SAHA ANTAR

Published:
2022-06-01 20:14:35 BdST

ফ্যাশন ,স্টাইল, রং এবং মানসিক স্বাস্থ্য


অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ কনসালটেন্ট , ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা

 

অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন

মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
কনসালটেন্ট , ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
-------------

ফ্যাশন ,স্টাইল,রং এবং মানসিক স্বাস্থ্য কিছু কখা বলব আজ।
মানুষের পোশাকপরিচ্ছদ ,সাজগোজ তার সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা তৈরী করে।

একজন মানুষ তার স্টাইলে স্বকীয়তা,রুচির পরিচয় দেয়। দেশধর্মকালভেদে তার স্টাইল তাকে অসাধারণ করে তোলে।

আর ফ্যাশন কালের পরিসরে বদলায়। নতুন নতুন চমক আনে । মনের মধ্যে আনন্দ আলোড়ন তৈরী হয় । বুটিক,ফ্যাশন হাউজ , শিক্ষা, মিডিয়া ইত্যাদি যুগে যুগে ফ্যাশন নিয়ে আলোচনা, উচ্চতর লেখাপড়া ,গবেষণা, ব্যবসা করে আসছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও ফুড হ্যাবিট, ফ্যাশন স্টাইলের মধ্যে বৈচিত্র আসছে। ভিন্নতা আসছে। পান্তাভাত আলুভর্তা ছোলা-বেগুনী থেকে আজকে ফুডপান্ডার সমাহার ,প্ল্যাটার ইফতার,সেহেরী আয়োজন আমাদের খাবার পরিবেশন রুচিতে অনেক পরিবর্তন এনেছে।

ফ্যাশন বিভিন্ন যুগ-কালের মধ্যে সংযোগ ঘটায় যা সমাজ পরিবর্তনে খুবই জরুরী। যা সাধারণ মানুষ অনুকরণ করে। আর কেউ যখন মানানসই সাবলীল পোশাক পরেন এবং সেটা ধারণ করেন আত্মস্থ করেন; তখন সেটাই হয় তার স্টাইল ।

একজন মানুষ নিজেকে ভিতরে বাইরে সবদিক থেকে যখন জানবে চিনবে তখন তার নিজস্ব স্টাইল তৈরী হয়। তখন সে তার জন্য মানানসই ; এমন রং, ডিজাইনের পোশাক নিজেই খুজে নেয়। মানুষের মনে থাকে শান্তির ছোয়া , থাকে স্বস্তি ,বাড়ে আত্মবিশ্বাস ।
শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনায় ৬৫ টার মত বিভিন্ন রংএর রিবন পরিধানের প্রথা চালু আছে। ১৮০০ সাল থেকে সবুজ রং দিয়ে মানসিকরোগীদের পৃথক করা হোত। পরবর্তীতে রোগ,রোগী, সংস্থা সহ এবং সমমনাদের একত্রিত করা এবং সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বছরের বিভিন্ন্ দিন,সপ্তাহ,মাস উদযাপন করার পদক্ষে নেয়া চালু হয়। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন শেডের সবুজ রংএর রিবন ব্যবহৃত হয় ।এছাড়া কিছুকিছু রং বিভিন্ন মানসিকরোগের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের জন্য রুপালি ,বাইপোলার রোগীদের জন্য সাদাকালো স্ট্রাইপ, শিশুকিশোরদের ডিপ্রেশন,মুড ডিসঅর্ডার রোগীদের লেমন সবুজ , শুচীবায়ু এবং অন্যান্য উদ্বেগজনিতরোগীদের জন্য টীল রং(সবুজের এক প্রকার শেড) এর রিবন বিশেষায়িত করা হয়েছে।


মানসিক রোগীদের পোশাকে রোগের প্রকারভেদে ভিন্নতা দেখা যায়। সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের পোশাকপরিচ্ছদ নোংরা অগোছালো থাকে। আবার বাইপোলার রোগীদের পোশাক পরিচ্ছদ বেশ রঙ্গীণ গয়নাগাটি বহুল হয়। শুচীবায়ু পারসোনালিটির মানুষ পরিপাটি থাকতে পছন্দ করেন। স্টাডিতে দেখা গেছে সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা তাদের পারসোনালিটি অনুযায়ী খয়েরী রং বেশী আর সবুজ রং কম পছন্দ করে। সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের উজ্জ্বল রং যেমন সবুজ,সাদা পোশাক পরিবেশের কাছে নেয়া এবং চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে কালো রং থেকে দূরে থাকতে উৎসাহী করা হয়েছে।


মানসিক¯স্বাস্থ্য সচেতনায় সবুজ রং কেন নির্ধারণ করা হয়েছে?
সবুজ পরিবেশ মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য সুরক্ষা দেয়। মানসিক চাপ থেকে দ্রুত মুক্তি,হতাশা ,আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। রিসার্চে দেখা যায় সবুজ প্রকৃতি মনে পজিটিভ এফেক্ট ইমোশন তৈরী করতে সাহায্য করে। আর নেগেটিভ ইমোশন দূর করে।

প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে উজ্জীবিত করে। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমাতে সাহায্য করে। মনকে শান্ত করে আর এতে মানসিক চাপ হ্রাস পায়। হৃদরোগ ডায়াবেটিসের আশংকাও কমে। শিশুদের যদি সবুজের মধ্যে বেড়ে তোলা যায় তাদের মনোযোগ,একাগ্রতা বাড়ে। মন উৎফুল্ল থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটে। রিসার্চে দেখা গেছে যে সকল শিশু কম সবুজে বেড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে উদ্বেগজনিত রোগ,শুচীবায়ু, হতাশা ,মুড ডিসঅর্ডার ,নেশাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা ২৮% বেশী।


যা করা যেতে পারে:
প্রতিদিন ১৫ মিনিট সবুজ পার্কে হাটার অভ্যাস করুন। ৩দিনের ছুটিতে গ্রামে ,জঙ্গলে বা রিসোর্টে কাটিয়ে আসুন। ১০ থেকে ৩০মিনিট সবুজের মধ্যে ধ্যানমগ্ন থাকুন।

পৃথিবীতে মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে নিজস্বতা জরুরী । নিজেকে পরিবার,পরিবেশকে আপন রং এ সাজান । ফ্যাশন সাময়িক , বাইরের পরিবর্তনের হাওয় মাত্র । যা সবার জন্য আর স্টাইল শুধুমাত্র নিজের জন্য । স্টাইলিশ ফ্যাশন সচেতন সুস্থ মানসিকতা নিয়ে জীবনকে উপভোগ করুন। #

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়