SAHA ANTAR

Published:
2023-11-27 13:12:19 BdST

গ্রোয়নাল রেসপন্সওসিডি ও যৌনস্পর্শ কাতরতা : এক রোগীর স্পর্শকাতর কিছু কাহিনি


প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ, কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক এবং জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা

 

প্রফেসর ডা. সুলতানা আলগিন
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ,
কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক এবং জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
__________________

এক ২৩ বছর বয়সী যুবক মাথায় টুপী দাড়ি পান্জাবী পরনে। ইতস্তত করে সামনে বসল। কি সমস্যা জানতে চাইলে লাজুক ভঙ্গিতে বলল আপনি মহিলা ডাক্তার । তারপরও আপনার কাছে পাঠিয়েছেন একজন পুরুষ ডাক্তার । আমার সমস্যা একটু অন্য রকম। মানে পারসোনাল।
আমি বললাম পারসোনাল কথা ডাক্তারের কাছে খুলে বলাই ভাল। বুঝতে সুবিধা হবে। তা তোমার সমস্যাটা বলে ফেল।
ছেলেটি মাটির দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল যে তার মনে শিশুদের নিয়ে আজেবাজে কথা ছবি মনে আসে চোখের সামনে ভাসে। এসব কথা কোনভাবেই সে মেনে নিতে পারে না। আরও বলল যে আমার মনে এসব আসছে দেখে আমি আমার পোশাক বদলেছি। দাড়ি রেখেছি টুপি পরেছি। কিন্তু মনের মধ্যে এসব ইদানিং এত বেড়েছে যে মনে হয় আমার দোযখেও জায়গা হবে না। এছাড়া আরও আগে থেকেই কোন ছবি বা সে· সংক্রান্ত ছবি দেখলে বা মনে পড়লে আমার শরীরের নীচের অংশ/কুচকী/গ্রোয়েন এরিয়া উত্তেজিত হয়ে যায়। লিঙ্গটি দাড়িয়ে যায়। কিছুতেই নামাতে পারি না। কেমন একটা গরমভাব অনুভব করি। ঢিলা ঢালা পোশাক পরি শুধু মাত্র নিজেকে আড়াল করার জন্য। মনে হয় আমার মত এত খারাপ আর কেউ নাই।
ম্যাডাম আপনি যদি কিছু মনে না করেন একটা ঘটনা বলতে চাই।
আমি বললাম বল।
আমি যখন দ্বিতীয়বর্ষ মেডিকেল স্টুডেন্ট তখন পরীক্ষক ইচ্ছে করে আমাকে স্ত্রীজননাঙ্গ দিয়ে জানতে চাইলেন ভ্যাজাইনার দৈর্ঘ কত? আমি যা উত্তর দিয়েছিলাম তাতে উনি কমেন্ট করেছিলেন এর মধ্য দিয়ে ট্রেন যাবে। আমি মাথা নীচু যে করেছিলাম আর উচু করতে পারি নাই। আমার মাথা থেকে এই জাতীয় কথাগুলো বের করতে পারি না। আমাদের ব্যাচের একজন মেয়েকে বেড সাইডে স্যার বললেন স্ক্রটাম/অন্ডকোষ দেখতে। ও সংকোচ করলে শিক্ষক জোর করে দেখাতে বললেন । ও যখন দেখাল তখন লোকটার লিঙ্গটি দাড়িয়ে যায়। বেচারা রোগী এবং আমার ব্যাচমেট কি যে একটা অকওয়ার্ড পজিশনে পড়েছিল এখনও চোখের সামনে ভাসে।

গ্রোয়নাল রেসপন্স মানুষের একটা অতি স্বাভাবিক মনোদৈহিক প্রতিক্রিয়া। সে· এডুকেশন বা যৌনশিক্ষার বিজ্ঞানভিত্তিক মনোকাঠামোর ঘাটতির কারণে হয় এবং ওসিডি/ শুচীবায়ুরোগটি মনের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্ধের সৃষ্টি করে।

গ্রোয়নাল রেসপন্স বা যৌনস্পর্শকাতরতা :
যৌনসংক্রান্ত যে কোন দৃশ্য বা স্পর্শ,চিন্তা মানুষের শরীরে একটা উত্তেজনাবোধ,সাড়া জাগায় । যা খুবই স্বাভাবিক। দুই উরুর মাঝে শিরশির,অবশ অনুভুতি,ফোলা ভাব,ভেজা অনুভুতি,লিঙ্গের হালকা নড়াচড়া এসবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া । একেই গ্রোয়নাল রেসপন্স বলে। এতে লজ্জার কিছু নেই। এই শারীরিক প্রতিক্রিয়া আমাদের চাহিদা,বিশ্বাস,সংস্কৃতি, ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। বলা যেতে পারে সঙ্গতিবিহীন কম্পালশন। রিফ্লেক্সলি ঘটে। প্রত্যেক নারীপুরুষের যৌনউত্তেজনায় তারতম্য আছে। কেউ খুব দ্রুত উত্তেজিত হয় আবার কেউ খুব ধীরে উত্তেজিত হয় । এর কোনটাই দোষের নয়। সবই ব্রেনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যৌন উত্তেজনাবোধ এবং যৌনআকাঙ্খা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাপবোধ হবে তখনই যা কেউ সজ্ঞানে পাশবিকতার বশে তার যৌন আকাঙ্খা দমন না করে তা চর্চা করে। আনন্দ পায়।

সেক্স সংক্রান্ত ওসিডি:
সেক্স ওরিয়েন্টেশন(হোমো টাইপ) ওসিডি,পেডোফইল এবং রিলেশনশীপ ওসিডি --এগুলো সে· সংক্রান্ত ওসিডি । অমূলক যৌন চিন্তা মাথার মধ্যে অসম্ভব পীড়াদায়ক অনুভ’তি তৈরী করে।
সেক্স ওরিয়েন্টেশন /হোমো টাইপ ওসিডি হচ্ছে সমসেক্সের মানুষ নিয়ে আস্বাভাবিক চিন্তা,গে হয়ে যাওয়ার ভয়,আনলাইনে সার্চ দেয়া, নিজের বিকৃতি নিয়ে শঙ্কিত থাকা ইত্যাদি।
পেডোফইল ওসিডিতে পিউবার্টি/সাবালক/সাবালিকা হয় নাই এমন শিশুদের নিয়ে যৌন চিন্তা আসে ।
রিলেশনশীপ ওসিডিতে সম্পর্কবিহীন (স্ত্রী বা স্বামী বা পার্টনার নয়) ব্যক্তিদের নিয়ে যৌন চিন্তা আসে ।
অনেক ওসিডি রোগী যখন গ্রোয়নাল রিফ্লেক্স অনুভব করে, তখন তাদের মধ্যে আত্মগ্লানি তৈরী হয়।

তারা কেন এরকম অনুভুতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ?

লোকজন হয়তো টের পাচ্ছে। তার ধর্মীয় বিশ্বাস,নৈতিকতা,বিবেক তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। নিজের অজান্তেই সামাজিকতা বন্ধুবান্ধব পরিবার পরিজন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এই স্বাভাবিক রিফ্লেক্স সমন্ধে ধারণা না থাকায় রোগটি আরও জটিল আকার ধারণ করে।

গ্রোয়নাল রেসপন্স কম্পালশন:
গ্রোয়নাল রেসপন্স দ্বারা তাড়িত হয়ে যে কম্পাশন বা আচরণগুলো করতে দেখা যায়: সারাক্ষণ অনলাইনে এ বিষয়ে সার্চ করা,গোপনে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আশ্বস্ত হওয়ার জন্য আলোচনা করা, সমলিঙ্গের বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে অথবা ভিডিও দেখে আর চেক করে যে তাদের এই রেসপন্স স্বাভাবিক/ অস্বাভাবিক কিনা ? অনেকে ঠোলা ব্যাগিটাইপ পোশাক পরে যাতে কেউ তাদের মধ্যে যে গ্রোয়নাল রেসপন্স হচ্ছে তা বুঝতে না পারে।

কি করণীয় :
ওসিডি রোগী কোন যুক্তি মানতে চায় না। তারা শুধু আশ্বস্ত হতে চায় স্বস্তি পেতে চায়। ওসিডির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে। যা মনে আসছে তাকে আসতে দাও । এসব চিন্তা যে ব্রেনের কর্টিকো-স্ট্রায়েটো-থ্যালামো-কর্টিকাল লুপ বা সার্কিটের অসহযোগিতার কারণে হচ্ছে তা মেনে নিয়ে ঐ সার্কিটকে বোকা বানিয়ে এই শুচীবায়ু রোগকে যুদ্ধে হারানোর প্রতিজ্ঞা করতে হবে। ব্রেন যে সিগনাল দিচ্ছে তার উল্টা অর্থ্যাৎ স্বাভাবিক কাজকর্ম করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। ওষুধ ছাড়া আপনার ব্রেনের সার্কিট থেকে চিন্তাগুলো দূর করা বেশ কঠিন হবে। তাই নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, কায়িক পরিশ্রম এবং নিয়মিত ফলোআপ জরুরী।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়