SAHA ANTAR

Published:
2020-09-30 22:50:14 BdST

স্ত্রীকে খুন করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর আত্মহত্যা: কেমন করে প্রতিরোধ করা যায় আত্মহত্যা প্রবৃত্তি


 

ডেস্ক ________________

নিউইয়র্কে বাবা-মার সঙ্গে অভিমান করে আশফাকুল ইসলাম তৃপ্তি নামে এক বাংলাদেশি ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। সাম্প্রতিক ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেছেন সেপ্টম্বরের শেষে ।

আত্মহত্যা প্রবণতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা সারা পৃথিবীতে কম নয়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি সেকেন্ডে বিশ্বে ৪০ জন আত্মহত্যা করছেন।
বাংলাদেশেও আত্মহত্যা একটা প্রধান সমস্যা।
মনে রাখতে হবে, এটা একটি মানসিক রোগ।
আমাদের কাছের কোন স্বজন ভুগতে পারে আত্মহত্যা প্রবণতায় । যার ফলে ঘটতে পারে চরম শোকের কোন ঘটনা। হারাতে হতে পারে ঘরের কোমল কিশোরী কিংবা সুশান্ত সিং রাজপুতের মত চিরসবুজ প্রাণকেও।
প্রশ্ন হল, আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে রেহাই পেতে আপনি কি করবেন । যিনি আত্মহত্যা প্রবণতায় ভুগছেন , তাকে কিভাবে রক্ষা করবেন।

 

খবর ১
____________

নিউইয়র্কে বাবা-মার সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করা আশফাকুল ইসলাম তৃপ্তির লাশ
নিউইয়র্কের হাডসন নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তৃপ্তি নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বরিশাল সদরের আরিফুল ইসলাম তুহিনের একমাত্র সন্তান। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। তার মা আশুরা বেগম এবং বাবা আরিফুল ইসলাম তুহিন ফিলাডেলফিয়ায় বাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তৃপ্তির সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দেয়। একপর্যায়ে ১৩ সেপ্টেম্বর বাবা-মার সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে তৃপ্তি জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন এলমহার্স্টের বাড়ি ছাড়েন। সেটিই ছিল তার শেষ যাত্রা। ২০১০ সালে বাবা-মার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তৃপ্তি।

খবর
২.


যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি দম্পতির গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে তাদের বাসায়; স্ত্রীকে গুলি করে হত্যার পর স্বামী নিজেও আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।

রোববার স্থানীয় সময় সকালে অ্যারিজোনা স্টেটের ফিনিক্স সিটির লাভিন এলাকার এ ঘটনা স্থানীয় কমিউনিটিতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

আবুল আহসান হাবিব (৫২) ও তার স্ত্রী সৈয়দা সোহেলী আকতার চায়না (৪৩) পারিবারিক ভিসায় দুই ছেলেসহ যুক্তরাষ্ট্রে এসে ২০০৮ সালে অ্যারিজোনায় থাকতে শুরু করেন। তাদের বাড়ি বাংলাদেশের মাগুরায়।

ফিনিক্স পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতির মৃত্যুর ঘটনা তারা তদন্ত করে দেখছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, মহামারীর সঙ্কটে বেকারত্বের গ্লানি আর দাম্পত্য কলহই ওই দম্পতির করুণ পরিণতি ডেকে এনেছে।

ফিনিক্স সিটির বাসিন্দা ফোবানার প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব রেজা রহিম জানান, হাবিব একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। আর চায়না একটি বিউটি পারলার চালাতেন। কিন্তু মহামারীর মধ্যে দুজনেই কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন।

“এই অবস্থায় ঝগড়া-ঝাটির এক পর্যায়ে রোববার সকালে চায়না স্বামীর আচরণের বিচার চেয়ে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ তাদের বাসায় পৌঁছানোর আগেই হাবিব সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পুলিশ তখন চায়নাকে অনুরোধ করে যেন তিনি সোমবার কোর্টে গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে একটি প্রোটেকশন অর্ডার নেন।”


পুলিশ যখন বাসায় আসে, চায়নার বড় ছেলে হাসিবও (২৫) তখন সেখানে ছিলেন। পুলিশ চলে যাওয়ার পর হাসিব স্থানীয় একটি দোকানে যান খাবার কিনতে। তখনই আবার বাসায় ফেরেন হাবিব।

মাহবুব রেজা রহিম বলেন, “স্বামী ফেরায় আতঙ্কিত হয়ে চায়না ছেলেকে বিষয়টি জানান। তারপর পুলিশকেও আবার ফোন করেন। মায়ের ফোন পেয়ে হাসিব দ্রুত বাসায় ফেরেন। তার আগেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে যায়। তারা সেখানে হাবিব ও চায়নাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশের সাথে আসা অ্যাম্বুলেন্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।”

ফিনিক্স পুলিশের মুখপাত্র সার্জেন্ট টমি থমসন বলেন, পুলিশ অপারেটর যখন চায়নার সাথে কথা বলছিলেন, তখনই তিনি দুটি গুলির শব্দ পান। পুলিশ দ্রুত সেখানে গিয়েও মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি হাবিবের লাশের পাশেই পড়ে ছিল। পুলিশের ধারণা, হাসিব বাসার বাইরে যাওয়ার পরপরই হাবিব বাসায় ফেরেন এবং চায়নাকে গুলি করে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেন।

ফিনিক্স সিটিতে চায়নার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীও থাকেন। তার দুই ছেলে ফিনিক্সেই মা-বাবাকে দাফন করতে চান। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পেলেই দাফনের ব্যবস্থা করা হবে বলে ওই পরিবারেরর স্বজনরা জানিয়েছেন।

 

আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে রক্ষায় ৫টি পরামর্শ

 

 

ডা সুলতানা আলগিন


সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা
কনসালটেন্ট ওসিডি ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আত্মহত্যা রোধে ৫টি পরামর্শ দিয়েছেন।



১. মনোবল হারাবেন না। মনোবল দৃঢ় রাখুন। দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন্ মানুষকে সম্মান করুন।
আত্মহত্যা প্রবণতাকে না বলুন। এমন কিছুই ঘটে নি , যাতে এই সুন্দর তম পৃথিবীতে ছাড়তে হবে। আত্মহত্যা করলে এমন সবুজ সুন্দরতম পৃথিবী আর মিলবে না। বেঁচে থাকাতেই আনন্দ।

২. যে সঙ্কটের জন্য আত্মহত্যা প্রবণতায় ভুগছেন , তার কারণ ও দুর্বলতা খুঁজে বের করুন। নিজেকে জয় করুন। সেই কারণকে জয় করুন। আপনার চেয়ে মহান ও শক্তিমান ব্যক্তি পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আপনি চেষ্টা করলে আপাত: অসম্ভবকে জয় করতে পারবেনই ।


৩. প্রত্যাশা ভঙ্গের যন্ত্রণায় , বিষাদে ভেঙে পড়বেন না। আপনি কেন ভেঙে পড়বেন। ভেঙে পড়ার মত কিছুই ঘটে নি। যে প্রত্যাশাটি করছেন , সেটার জন্য আপনি উপযুক্ত কিনা, সেটা ভাল করে যাচাই করুন। নিকট জনের সঠিক পরামর্শ নিন।
যদি মনে করেন , সেই প্রত্যাশার আপনি উপযুক্ত; তবে মন দিয়ে চেষ্টা করুন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি , আপনি সফল হবেনই, হবেন।
আর যদি যাচাই করে দেখেন, আপনি উপযুক্ত নন, তবে অমন অনপুযুক্ত কাজ আপনি কেন করবেন। দৃঢ়চিত্তে তা ত্যাগ করুন। নিজেকে জয় ও রক্ষা করুন।



৪. মাদক দ্রব্য, মদ ও সমজাতীয় ক্ষতিকর থেকে দূরে থাকুন। ত্যাগ করুন।

৫. নিজের ঘরকে সুন্দর রাখুন। আপনার অর্থনৈতিক সাধ্য অনুযায়ী সুন্দর ও পরিপাটি রাখুন। ঘরে ক্ষতিকর কোন কিছু রাখবেন না। কাউকে আঘাত দেবেন না। তেমনি মনকে সক্ষম রেখে অন্যের কোন কাজে কাবু হবেন না।

সবশেষে আত্মহত্যা প্রবনতাকে আমলেই নেবেন না। আপনি একজন সক্ষম , দৃঢ় , উৎকৃষ্ট মানুষ। যোগ্য মানুষ। আপনার ক্ষমতা ও সাধ্যি সম্পর্কে আপনি সচেতন। মনে রাখবেন , আত্মহত্যা প্রবণতায় ভোগার মত কোনকিছুই আপনার জীবনে ঘটে নি।

 

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়