Ameen Qudir

Published:
2017-03-04 20:05:40 BdST

চিকিৎসক সমাজ: ‘বিল্লা তালি’ দাও



ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ

____________________________

বাংলা আর ভারতীয় হিন্দী চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয় নায়কদের দেখে আমার একটা ধারণা হয়েছে যে এতদঞ্চল থেকে 'অ্যাংরি ইয়ং জেনারেশন' হারিয়ে যাচ্ছে।


সব যেন কমনীয়তায় ভরপুর পুতু পুতু নায়ক- 'এই গরু সরে যা' উক্তিটা অনেক বেশি মানানসই। সবখানেই এই হাল, চিকিৎসাপেশার ক্ষেত্রেও ব্যত্যয় ঘটবে কেন ? আজ থেকে বিশ-পচিঁশ বছর চিকিৎসক সমাজের নেতারা ছিলেন সেই 'অ্যাংরি ইয়ং ম্যান' - কমনীয়তায় ভরপুর 'বিল্লা তালি' মার্কা না। হায় কালের বিবর্তনে আমরা তাদের হারিযে ফেলেছি। এখন চিকিৎসক সমাজ চিন্তা করে 'আমার এই মুভে অমুক ভাই কী মনে করবে ' 'তমুক দাদা আমার উপর নারাজ হবে নাকি' ইত্যাদি।


আমি এমবিবিএস পাশ করেছি ১৯৯৯ সালে। এরপর এক বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের আহবায়ক হিসেবে কাজ করেছি- তখন বুঝেছি হাসপাতালের মাথা যদি হন অধ্যাপকরা, হাত পা উপাঙ্গ যদি হন সিএ , আই এমওরা তবে হাসপাতালের প্রাণ কিন্তু ইন্টার্নরা। সেই প্রাণের উপর যখন আঘাত আসে তখন মাথা বা উপাঙ্গ কাজ করতে পারেনা।


একথা সত্যি গুণগত মান সকলদিকেই কমেছে-কমেছে সহনশীলতা- চিকিৎসকদের এটিচুড এর উৎকর্ষ সাধন ততটা হয়নি কিন্তু সামগ্রিকভাবে যেভাবে চিকিৎসকবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে তা অন্যায়, অবিমৃষ্যকারীতা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অবশ্যই পরশ্রীকাতরতাদূষ্ট। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে চিকিৎসক সমাজের অনৈক্য আর দুর্বলতার সুযোগেই এগুলো ঘটছে। যা, হোক বলছিলাম হাসপাতালের প্রাণ ইন্টার্নদের কথা- আমার মনে আছে আমি যখন ইন্টার্ন ছিলাম তখন মেডিকেল ছাত্র রাশেদ অপহরন আর অধ্যাপক নীলকান্ত ভট্টাচার্য স্যারের উপর আক্রমনকে কেন্দ্র করে আমরা খানিকটা ছোটখাটো আন্দোলন করেছিলাম- সেই আন্দোলন থামাতে সরকারী এবং বিরোধী দলের আঞ্চলিক নেতারা কম চাপ তৈরি করেনি- কিন্তু আমাদের পাশে পেয়েছিলাম চিকিৎসক নেতাদের, আমাদের অধ্যাপকদের , অধ্যক্ষ মহোদয়কে এবং সর্বস্তরের চিকিৎসককে-এখনকার মত 'মাম্মা, আগে নিজে বাঁচো'- মতবাদধারী চিকিৎসক পাইনি বল্লেই চলে।

বগুড়া মেডিকেলে কী ঘটেছিল তা ঐ হাসপাতালের সম্মানীত পরিচালক ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন-মাননীয় পরিচালকের স্বাক্ষরিত সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার উল্লেখ আছে “রোগীর ছেলে মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে” এবং “ রোগীর মহিলা নিকট আত্মীয় সকলের অজান্তে পিছন দিক দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে উচ্চবাচ্য করে এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য করে হুমকী প্রদান করে”। পরিচালক মহোদয়ের এই বয়ান কি তদন্ত কমিটি গ্রাহ্য করেছেন ?


তদন্ত কমিটি তদন্ত করার আগেই আমরা পত্রিকান্তরে জানতে পারি কী শাস্তি হতে যাচ্ছে , ঘোড়ার আগেই গাড়ী জুড়ে দিয়ে তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়েছে।


অনেকে গাড়ীশ্রমিকদের আন্দোলনকে উদাহারণ দিয়ে কঠোর হতে বলেছেন- আমার বক্তব্য চিকিৎসকরা পরিবহণ শ্রমিক নয়, তাদেঁর আন্দোলন হবে পরিশীলিত, দৃঢ় এবং ঋজু। কিন্তু তেমন নেতৃত্ব কোথায় ? ডিপিসি, পোস্টিং, পদ, পদবী, মনোনয়ন, স্ত্রীর প্রমোশন, বিদেশ ভ্রমণ, এর মূলা তো সরে যাবে। ‘বিগ ব্রাদার’ ক্ষুব্ধ হবেন।
তার চেয়ে এই বেশ ভালো আছি। বৃহন্নলাবেশী অর্জুন রণ কৌশল ভুলে যাননি। বৃহন্নলা দশা মুক্ত হয়ে আবার স্বমহিমায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। আসুন আমরা এই বৃহন্নলা দশা থেকে মুক্ত হতে সবাই মিলে “বিল্লা তালি” দেই।
_____________
বি:দ্র: ‘বিল্লা তালি’ হচ্ছে রাস্তায় কিছু বৃহন্নলা যে তালি বাজিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করে, সেই তালি।

___________________________

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ । দেশের জনপ্রিয় কলামিস্ট। কথাসাহিত্যিক ।
সহকারী অধ্যাপক, চাইল্ড এডলোসেন্ট এন্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়