Ameen Qudir

Published:
2019-04-16 19:51:05 BdST

যাবেন নাকি তিনচুলে ?


 

 

 

ছবি ও লেখা প্রসেনজিৎ নন্দী
__________________

পাহাড় ভালবাসেন? ভীড় এড়িয়ে, কোলাহল এড়িয়ে প্রকৃতির কোলে কয়েকটা দিন কাটাতে চান? চা বাগানের মাঝে, সবুজ প্রকৃতি, মাথার ওপর চির তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা, নিস্তব্ধতা আর আন্তরিক আথিতিয়তার সান্নিধ্য পেতে চান??
তাহলে তিনচুলে আপনার জন্য সঠিক গন্তব্য। এখানে কোলাহল বলতে, আপনি পাবেন - নানারকম পাখির ডাক, আর ঝি ঝি পোকার ডাক। নিস্তব্ধতার ও যে নিজেস্ব একটা আওয়াজ আছে সেসব এখানে না এলে টের পাবেন না।

আজ আমি চলে এলাম তিনচুলেতে। আপাতত দিন তিনেকের জন্য আমি আর আমার পরিবারের ঠিকানা রাই রিসোর্ট। কেন জায়গাটার নাম তিনচুলে সেটা অনেকেই জানেন। যারা জানেন না, তাদের জন্য বলি, একটা ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ। একসময় ১৭ টা ফ্যামিলি নিয়ে প্রথম গড়ে ওঠে। পাহাড়টি একসময় তিনটি চুলা অর্থাৎ উনুনের মত দেখতে ছিল বলে এর নাম তিনচুলে। WWF এই ১৭ টি ফ্যামিলিকে খুব সাহায্য করছে model village তৈরি করার জন্য, village tourism develop করার জন্য।

 

কথা হল, কেন রাই রিসোর্ট? এখানে বেশ কয়েকটা হোমস্টে আছে যেমন গুরুং গেস্ট হাউজ, অভিরাজ হোম স্টে, গুরুংস হোম স্টে, ইস্ট হিমালায়ন হোম স্টে। কিন্তু আকর্ষণ, ব্যাপ্তি, বৈচিত্র, সৌন্দর্য এবং সব শেষ থাকা-খাওয়া ও আতিথিয়তায় সেরা "রাই রিসোর্ট"। বিশ্বাস করুন, যারা তিনচুলেতে অন্যান্য হোম স্টে তে থেকেছেন, তাদের অভিজ্ঞতাকে কোনরূপ ছোট না করেই বলছি - রাই রিসোর্টের আকর্ষণ কিন্তু অন্যরকম। এসব জায়গায় আতিথিয়তা, দেখভালের দিক দিয়ে কম বেশি সকলেই সমান, কেউ কম যায় না। কিন্তু তা স্বত্বেও রাই রিসোর্টের আকর্ষণ কে আপনি কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন না। এর কয়েকটি কারণ আছে।

১) দারুন লোকেশন
২) রিসোর্টের দুর্দান্ত আর্কিটেকচার
৩) সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশ
৪) বিশাল জায়গা নিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রপার্টি
৫) নিজস্ব কার পার্কিং এর ব্যাবস্থা এবং সেটা অন্যান্য হোম স্টের মত রাস্তার ওপর নয়।
৬) রিসোর্টের নিজেস্ব সাজানো-গোছানো ভিউপয়েন্ট
৭) অনবদ্য রান্নাবান্না আর দেখভাল।

পদাতিক এক্সপ্রেস একদম সঠিক সময়ে আমাদের NJP স্টেশনে নামিয়ে দেওয়ার পর রিসোর্টের কর্তাবাবু "অজিত রাই" কর্তৃক পাঠানো সারথি "বাবিন" আমাদের পৌনে তিন ঘন্টায় তিনচুলে নিয়ে এল। পথে আসবার সময়, গুরুং এর অবস্থান, IPL, রাজনৈতিক পরিস্থিতি - গালগপ্পো থেকে কিছুই বাদ যায়নি। আড়াই-তিন ঘন্টার রাস্তা নিমেষে পাড় করে চলে এলাম।

রিসোর্টে পৌঁছনোর পর, স্নান খাওয়া ভুলে শুধু দেখছি আর ভাবছি এ কোথায় এলাম! মাথার ওপর নীল আকাশ, সামনে স্লিপিং বুদ্ধ, সবুজ পাহাড়, পাখির ডাক আর হলুদ-কমলার মেলবন্ধনে তৈরি এক দুর্দান্ত বাংলো "রাই রিসোর্ট"। আপনা থেকেই মুখ থেকে বেরিয়ে এল একটি শব্দ " ওঃ" !

মোটামুটি স্নান পর্ব সেরে চেয়ার টেবিল টেনে নিয়ে বসলাম টেরেসে। সর্বপ্রথম আলাপ হলো রিসোর্টের All in one শ্রীমান দিলীপ এর সাথে। দারুন ছেলেটি। আপনি যা বলবেন, যা আবদার করবেন বা যাই চাইবেন, সর্বদা মুখে হাসি মাথা নিচু আর উত্তর "ok sir" ... অর্থাৎ আপনি চলে এসেছেন বাড়ি থেকে দূরে এক অন্যরকম 'সব পেয়েছি' এর দেশে। অজিত রাই জির ফ্যামিলির সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম আর দিলীপের "কেয়ার টেকিং" রইল আপনার জন্য। আর একজন কখন যে মিলে মিশে ফ্যামিলি হয়ে গেল, তার কথা না বললে এ গল্প অসম্পূর্ণ, তিনি হলেন "মেসি"! রিসোর্টের সারমেয়। পায়ে হেঁটে গ্রাম ঘুরবেন? মেসি আপনার সঙ্গী। সে নিয়ে যাবে পথ চিনিয়ে বহুদূর। কোথা দিয়ে নামবেন, কোথা দিয়ে উঠবেন - ওই আপনার গাইড।

দুপুরের খাওয়া পর্ব - সে এক দারুন ব্যাপার!! গরমাগরম ধোঁয়া ওঠা বাসমতি চালের ভাত, ডাল, আলু ভাজা, ডিমের ঝোল আর সবজি। এই সবজি জিনিসটা অসাধারণ। বেশ বুঝতে পারছি এটা মাঞ্চুরিয়ান টাইপের লাগছে কিন্তু জিনিসটা ঠিক কি সেটা কিছুতেই আয়ত্তে আনতে পারছি না। শেষমেশ গিন্নি বললেন, ওটা বেগুনের মাঞ্চুরিয়ান। বিশ্বাস করুন কয়েক সেকেন্ডের জন্য হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম! 'বেগুন' তার কিনা মাঞ্চুরিয়ান !! খেয়েছেন কখনও? আসুন একবার এখানে।

লেখাটা আর বেশি বড় করছি না, কারণ তিনচুলে নিয়ে অনেক লেখা এই গ্রূপে আছে, বিশেষ করে রাই রিসোর্ট নিয়ে। আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। যারা ভাবছেন আসবেন, নির্দ্বিধায় চলে আসুন। ছোট বাচ্চা নিয়ে টেনশন? কুচ পরোয়া নেই। দিলীপ হাজির আপনার জন্য। মুশকিল আসান।

যারা ভাবছেন : "দেখবার কি আছে? সাইট সিয়িং কি কি করবো ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে বলবো, টই টই করে ঘুরে বেড়াবার জন্য নয়, নিতান্তই নিজের জন্য, প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সপে দেওয়ার জন্য আসুন। বিশ্বাস করুন একদম ঠকবেন না। রিসোর্টে বসে থেকে আপনার সময় কেটে যাবে। একটু ওপড়ে অর্থাৎ রিসোর্টের ভিউ পয়েন্টে উঠে আসুন। এবার আপনি ৩৬০° হিমালয় দেখুন, উল্টো দিকে কালিমপঙ, সিকিমের নামচি দেখুন। কথা দিলাম হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে!!

যারা সাইট সিয়িং করতে ইচ্ছুক, তারা অরেঞ্জ গার্ডেন, তাগদা অর্কিড গার্ডেন, লোকাল ফার্মিং, পেশক টি গার্ডেন, লামাহাট্টা, তিনচুলে মানাস্ট্রি এবং ত্রিবেণী দেখতে পারেন। ত্রিবেণী অর্থাৎ তিস্তা আর রঙ্গিতের মিলনস্থল। water rafting করতে চাইলে এখানে করতে পারেন। এমনিতে জায়গাটা বেশ মনোরম।

কিভাবে বুক করবেন: Google এ গিয়ে তিনচুলে Rai Resort দিয়ে সার্চ করুন। ওদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। সুবিধামত ডেট অনুযায়ী বুক করেদিন। ১০০০ টাকা আপনি অনলাইন পে করে বুক করতে পারেন আর বাকিটা স্পটে। ফোনে কোনো বুকিং হয় না।

খাওয়া-দাওয়া: চারবেলা খাওয়া দাওয়া ৫৫০ টাকা জনপ্রতি/প্রতিদিন। দুপুরে ডিম, রাতে চিকেন। ভাত বা রুটি অল্টারনেট।

রুম ডিটেইলস: আমরা কত্তা-গিন্নি আর দুই ছেলেমেয়ে। আমি দোতালার 5 বেডেড রুম নিয়েছিলাম। এটার সুবিধা হল দুটো inter connected room. অর্থাৎ স্পেসিয়াস। দুটো বিল্ডিং এর মাঝেরটা হল VIP cottage পুরোটা wooden furnished । খাজনা কিন্তু একটু বেশি।

সব শেষে একটা টিপস দি: অজিত রাই মানুষটা ভাল। বড় মনের মানুষ। বুক করার পর আপনি ফোনে আলাপ চারিতায় fare negotiate করতে পারবেন আশা রাখি।

কিছু লেন্সবন্দী মুহূর্ত শেয়ার করলাম।

পরের গন্তব্য লেপচাজাগত হয়ে বিজনবাড়ি!! সে আরেক স্বপ্নের দেশ।।
উইকেন্ড ট্যুর ফ্রম কলকাতার সৌজন্যে -----------

আপনার মতামত দিন:


ভ্রমণ এর জনপ্রিয়