা যায়।এই আনন্দদায়ক স্থানটি ভ্রমণ করার শ্রেষ্ঠ সময় হল জুন থেকে অক্টোবর মাস, যখন এখানকার আবহাওয়া কোমল এবং মনোরম থাকে। শীতকাল তথা ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে, এখানকার জলবায়ু সাধারণত খুব চরম এবং কঠিন হয় এবং এই সময়ে এই অঞ্চলে ভ্রমন করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
ছাম্বা:ছাম্বা হল একটি পাহাড়ী জেলা যা ২০০০ ফুট থেকে ২১০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ছাম্বাতে পর্যটকরা তুষারাবৃত পর্বত, উপত্যকা, গিরিখাত, নদী, তৃণভূমি, হ্রদ, মঠ, এবং মন্দির দেখার সুযোগ লাভ করে থাকে। ৯২০ খ্রীস্টাব্দে রাজা সাহিল বর্মা তার মেয়ে চম্পাবতীর নামানুসারে ছাম্বা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছাম্বা তার অসাধারণ মন্দির, ক্ষুদ্র চিত্র, এবং হস্তশিল্পের জন্য সুপরিচিত।
উত্তরকাশী:উত্তরকাশী উত্তরাখণ্ড রাজ্যের একটি পার্বত্য জেলা। গঙ্গা এবং যমুনা নদীর উৎপত্তি এই জেলা থেকে হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী ‘দেবভূমি’ নামে পরিচিত (দেবতার ভূমি), যেহেতু এখানে হিন্দুদের দুটি সুপরিচিত তীর্থক্ষেত্র ‘গঙ্গোত্রী’ এবং ‘যমুনোত্রী’ অবস্থিত। আকর্ষণীয় উপত্যকা, গিরিখাত, প্রাকৃতিক হ্রদ এবং নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য, ছোটনদী, জলপ্রবাহ, নদী, পাথুরে শৈলশ্রেণী এবং তুষারাবৃত পাহাড়ের শৃঙ্গ এই জায়গার সৌন্দর্যকে গৌরবাম্বিত করেছে। এই জেলা তীর্থযাত্রী তথা ট্রেকিং এবং পর্বতারোহণের জন্য উৎসাহী পর্যটকদের কাছে চরম আকর্ষণীয়।
এই জেলার সদর দপ্তর উত্তরকাশী নামে নামকরণ করা হয়, এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি প্রাচীন জায়গা। উত্তরকাশীকে (উত্তরা) সমতল ভূমির কাশীর (বারাণসী) মতোই পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। উত্তর কাশী এবং সমভূমির কাশী (বারাণসী) উভয়েই গঙ্গানদীর তীরে অবস্থিত (ভাগীরথী)। আশি নামে অভিহিত কালীগড় এবং বরূন নামে অভিহিত সিয়ালমগড় নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত, উত্তরকাশী নামক জায়গাটি এক পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। উত্তরকাশীর একটি মহাপবিত্র ঘাট হল মণিকর্ণিকা। এখানে বিশ্বনাথের মন্দির রয়েছে।
ছোড়াবারি:যদি আপনি কেদারনাথ যান, তাহলে ছোড়াবারি (গান্ধী সরোবর) পরিদর্শন করতে যেতে পারেন, এখানে একটি হ্রদ আছে যেখানে জলের উপর বরফ ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। এটি বাসুকী তাল বরাবর, কেদারনাথ এর কাছাকাছি আরেকটি চিত্তাকর্ষক স্থান। এই উভয় হ্রদ ৪.১৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
উত্তরাখণ্ডের ছোড়াবারির অসাধারণ সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এখানকার অবিশ্বাস্য সামগ্রিক দৃশ্যের সঙ্গে অগণিত তুষারাবৃত শৃঙ্গের সুশোভিত অনুপম নান্দনিক সৌন্দর্য, রডোডেনড্রন বনাঞ্চল এবং হ্রদের চারিপাশের এলাকায় আলপাইন তৃণভূমির সৌন্দর্য কখনও কেউ জীবনেও ভুলতে পারবে না।
উত্তরাখণ্ডের ছোড়াবারি ধর্মানুরাগী তথা প্রকৃতি-অনুরাগীদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের একটি জায়গা।
ভীম পূল:ভীম পূল, মানা গ্রামের এক দিকে এবং পাথুরে গুহা ব্যাস গুফার বিপরীতে অবস্থিত। ভীম পূল হল একটি বিশাল পাহাড়, যা উচ্ছৃঙ্খল সরস্বতী নদীর উপর একটি প্রাকৃতিক সেতু গঠন করেছে। ভীম পূল সরস্বতী নদীর একটি অসাধারণ দৃশ্য দেখার প্রস্তাব করে, এখানে এটি প্রবলবেগে সংকীর্ণ পাথরের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, কথিত আছে যে পঞ্চপান্ডবের এক ভাই ভীম এটি স্থাপন করেছিলেন।
দিব্য শিলা:দিব্য শিলা হল পাথর দিয়ে তৈরি একটি স্তম্ভ। এটি যমুনোত্রীর মধ্যে যমুনোত্রী মন্দিরের কাছে, সূর্য কুন্ডের পাশে অবস্থিত। এই পাথরের ফলকটিকে ‘ঐশ্বরিক আলোর ফলক’ ও বলা হয়ে থাকে। যমুনোত্রীর মন্দিরে এবং যমুনায় পূজো দেবার পূর্বে ভক্তরা দিব্য শিলার সামনে প্রার্থনা করার জন্য ভিড় করে থাকেন।
পন্তনগর:পন্তনগর বর্তমানে ভারতের প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। প্রথমে, এটি উত্তর প্রদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত ছিল, কিন্তু এর বর্তমান নাম হল গোবিন্দ বল্লভ পন্ত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পন্তনগর, উধাম সিং নগর জেলায় অবস্থিত। এটি সমুদ্রতল হইতে ২৪৩,৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
ঋষিকেশ:ঋষিকেশ দেরাদুন থেকে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার এবং দিল্লি থেকে ২৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ঋষিকেশ সমুদ্রতল হইতে ৩৬৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ঋষিকেশের সীমানা তিন দিক দিয়ে হিমালয়ের শিবালিক শৈল শ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত যা এই পবিত্রস্থানের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে অবর্ণনীয় করে তোলে। এটি চার ধাম তীর্থক্ষেএের সূচনা স্থল (যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী, কেদারনাথ, এবং বদ্রীনাথ)।
নৈনিতাল:উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল কূমায়ুন পাহাড়ের অভ্যন্তরে একটি সুন্দর পাহাড়ি শৈলশহর, যা পূর্বে সাবেক যুক্ত প্রদেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল। হ্রদের সমন্বয়ে উৎকীর্ণ একে ‘৬০ হ্রদের শহর’ বা ‘ছাকতা’ বলা হয়ে থাকে।শীতকাল ছাড়া সারা বছর আবহাওয়া সহনশীল থাকে, শীতকালে খুব ঠান্ডা হয় এবং তুষারপাত হয়ে থাকে। নৈনিতালের জলবায়ু, এখানকার হ্রদগুলির উপর নির্ভর করে, যে কারণে এখানে প্রায় প্রতি দিন বিকেলে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই স্থানটি পরিদর্শন করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর।
অগস্ত্যমুনি:অগস্ত্যমুনি রূদ্রপ্রয়াগ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত একটি পর্যটন গন্তব্যস্থল। মন্দাকিনী নদীর তট বরাবর ১০০০ মিটার উচ্চতায় এটি অবস্থিত। এই জায়গাটি ঋষি অগস্ত্যের নামানুসারে নামাঙ্কিত করা হয়েছে, তিনি এখানে একটি পূর্ণ বছর ধ্যান করেছিলেন বলে কথিত আছে।এটি স্থানীয়ভাবে অগস্ত্যেশ্বর মহাদেব মন্দির হিসেবে পরিচিত, ঋষি অগস্ত্য দ্বারা প্রতিষ্ঠাপিত এবং এই জায়গাটির একটি প্রত্নতাত্ত্বিক তাৎপর্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এই স্থানে পাথরের দেওয়ালের উপর হিন্দু দেব-দেবীর ছবি খোদিত রয়েছে। এই স্থানটি অতীতের স্থাপত্য চাতুর্য এবং অনুপম কারিগরির সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। বৈশাখী উৎসবের সময়, এখানে একটি বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং অনেক ভক্তরা তাদের উপাসনা উদযাপন্ করতে এবং দেবতাদের প্রণাম জানাতে এখানে সমবেত হন।
গোমুখ:গোমুখ, গঙ্গোত্রী হিমবাহের মধ্য থেকে উদগত হয়েছে। গঙ্গা নদীর একটি প্রধান উপনদী হল ভাগীরথী যা গোমুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। হিন্দু তীর্থযাত্রীরা গোমুখের বরফ-ঠান্ডা জলকে পবিত্র বলে বিবেচনা করে থাকে। এই কারণে এটি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের কাছে একটি সনাতন স্থান হিসাবে বিকশিত হয়েছে।
গঙ্গোত্রী হিমবাহটি ২ থেকে ৪ কিলোমিটার চওড়া এবং ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ। গোমুখকে একটি গরুর মুখের সদৃশ কল্পনা করা হয়ে থাকে এবং এই কারণে এই জায়গাটির নাম গোমুখ দেওয়া হয়েছে (‘গৌও’ মানে গরু এবং ‘মুখ’ মানে মুখ)। গোমুখ শিবলিং পর্বত ঘাঁটির নিকটে অবস্থিত। সাম্প্রতিক কালে, এখানে হিমবাহ খুব দ্রুত গতিতে অপসৃত হচ্ছে। গঙ্গোত্রী থেকে গোমুখ এই ১৮ কিলোমিটার দূরত্ব পায়ে হেঁটে বা টাট্টুর সহায়তায় পার করা হয়ে থাকে। গঙ্গোত্রী থেকে গোমুখ ভ্রমণ বেশ সহজ এবং আপনি একই দিনে ফিরেও আসতে পারেন। গঙ্গোত্রীতে মুটে এবং টাট্টু প্রচুর পরিমানে উপলব্ধ।
জনপ্রিয় বিষয়
আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল ছারাও উত্তরাখণ্ড বিভিন্ন আকর্ষণীয় কার্যক্রম প্রস্তাব করে; যেমন – আউলি ঢালে স্কিইং, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে শিবির করা, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, হেমকুণ্ড সাহেব-এ ট্রেকিং, ঋষিকেশে র্যাফটিং, পর্বতারোহণ, হাইকিং, রক ক্লাইম্বিং, পক্ষী দর্শন, প্যারাগ্লাইডিং, বন্যপ্রাণী সাফারি এবং গঙ্গোত্রী হিমবাহ ট্রেকিং হল অন্যতম।
ভ্রমনের শ্রেষ্ঠ সময়
গ্রীষ্মকালে এই রাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত চলে যেতে পারে, পাশাপাশি শীতকাল ঠাণ্ডা হয়। বর্ষাকালে এই রাজ্যে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়। মার্চ থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর হল উত্তরাখণ্ড পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময়।ভ্রমনের খরচ
উত্তরাখণ্ড একটি প্রধান পর্যটন স্থল হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের ভ্রমনের প্রস্তাব দিয়ে থাকে, যেমন – দু:সাহসিক ভ্রমণ, তীর্থযাত্রা ভ্রমণ, প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী ভ্রমণ এবং অন্যান্য ভ্রমণ। আপনি আপনার পছন্দসই উপলব্ধ বিকল্পের মধ্য থেকে একটি ভ্রমণ নির্বাচন করতে পারেন। উত্তরাখণ্ড পর্যটন উন্নয়ন পর্ষদ (ইউ.টি.ডি.বি.) এবং বিভিন্ন বেসরকারি পরিচালকদের মধ্যে থেকে আপনি অনেক ধরনের প্যাকেজ পাবেন। চার ধাম ভ্রমনের জন্য, প্রতি ব্যক্তির প্রায় ১০,০০০/- টাকা ব্যয় হতে পারে, দু ধাম ভ্রমনের জন্য ৮,৫০০/- টাকা ব্যয় হতে পারে।
ভ্রমন করতে কত দিন যথেষ্ট?
উত্তরাখণ্ড আপনাকে বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে যাওয়ার প্রস্তাব প্রদান করে, আপনি কী ধরনের ভ্রমন পচ্ছন্দ করবেন; যেমন – ধর্মীয় তীর্থযাত্রা, দুঃসাহসিক ভ্রমন, অথবা শুধুমাত্র পাহাড়ে ছুটি কাটানো – এই সবের উপর ভ্রমনের দিনের সংখ্যা নির্ভর করে।
হোটেল এবং বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা
উত্তরাখণ্ডে বিকল্প বাসস্থান হিসাবে এবং সকলের সামর্থ্য অনুযায়ী অসংখ্য হোটেল, গেস্ট হাউস (অতিথিশালা) এবং রিসর্ট রয়েছে। উত্তরাখণ্ড একটি পর্যটন চালিত রাজ্য হওয়ায় এখানে উচ্চ থেকে নিম্ন বাজেট পরিসীমার সমস্ত ধরনের হোটেল পাওয়া যায়।
খাদ্যাভ্যাস
উত্তরাখণ্ডে গড়বাল এবং কুমায়ুন অঞ্চলের খাবারের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র এবং বৃহৎ বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। স্থানীয় গাছ-গাছড়া এবং মশলা ব্যবহারের ফলে এখানকার খাবার এক অতিরিক্ত উচ্ছলতা লাভ করে থাকে। নিম্নলিখিত খাবারগুলির মধ্যে থেকে আপনি ঐতিহ্যগত স্বাদের আস্বাদন পেতে পারেন – মাথির এবং তিল লাড্ডু, মাডুয়া রূটি, ছলিয়া রূটির সাথে দুবকাস, গাহাত (কুলাথ) সুপ, গাহাত রশমি বড়ি (কোপতা), উরদ কি পকোড়া (বড়া), ভাঁগ জিরা কি চাটনী, আলু কে গুটকে, চানসু, কাফুলি, ফানু, তিল কি চাটনী, বাল মিঠাই, সিনগোড়ি, ভানগক খাতাই, শিশুনাক শাক, ঝাঙ্গিরা কি খীর, কাপ্পা, গাহাত কি ডাল এবং সিঙ্গাল। খাবারের পাশাপাশি আপনি আরোও অন্যান্য পছন্দের খাবার এই রাজ্যের রেস্তোরাঁগুলিতে পাবেন। আপনি কিছু বিখ্যাত খাবারের দোকান; যেমন –শাকলে’স রেষ্টুরেন্ট, পিরামিড ক্যাফে, চটিওয়লা, লাভলি অমলেট সেন্টার, লিটল বুদ্ধ ক্যাফে, কাসমাণ্ডা প্যালেস রেষ্টুরেন্ট, চেতন পুরিবালা এবং দেবরাজ কফি কর্নার ইত্যাদিতে খাবারের স্বাদ গ্রহন করে দেখতে পারেন।
কেনাকাটা:উত্তরাখণ্ডে কেনাকাটার করার প্রচুর সুযোগ নেই, কিন্তু আপনি স্মারক হিসাবে নিম্নলিখিত জিনিসগুলি ক্রয় করতে পারেন।কাঠ-খোদিত সামগ্রী।পশম।রুদ্রাক্ষের সামগ্রী।হস্তনির্মিত মোমবাতি।জৈব বস্তু।ফার্নের সৌখিন সামগ্রী।
আচার এবং জ্যাম।বেশীরভাগ কেনাকাটা শৈল শহরের ম্যাল অঞ্চলে করা যেতে পারে। সরকারী দোকানগুলির পাশাপাশি বেসরকারী দোকানগুলিও কেনাকাটার জন্য ভালো। পল্টন বাজার এবং তিব্বতি বাজারের মতন কয়েকটি জায়গা থেকেও আপনারা কেনাকাটা করতে পারেন।
ভ্রমণ উপদেশ:প্রবঞ্চক ভূ-খণ্ডের কারণে এখানে আপনার নিরাপদ ভ্রমণ এবং সাবধানতার সাথে গাড়ি চালনা করা অপরিহার্য।
যখন নিজে ট্রেকিং করবেন বা বাইরে যাবেন তখন একটি মানচিত্র অবশ্যই নিজের সাথে বহন করবেন।
পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় সাধারণত সন্ধ্যার দিকে বেশ শীতল হয়, তাই গরম কাপড় বহন করা অপরিহার্য।
বর্ষাকালে, পাহাড়ী অঞ্চল ধস প্রবণ হওয়ায়, ভ্রমন থেকে বিরত থাকুন।
পর্যটন সহায়তা নম্বর:উত্তরাখণ্ড পর্যটন উন্নয়ন পর্ষদ (ইউ.টি.ডি.বি.) – দূরাভাষ (টেলিফোন নং) : ৯১ – ১৩৫ – ২৫৫৯৮৯৮, ২৫৫৯৯৮৭
তথ্যসূত্র : রাজ্য পর্যটন তথ্য।
আপনার মতামত দিন: