Ameen Qudir

Published:
2017-02-04 19:04:52 BdST

আসুন , নিজেদের মধ্যেকার কুলাঙ্গারদের তালিকা করি



ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান
_____________________________

charity_begins_at_home

নানাবিধ কারনে চিকিৎসক এবং তাদের পেশা, দুটোই গত ক'দিন ধরে লাইমলাইটে, অবশ্য নেতিবাচকভাবে। দেশের জনপ্রিয়তম সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক তো বলতে গেলে উত্তাল হয়ে উঠেছে গত দু'দিন যাবত। এস এস সি'র বাংলা ১ম পত্রের প্রশ্নের অর্বাচীন মডারেটর তার ইডিয়টিক জ্ঞানের কারনে ষ্টুপিডের মত যে প্রশ্ন সংযোজিত করেছে, তা দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে একটি নির্দিষ্ট পেশার প্রতি যে বিরূপ মনোভাবাপন্ন করে তুলবে, তা বলা-ই বাহুল্য।


স্বাভাবিকভাবেই দেশের চিকিৎসক সমাজ প্রতিবাদমুখর হয়েছেন। তারা কর্মসূচী এবং আল্টিমেটাম দিয়েছেন। বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ২ তারিখেই শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়ে এর প্রতিকারের ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন। স্বাচিপ থেকেও এসেছে প্রতিবাদ। দেয়া হয়েছে কর্মসূচী।
আমি নিজেও আমার ফেসবুক ওয়ালে এটা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছি।

আসছি ভিন্ন প্রসংগে।
চিকিৎসা পেশা এবং চিকিৎসকদের প্রতি অবহেলা বা নেতিবাচক মনোবৃত্তি দেখানোর ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে কেন দিন দিন বেড়েই চলেছে, তার কারন অনুসন্ধান করে দেখেছেন কি কেউ?


আমি একটি ঘটনার উল্লেখ করছিঃ
২০১১'র ঘটনা। মৌলভীবাজার জেলা শহরে একটি প্যাথলজী ল্যাবে মোবাইল কোর্টের অভিযান চলাকালে সেখানে চেম্বার আছে, এমন একজন চিকিৎসক ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে দুপুর দেড়টার দিকে সেই ল্যাবে ঢুকে তার চেম্বারে প্রবেশ করতে গেলে "অফিস টাইমে প্র‍্যাক্টিস করা"র মিথ্যা অভিযোগে তাকে ১ মাসের কারাদন্ড ও সাথে অর্থদন্ড দেয় মোবাইল কোর্ট এবং তাকে তাতক্ষনিকভাবে জেলহাজতে পাঠায়।

অথচ সে আদৌ কোন রোগী দেখেনি কিংবা সেটা চেম্বার টাইমও ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, আগের রাতে নাইট ডিউটি দেয়ার কারনে সেদিন সে "অফ ডিউটি" ছিল।

মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার ও শাস্তির প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবীতে তাতক্ষণিক জেলাব্যাপী সব সরকারী হাসপাতালে অবিরাম কর্মবিরতির ডাক দেয় জেলা বিএমএ।

একই সাথে ডিসি এবং কোর্ট পরিচালনাকারী সেই মেজিষ্ট্রেটকে মৌলভীবাজার থেকে প্রত্যাহারেরও দাবী জানানো হয়। পরদিন সকালে তার জামিন এ্যারেঞ্জ করে দিতে বাধ্য হয় তারা। এর পরেও আরো ৩ দিন চলেছিল কর্মবিরতি। তখন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক রুহুল হক স্যার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জামিন হওয়ার পর তিনি আমাকে ফোন করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেন; আমি বিনীতভাবে তাতে আমার অপারগতার কথা জানাই। পরবর্তীতে জামিন দেয়ার ২ দিন পর সেই মেজিষ্ট্রেটকে প্রত্যাহার করার মধ্য দিয়ে নেগোশিয়েটেড হয় ঘটনা এবং আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। মোবাইল কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের করা আপীলে সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয় এবং সে বেকসুর খালাস পায়।


যে ঘটনাটা উল্লেখ করলাম, এরকম ঘটনার উদাহরন আরো হয়তো আছে, কিন্তু সংখ্যায় সেগুলো নগন্য। আসলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কঠোর প্রতিবাদ না করে করে নিজেদেরকে অন্যের কাছে নির্বিষ ঢোড়া সাপে পরিনত করেছি আমরা। ফলে যা হবার, তাই হচ্ছে। যে যখন যেভাবে ইচ্ছা, সুযোগ পেলেই চিকিৎসা পেশা ও চিকিৎসকদের অপমান করছে।


শেষ কবে শক্ত হাতে প্রতিবাদ করেছে কেন্দ্রীয় বিএমএ, তা আমি ভুলেই গেছি। আপনারা মনে করতে পারেন, কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মবিতির মত শক্ত প্রতিবাদ গত ৮/১০ বছরে বিএমএ থেকে করা হয়েছে কি না? কর্তব্যরত অবস্থায় আমাদের এক ছোটবোনকে ধর্ষন করতে গিয়েছিল এক ক্লিনিক ম্যানেজার; ব্যার্থ হয়ে তাকে হত্যা ই করে ফেললো। চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা "নিরাপদ কর্ম পরিবেশ" নিশ্চিতের জন্য সে সময় বিএমএ'র প্রতি দাবী জানায় চিকিৎসকরা। সেই ঘটনার প্রতিবাদে কোন কঠোর কর্মসূচী কেন্দ্রীয়ভাবে নেয়া হয়নি বিএমএ থেকে।


বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আক্রান্ত ও লাঞ্চিত হয়েছেন শারীরিকভাবে। স্থানীয়ভাবে এর প্রতিবাদে হয়তো ১ বা ২ দিন কঠোর কর্মসূচী দেয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের কেন্দ্রীয় সংগঠন তাতে সম্পৃক্ত হয়নি। এভাবেই, দিনে দিনে আমরা নিজেদের অনৈক্যের পরোক্ষ প্রমান দেখিয়ে এসেছি।

অথচ, পরিবহণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দেখুন, দেশের কোথাও তাদের কেউ গ্রেফতার হলে তারা পুরো দেশটাকেই অচল করে দেয়, এমন ই তাদের ঐক্য!
হ্যা, আমাদের যেটা নেই, সেটা হচ্ছে ঐক্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, আগে নিজের নিরাপদ কর্ম-পরিবেশের নিশ্চয়তা, পরে আমার সার্ভিস।

সবচে' যেটা খারাপ বলে আমার মনে হয়, সেটা হচ্ছে আমাদের হাতে গোনা গুটিকয় সদস্যের আচরণ এবং অভ্যাস। এদের জন্যই পুরো চিকিৎসক সমাজ এবং আমাদের পেশা আজ দূর্ণামের ভাগীদার।


পিঠ কিন্তু আমাদের দেয়াল স্পর্শ করে ফেলেছে! নিজেদের সম্মান ও মর্যাদা পূণঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে "Charity begins at home" এই নিয়ম মেনে। নিজেদের ভেতরের ওই কূলাংগারগুলোকে তালিকাভূক্ত করুন, তাদেরকে আল্টিমেটাম দিন সংশোধিত হওয়ার! প্রয়োজনে প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় "ইথিক্যাল প্র‍্যাকটিস মনিটরিং টীম" গঠন করুন। আর, সময় বেধে নিন নিজের জেলা বা উপজেলাকে কূলাংগারমূক্ত করার। আপনার বিএমএ শাখাকে চাপ দিন এজন্য। পেশার মর্যাদা রক্ষা ও বৃদ্ধির চেষ্টা করা বিএমএ'রই দায়িত্ব।

আরেকটা বিষয় জানিয়ে দিচ্ছি এই সুযোগে। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলোর মেডিকেল প্রমোশনিং বন্ধ করেছি আমরা, আজ প্রায় দুই বছর। কোম্পানীদেরকে আমরা বলে দিয়েছি- প্রত্যেক চিকিৎসকেরই প্রাইভেট চেম্বার আছে, প্রমোশনিং করতে হলে সেখানে, সরকারী হাসপাতালে নয়। এটা আপনারাও ট্রায়াল দিয়ে দেখতে পারেন। আমাদের অনেকগুলো বদনামের ১ টা হচ্ছে সরকারী হাসপাতালে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর প্রতিনিধিরা আমাদের ওয়ার্কিং আওয়ার নষ্ট করে এবং প্রেসক্রিপশন লিখতে গিয়ে আমরা তাদের দ্বারা প্রভাবিত হই। একটু সদিচ্ছা থাকলেই হাসপাতাল কতৃপক্ষ আমাদেরকে এই অপবাদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারে। যারা "কর্তৃপক্ষ" পদে আছেন, চেষ্টা করেই দেখুন না একটু!
আমরা তো পেরেছি মৌলভীবাজারে; আপনিও পারবেন!!

___________________________________

ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান, প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা ,সভাপতি বিএমএ
মৌলভীবাজার। লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়