ডা শাহাদাত হোসেন

Published:
2022-09-27 05:46:48 BdST

"১জন আত্মহত্যাকারীর সাথে গড়ে ১৩৫জন ব্যক্তি জড়িয়ে থাকে"


 

সংবাদদাতা
_______________________

বিএসএমএমইউর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সাইকোথেরাপি উইং প্রধান এবং এটিসিবির সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেছেন ,
১জন আত্মহত্যাকারীর সাথে গড়ে ১৩৫জন ব্যক্তি জড়িয়ে থাকে। তা হতে পারে নিজের পরিবারের একান্ত আপনজন ,বন্ধুবান্ধব,সহকর্মী ,ক্লাসমেট এবং আরও অনেক নিকটজন । যারা বেঁচে থাকেন তাদের মধ্যে মারাত্মক মনঃপীড়া,কষ্ট,আত্মগ্লানি,লজ্জা,কুসংস্কার, সামাজিক নিন্দার ভয় কাজ করে। যারা এই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারেন না তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন । পরবর্তীতে তাদের মধ্যেও মানসিক সমস্যা বিষন্নতা, পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, আত্মহত্যার চিন্তা / প্রবণতা দেখা দেয়।

আজ ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার কলা মিলনায়তনে আয়োজিত আত্মহত্যা বিষয়ক এক সায়েন্টিফিক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।


এসোসিয়েশন অফ থেরাপিউটিক কাউন্সেলরস, বাংলাদেশ (এটিসিবি) ,ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সাইকোথেরাপি উইং আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশের বরেণ্য মনোরোগ চিকিৎসক ও থেরাপিস্টবৃন্দ অংশ নেন।


অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,

দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা পর্যায়ে আত্মহত্যা একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর প্রতিরোধকল্পে সচেতনতা কর্মসূচি সহ প্রয়োজনীয় পূর্ব সতর্কতা , চিকিৎসা দরকার। দরকার সর্বস্তরে জনসচেতনতা। এই লক্ষ্যেই আজকের এই মহতী আয়োজন ; যার থিম হচ্ছে ক্রিয়েটিং হোপ থ্রু একশন। আশা জাগাতে হবে। জীবনের পথে, জীবন সাজাতে, জীবন বাঁচাতে ইতিবাচক মন জাগাতে হবে।

সম্প্রতি এ মাসের ১০ তারিখে বিশ্বব্যপী আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন হল এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “কর্মের মাধ্যমে করি আশার জাগরণ”। অসময়ে এই অকাল মৃত্যু রোধ করা । সামাজিক,পারিবারিক সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্য এবারের পদক্ষেপ ।

অনুষ্ঠানে এক ফ্রেমে অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার,অধ্যাপক ড. শাহীন ইসলাম ও অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন------

 

অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,
বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার ২.৭৮% বেড়ে ২০১৯ সালে দাড়িয়েছে ৩.৭% । করোনাপরবর্তী পরিস্থিতিতে সুইসাইড ,আত্মঘাতী প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে।আঁচল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০২১ সালে ১০১জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন । যা ২০২০ সালে ছিল ৭৯।
অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,
আত্মহত্যা প্রবণতার পিছনে মনোসামাজিক,পারিপার্শ্বিক চাপ এবং মানসিকরোগ একটা বড় ভ’মিকা রাখে। বুলিং,নির্ঘুম রাত,প্রেমে সম্পর্কে টানাপোড়েন , বাবামায়ের প্রতি অভিমান,রেজাল্ট খারাপ -শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।
আর মানসিকরোগের কারণেও আত্মহত্যার হার বাড়ছে যা আমাদের অগোচরে রয়ে যাচ্ছে। বিষন্নতা,মাদকাসক্ত এবং সিজোফ্রেনিয়ারোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার আশংকা ৫%-৮% বেশী। সাথে শুচীবায়ুর লক্ষণ, উদ্বিগ্নতা ,ইনসোমনিয়াও দেখা যায়। সাইকোলজিকাল অটোপসীতে দেখা যায় আত্মহত্যাকারীদের ৯০% মানসিকরোগী । সবচেয়ে বেশী ছিলেন মাদকাসক্ত( মদ) আর তারপরেই ৬০% মুড ডিসঅর্ডার বিষন্নতা,বাইপোলার রোগে ভুগছিলেন। আরও দেখা যায় যারা দিনে ৩-৭ঘন্টা ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাদের ৮৮ % বিষন্নতায় ভোগেন।
আরেক জরীপে দেখা গেছে প্রতি ১জন আত্মহত্যাকারীর সাথে গড়ে ১৩৫জন ব্যক্তি জড়িয়ে থাকে। তা হতে পারে নিজের পরিবারের একান্ত আপনজন ,বন্ধুবান্ধব,সহকর্মী ,ক্লাসমেট এবং আরও অনেক নিকটজন । যারা বেঁচে থাকেন তাদের মধ্যে মারাত্মক মনঃপীড়া,কষ্ট,আত্মগ্লানি,লজ্জা,কুসংস্কার, সামাজিক নিন্দার ভয় কাজ করে। যারা এই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারেন না তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন । পরবর্তীতে তাদের মধ্যেও মানসিকসমস্যা বিষন্নতা, পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, আত্মহত্যার চিন্তা / প্রবণতা দেখা দেয়।

 

অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,

আজকে আমাদের এই আয়োজনের উদ্দেশ্যে হচ্ছে সামাজিকসচেতনতা তৈরী করা।
মনোসামাজিক,পারিপার্শ্বিক চাপগুলোকে ণির্ণয় করা আর তা রোধ করার মধ্য দিয়ে এই অকালমৃত্যু রোধ/কমিয়ে আনা সম্ভব ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে মনোরোগের স্ক্রীনিং নিয়মিত চালু রাখা উচিত। যাতে দ্রুত রোগনির্ধারণ এবং চিকিৎসা সম্ভব হয়।
মানসিকরোগকে অন্যান্য শারীরিকরোগের মতই নিয়মিত চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরী।
যারা তাদের নিকটাত্মীয়কে এই অকালমৃত্যুতে হারিয়েছেন তাদের দিকে লক্ষ্য দেয়ার প্রয়োজনীয়তা জরুরী।
প্রয়োজনে পেশাজীবি মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক,সাইকোলজিষ্টদের সাহায্য নিন।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়