SAHA ANTAR
Published:2020-11-12 01:21:45 BdST
রোগীকে মাদক নিরাময় ক্লিনিকে ভর্তির আগে আবশ্যিক ৭ সতর্কতা
ডা. সুলতানা এলগিন
জনমনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
কনসালটেন্ট , ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
_____________________
মাদকসেবী কিংবা মানসিক রোগী স্বজনকে মাদক নিরাময় ক্লিনিকে ভর্তির আগে আবশ্যিক ৭ সতর্কতা অবশ্যই পালন করুন।
১. মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যিক। এ ছাড়া কোন অবস্থাতেই আত্মীয় স্বজন কারও পরামর্শে, আত্মীয় কোন ডাক্তারের পরামর্শে কিংবা নিজ সিদ্ধান্তে আপনার স্বজন মাদকাসক্ত বা মানসিক রোগীকে কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেবেন না।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগী কি অবস্থায় আছেন , তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা কতটা জরুরি , সেটা বিচার করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত দেবেন কি করতে হবে। একজন বিশিষ্ট মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ জানেন, কোন ক্লিনিক বিশ্বস্ত। কোনটায় সুচিকিৎসা সম্ভব।
ঢাকা শহরসহ সারা বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মত হাজারও মাদকাসক্তি নিরাময় ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাত্র ডজন খানেক মান সম্পন্ন। সেই মান সম্পন্ন ক্লিনিককে চেনা , জানা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য ডাক্তারদের পক্ষেও সম্ভব নয়।
একজন সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কখনওই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রোগীকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তির কথা বলেন না। তিনি প্রথমে রোগীকে ওষুধপত্র দিয়ে , চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করবেন। তারপরও রোগী বেপরোয়া হলে , মাদক সেবনে অতিরিক্ত আসক্ত হলে তাকে সরকারি হাসপাতাল , ইনস্টিটিউট , তেজগাঁও স্থ মাদক নিরাময় সরকারি কেন্দ্রেনিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন। রোগীর স্বজনরা প্রাইভেট ক্লিনিকে রেখে চিকিৎসায় একান্ত আগ্রহী হলে তাকে ক্লিনিকে নিতে বলবেন।
২.
ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বেশীর ভাগ মাদক নিরাময় কেন্দ্র হাতুড়ে ভুয়া ডাক্তারদের দ্বারা পরিচালিত বলে ব্যাপক অভিযোগ। অনেক কেন্দ্রে ক্লিনিক সাইন বোর্ডের আড়ালে মাদক ব্যবসাও চলে বলে মিডিয়ার অভিযোগ। এ অবস্থায় আপনাকে দালালের বুদ্ধি মত সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না। আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে ক্লিনিকটি মানসম্পন্ন্ কিনা। নিশ্চিত হতে হবে সেখানে প্রকৃত মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসা দেন কিনা। নিশ্চিত হতে হবে ক্লিনিকটি বৈধ কিনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন অফিস সহ সরকারি প্রকৃত অনুমোদন আছে কিনা।
৩.
মাদকসেবী রোগীকে মাদক মুক্ত করা , সুস্থ পথে ফিরিয়ে আনা একটি মেয়াদী চিকিৎসা। এই প্রক্রিয়াও বেশ কষ্টসাধ্য। হাতুড়ে ক্লিনিকে নিলে মঘা, অঘা , বাঘা চিকিৎসালয়ের চিকিৎসাই পাবেন। সাভারে হাড় ভাঙার ভুয়া চিকিৎসা বেশ আলোচিত। মাদক নিরাময়েও তেমন হাজারও ভুয়া চিকিৎসালয় গড়ে উঠেছে। এগুলোতে ভুলেও রোগীকে নেয়া যাবে না।
৪.
সরকারি হাসপাতালে , সরকারি ইনিস্টিটিউটে গেলে দালাল চক্র আপনাকে নানা ভয় ভীতি লোভ প্রলোভন দেখাবে। কিন্তু মনে রাখবেন , সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালেই হয়। বিত্তবানরা আবাসিক নানা সুযোগ সুবিধার জন্য অধিক খরচের ক্লিনিকে যান।
দালালদের কথা হাতুড়ে ক্লিনিকে যাবেন না। সরকারি হাসপাতালে দালালরা নানা ভুয়ো পরিচয়ে আপনাকে ভোলাতে চেষ্টা করবে । তাতে ভুলবেন না।
৫.
মিডিয়ার তথ্যে জানা যায়, কোন কোন ক্লিনিকে আত্মীয়কে মানসিক রোগী সাব্যস্ত করে জোর করে রাখা হয়। অনেক সময় অপরাধীরা মাদকাসক্ত রোগী সেজে লুকিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে প্রকৃত রোগীদের স্বজন ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।
৬.
বেপরোয়া মানসিক রোগী সামলানো বেশ চ্যালেঞ্জের। আপনাকে প্রথমে খোঁজ নিতে হবে , ক্লিনিকে সেসব আধুনিক পদ্ধতি অনুসৃত হয় কি না। নেশাগ্রস্থ রোগী, মাদকাসক্তকে মাদক থেকে মুক্ত করে আনার এখন সর্বাধুনিক চিকিৎসা আছে। ঢাকার হাতে গোনা কিছু প্রাইভেট ক্লিনিকে এই বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা হয় প্রকৃত মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের অধীনে।
কথিত" পাগল চিকিৎসা " পাগলা বাবার দরবারি চিকিৎসা এখন অচল ও অপরাধ।
মারধোর , টর্চার এখন মনোরোগ ও মাদকাসক্তি চিকিৎসায় নিষিদ্ধ। তাই সতর্কতার বিকল্প নেই।
৭.
আবারও বলি, মনোরোগ , মাদক নিরাময় মেয়াদী ও ফলো আপ ভিত্তিক চিকিৎসা। অবশ্যই রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। এজন্য রোগীর স্বজনদের বড় ভূমিকা নিতে হবে। রোগীকে হাসপাতালে / ক্লিনিকে ভর্তি করে রাখলেই সুচিকিৎসা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পাশাপাশি পুরো পরিবারকে রোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে। ক্লিনিক বা হাসপাতাল হল রোগীর বেপরোয়া অবস্থাকে ট্যাকল দিতে। নেশার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি রুখতে।
সেটা স্থিতিশীল হলে রোগীর বাড়িতে ডাক্তারী পরামর্শমত সেবা সম্ভব। সেজন্য পারিবারিক চিকিৎসা পরিবেশও দরকার।
আপনার মতামত দিন: