SAHA ANTAR

Published:
2020-11-07 19:06:13 BdST

ওসিডি রোগীরা কখন নিজেকে সবার চোখের আড়াল করতে চায় ?




ডা. সুলতানা আলগিন


সহযোগী অধ্যাপক মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা।

__________________________


ওসিডি/ শুচিবায়ু রোগের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে বার বার হাতধোয়া ,ফার্ণিচার ঘর ঝাড়ামোছা করা। বারবার চেক করা ,গোণা ইত্যাদি। যা সবাই জানেন। কারণ এই আচরণগুলো দেখা যায়। সবাই তার ভাবনা গুলো বুঝতে পারে। কিন্তু যখন রোগী তার ভাবনা গুলো কারও সাথে শেয়ার করতে পারে না তখন শুরু হয় মানসিক যন্ত্রণা।

এই ভাবনার কারণে যদি মনে হয় আপনার ইহকাল পরকাল দুটোই গেল তখন লজ্জা,নিজেকে চোখের আড়াল করা,আত্মহত্যার মত অস্বাভাবিক চিন্তা পেয়ে বসে। ওসিডি/ শুচিবায়ুর অযাচিত চিন্তাগুলো হচ্ছে ধর্মীয় ও সেক্সুয়াল চিন্তা।
যে ওসিডি চিন্তাগুলো আমাদের সমাজে রোগীদের মধ্যে দেখা যায়:
আল্লাহ আছে কি নাই?
আল্লাহকে গালি দেয়া।
নবীর সেক্সুয়াল লাইফ নিয়ে ভাবনা। নিজেকে বিবি আয়েশার স্থানে ভাবা।
আরবী হরফ দেখলেই মনে হয় কোরান শরীফে পা পরেছে। কোরান শরীফ দেখলে লাথি মারতে ইচ্ছে করে।
পাক-নাপাক নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা / মোহাচ্ছন্নতা।
বারবার ওযু করা ,বারবার নিয়ত করা।


মাথা নীচু করে কিছু নেয়া যাবে না। মনে হয় সে সিজদা করছে। শিরকী করছে।
মৃত্যুর পর দোজখ/বেহেশত নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা। কিন্তু এই পৃথিবীতে তাদের ভাল কাজ করার কোন তৎপরতা নাই।


অন্যের ধর্মীয় আচার অর্চনা দেখলে নিজেকে কাফির মনে করা । এজন্য অস্বাভাবিক আচার আচরণ যেমন টিভি দেখা বন্ধ,অন্য ধর্মের লোকের সাথে কথা বলা বন্ধ । জীবনকে ছোট্ট খুপরীতে আটকে ফেলা।


মূর্তি নদীতে বিসর্জন দেয়া হয় দেখে নদীর মাছ খাওয়া বন্ধ । আসলে মূর্তি মাটির তৈরী। আর কিছুইতো না।


কিছু বললেই মনে হয় কুফরী জাতীয় কোন কথা বলে ফেললাম কিনা? এই সন্দেহে কথা বলা কমিয়ে দেয়া, মানুষের সাথে মেলামেশা এড়িয়ে চলা।
নিজের আপনজনদের দেখলে সেক্সুয়াল চিন্তা আসে। ফলে নিজের বাবামা ভাইবোন খালা মামা চাচা সবার সাথে দূরত্ব তৈরী হয় । কারও সাথে চোখ তুলে কথা বলতে পারে না।
ঘরে,রাস্তায় যেকোন মানুষ পুরুষ বা নারী হোক তার স্তন,যৌনাঙ্গের দিকে নজর দেয়া। বুঝতে পারছে কাজটি ঠিক হচ্ছে না তাও চোখ ফেরাতে পারে না।
সেক্সুয়াল বিষয়ে আলাপআলোচনা করা বা শোনাকে অতিরিক্ত খারাপ ভাবে নেয়া । এতে নিজেরা তাদের বিবাহিত জীবনে চরমভাবে ভোগান্তি, হেনস্তার শিকার হন।
সেক্সুয়াল বিষয়ে চোখের সামনে ছবি ভাসে। চাইলেও সেগুলি সরাতে পারে না।
বাবামার সেক্সুয়াল জীবন নিয়ে ভাবনা এবং নিজেকে নোংরা কাজের প্রোডাক্ট হিসেবে ভাবা। তারা যাতে কোন ভাবেই একসাথে থাকতে না পারেন তার যাবতীয় প্রচেষ্টা ।
কেনহয় ?


এসবের জন্য তারা নিজেকে দোষী ভাবেন। ভাবেন তারা খারাপ। নইলে তাদের এসব চিন্তা কেন আসবে? অন্যদের আসে না। কান্নাকাটি করেন। তওবা কাটেন । বেশী বেশী নামাজ পড়েন। দোয়া পড়েন । নিজে নিজেকে আঘাত করেন। আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। নিজেকে ক্রমশ মানুষের চোখর আড়ালে নিয়ে যান। অথচ তারা জানেন না যে এটা একটা রোগ। এতে তাদের কোন দোষ নেই। ব্রেনের কর্টিকো-স্ট্রায়েটো-থেলামোকর্টিকাল লুপের কাজে অসামঞ্জস্য থাকায় এই সমস্যা তাদের মনের মধ্যে হয়। নিউরোট্রান্সমিটার সিরোটনিন,ডোপামিন,গ্লুটামেট কমবেশি হয়। আর যাদের এই লুপের কাজ স্বাভাবিক তারা এই ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।কারণ নিউরোট্রান্সমিটার তাদের ব্রেনে ¯স্বাভাবিক মাত্রায় আছে। এইসব চিন্তা প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে আসবেই। আড্ডা দিবে। একান্তে ভাববে। কিন্তু এই চিন্তাভাবনা নিয়ে কখনও তারা তাড়িত হন না। বরং হেসে উড়িয়ে দিতে পারেন সহজেই।
কি করণীয়:
চিকিৎসা বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে। জানারও সুযোগ বেড়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিলে ব্রেনের নিউরোট্রান্সমিটারের ব্যালেন্স আসবে । আর সঠিক খাবার ,সুশৃক্সখল জীবনযাপণ,পর্যাপ্ত ঘুম আপনার জীবনে আনতে পারে বেচে থাকার স্বপ্ন।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়