Ameen Qudir

Published:
2017-03-09 18:14:48 BdST

সেক্স : জেন্ডার বনাম নারী



সারা জেসমীন
______________________________


সেক্স –জেন্ডার বনাম নারী ।
সেদিন আমার নয় বছরের মেয়ে অহনা সাঁতারের ফরম পূরণ করতে গিয়ে এক জায়গায় এসে থমকে গেল। বললাম কি হল? গোল গোল চোখ করে ইংরেজি সেক্স শব্দটার দিকে আমাকে ইশারা করে ফ্রেঞ্চ ভাষায় বলল আম্মু এটা তো একটা পচা কথা (Mauvais mot)।


আমি কিছু না বোঝার ভাণ করে বললাম কে বলেছে তোমাকে যে এটা একটা পচা কথা? ও বলল কেউ বলেনি কিন্তু আমি জানি। আমি হেসে বললাম হয়ত এটা কখনও পচা কথা হিসেবে ব্যাবরিত হয় কিন্ত এখানে তুমি মেয়ে সাতারু নাকি ছেলে সাতারু সেটা ওরা তোমাকে জানাতে বলেছে। তখন ও আমার কথা মত মেয়ে শিশুর ঘরে টিক মার্ক দিল ঠিকই কিন্ত ওর মনে যে একটা বড় প্রশ্ন রয়ে গেল সেটা ভাল মতই বোঝা গেল।


ওর জায়গায় নিজেকে প্রতিস্থাপন করে দেখলাম যে এই প্রশ্ন ত আমার মনেও ছিল যেটা পনের ষোল বয়স পর্যন্ত কাউকে করতে পারিনি কিন্তু কানাডার আলো বাতাসে বড় হচ্ছে বলে কি সহজেই ও প্রশ্ন টা করতে পারল ।

যখন ই বাংলা ব্যাকরণ পরতে বসতাম তখনই গোলক ধাঁধায় পরে যেতাম সেক্স ও জেন্ডার এর ভিত্তিতে নারী-পুরুষের বিভাজনের সম্বোধন মুখস্ত করতে গিয়ে- যা এখনো মানস পটে ভেসে ওঠে যেমনঃ
নারী-পুরুষ
নেতা- নেত্রী
কবি-মহিলা কবি
কিন্তু চেয়ারম্যান ও প্রধান মন্ত্রীর যায়গায় মহিলা চেয়ারম্যান ও মহিলা প্রধান মন্ত্রী হবে কি হবে না তা নিয়ে ছিল অসছহ ধারণা যদিও এসব পদ গুলো কিছুটা ব্যাতিক্রম ছিল । শুধু তাই নয় , নারী-পুরুষের প্রাকিতিক পার্থক্য ( Sexual difference )কে সামনে রেখে যখন আরেকটি প্রত্যয় " “জেন্ডার “ সামনে আসল আর দুটোর ই মানে বলা হল “ লিঙ্গ” আর নারী-পুরুষের এই লিঙ্গিয় পার্থক্য যখন পৃথিবীর সকল প্রান ও প্রাণী -, জড় জগত কে নারী-পুরুষে ভাগ করে ফেললো তখন আমার মেয়ের মত আমার মনেও অথবা বোধ করি সকল কোমল মতি শিক্ষার্থী দের মনে হাজারো প্রশ্ন ও ভাবনার উদয় হবে এটাই স্বাভাবিক।


নারী-পুরুষের সম্বোধনের ভিন্নতা পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই রয়েছে এবং ফরাসী ভাষা এ ক্ষেত্রে অনেক খানি সরেস। ফরাসী ভাষায় নারী-পুরুষের পার্থক্য কে নারী-পুরুষের জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং এ বিভাজন ছড়িয়ে দিয়েছে সমগ্র প্রকৃতি তে!
পৃথিবীর সকল প্রান ও প্রাণী ও জড় জগত কে এরা নারী-পুরুষে ভাগ করে ফেলেছে!! এদের আকাশ পুরুষ তো সমুদ্র নারী।! চেয়ার পুরুষ তো টেবিল নারী। মোট কথা এদের চার পাশে যা কিছু আছে তা নারী ও পুরুষে বিভক্ত। এ কারনেই বোধ করি এটি পৃথিবীর সবচেয়ে অভিজাত ও কঠিন ভাষা! এ বিষয়ে অন্য অধ্যায়ে লেখার ইছছে রইল।
ভাষা প্রতিটি সমাজের দর্পণ যার মধ্য দিয়ে সেই সমাজ ও সংস্কৃতি কে দেখা ও জানা যায় ।সেই দর্পণে ধীরে ধীরে দেখলাম যে “জেন্ডার প্রত্যয় টি নারী-পুরুষ কে শুধু আলাদা করে সম্বোধনের জন্যই ব্যাবরিত হয়নি বরং নারী-পুরুষের লিঙ্গীয় -পার্থক্য কে সামনে রেখে সমগ্র মানব সমাজ টাকে ই মোটা দাগে নারী-পুরুষের দুটি আলাদা আলাদা সমাজে পরিণত করেছে যেখানে পুরুষের অবস্থান -পরিবারে , সমাজে, সংস্কৃতিতে , ধর্ম ও ধর্মীয় আইনে , কর্মস্থানে সর্ব পরি রাষ্ট্রে নারীর তুলনায় অনেক উঁচু ।


নারী উকিল , ডাক্তার , পাইলট , ব্যারিস্টার যাই হোকনা কেন তার একটাই পরিচয় সমাজে যে সে নারী, তাই সে অধঃস্তন। কারন সে প্রাকৃতিক ভাবে সে নারী হয়ে জন্মেছে যার জন্য তার নিজের না ছিল নিয়ন্ত্রন, না ছিল অন্য কারও কোন প্রভাব বা নিয়ন্ত্রন - যেমনটা থাকে না পুরুষ হয়ে যারা জন্মেছে তাঁদের ক্ষেত্রেও।

অথচ কি বিস্ময়কর ভাবে নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক পার্থক্য কে পুঁজি করে সমাজ নির্ধারণ করে দিয়েছে নারীর জন্য একটি নির্দিষ্ট চৌহদ্দি বা সীমানা, নির্দিষ্ট ইমেজ, কতকগুলো নির্দিষ্ট মূল্যবোধ , কতকগুলো নির্দিষ্ট প্রথা – আইন যার প্রভাবে নারী যুগ যুগ ধরে কি পশ্চিমা বিশ্বেরমত উন্নত সমাজে কি ৩য় বিশ্বের মত অনুন্নত সমাজে একই ভবে অধঃস্তন অবস্থায় চক্রায়িত হয়ে আসছে।

নারী কে সমাজে অধঃস্তন অবস্থানে সীমাবদ্ধ রাখার এবং নারী কে নারী হয়ে ওঠার জন্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নারী নিজে যেমন সক্রিয় বা তেমনি ভাবে দায়ী পুরুষ ও।

এ দায় অনেক ক্ষেত্রে কোন একক বাক্তি নারী-পুরুষের নিতে হয়না বা প্রয়োগ করতে হয়না যখন অনুষঙ্গ হিসেবে সক্রিয় থাকে আমাদের বিভাজিত সমাজ, সংস্কৃতি , ধর্ম ও আইন ও সর্বোপরি নারী অধঃস্তনতার মূল্যবোধ ।
নারীদের জন্য আমেরিকা বা কানাডায় ও এসব কিছু এক ই ভাবে প্রবল ও কার্যকর । নারীকে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য যা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। একজন সচেতন ও পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার জন্য এসব অবকাঠামোগত মেকানিজম গুলো কে ধীরে ধীরে অচল করে করে ফেলা প্রয়োজন।

_______________________

লেখক সারা জেসমীন প্রবাসে বাংলাদেশের উজ্জ্বল মুখ।
মন্ট্রিয়ল, কানাডা

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়