SAHA ANTOR
Published:2020-09-14 01:52:25 BdST
১২তলার খোলা বারান্দায় বসে নেশা করে স্বামী: আত্মহত্যার ভয় দেখায়: প্রতিরোধের ৭ পয়েন্ট
ডা সুলতানা আলগিন
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা
কনসালটেন্ট ওসিডি ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
______________________
কখনও কখনও রোগীদের বিপন্ন সব সমস্যার কথা শুনে চিকিৎসক হিসেবে মন খারাপ হয়ে যায় আমাদেরও। 
মেয়েটার স্বামী একটি বেসরকারি কম্পানির মস্ত বড় চাকুরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানা উচ্চতর শিক্ষা ছেলেটির। 
মেয়েটিও বিদেশী ব্যাঙ্কের বড় চাকুরে। সেও পড়ে এসেছে লন্ডন থেকে। সিঙ্গাপুরেও জব করেছে। ঢাকায় দম্পতি সংসার পাততেই যত গন্ডগোল। না, এতে ঢাকা বা বাংলাদেশের কোন দোষ নেই। 
অভিজাত এলাকায় ১২ তলায় তাদের ছিমছাম মস্ত এপার্টমেন্ট। খোলামেলা । আকাশ যেন হাতের কাছেই। 
কিন্তু সুখ নেই। 
স্বামী বেচারা নিয়মিত নেশা করে। নেশা করেই চাকুরি সামলাচ্ছে। কোন অসুবিধা হয় না। 
কিন্তু ঘর সামলাতে পারে না। 
সপ্তাহে দুদিন ছুটি তার। অফিস যেন নেশা করতেই দুদিন ছুটি দিয়েছে। এই দুদিন সে নেশায় চুর হয়ে থাকে। বিশাল বড় খোলা বারান্দায় বসে নেশা করে। বেডরুমে আসে না। সারারাত থাকে বারান্দাতেই। 
বউ কিছু বললেই সে ভয় দেখায় , এক লাফ দিয়ে নিচে পড়ে আত্মহত্যা করবে। সব শেষ করে দেবে। 
সারা রাত বউও ঘুমাতে পারে না। তার ভয়, কখন স্বামী বেচারা লাফ দিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করে! 
বিষয়টি বউ ও স্বামীর পরিবার সবাই জানে। 
স্বামীর পরিবারের এক কথা, বউটার দোষ। যদি কখনও তাদের ছেলে সুইসাইড করে, তবে তাদের ছেলেকে হত্যার মামলা দিয়ে মেয়েটিকে যাবজ্জীবন জেল খাটাবে। ছেলে মরলে বউটাও থাকবে জেলে। 
এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কোন সুস্থ মানুষের ঘুম আসে। 
স্বামী তবু নেশা করে পড়ে পড়ে ঘুমায়। কিন্তু বউটার রাত কাটে ঘুমহীন। 
এই দম্পতিকে আমি কাপল থেরাপি দিচ্ছি। দরকারি ওষুধপত্র দিচ্ছি। আশা করছি, ছেলেটি কথা শুনলে নেশার ঘোর কাটবে। তার সুস্থতা সম্ভব হবে সুচিকিৎসায়।
চিকিৎসার মাঝেও বউটা মাঝরাতে ফোন করে আমাকে। বলে, এই বুঝি , তার স্বামী ঝাঁপ দিয়ে পড়ল। 
এই অবস্থায় কি করণীয়! 
এই সমস্যা আরও অনেক পরিবারে । সত্যিই তো , এমন অবস্থায় কি করণীয় ! সাধারণ কমন পরামর্শগুলো বলছি।
করণীয় ১ : 
এ ধরণের আত্মহত্যা প্রবণ রোগীর জন্য ১২ তলার বাড়ি , ফ্লাট, খোলা বারান্দা কখনও নয়। 
২. দম্পতির বউটাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে কোন লাভ নেই। সন্তানের বাবামার উচিত , সন্তানকেও বোঝানো। নিজেরাই নিয়মিত ফেমিলি কাউন্সেলিং করা।
৩. মনোরোগ চিকিৎসকের চিকিৎসা না নিয়ে ফেমিলি কুস্তি, মামলার ভয় একদম হারাম।
৪. মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাপল থেরাপি যেমন দরকার , তেমনি সাইকিয়াট্রির জাজমেন্ট , দরকারি ওষুধ চাই। 
৫. নেপথ্যের কারণ জানা চাই। সে অনুযায়ী দেওয়া হবে চিকিৎসা। নেশাসক্তর নেশারোধী দাওয়া চাই। 
৬. এ ধরণের রোগীদের ব্যাপারে শুধু স্ত্রী নয়, বাবা মা-ও হবেন সতর্ক। আকাশের বুকে খোলা বারান্দা, সিলিং ফ্যান : আত্মহত্যা করতে সহায়ক বিষয় থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে। 
৭. রোগীর সঙ্গে ঝগড়া কোন সমাধান নয়। তার জন্য সারারাত জাগাও কোন সমাধান নয়। সমাধান হল প্রয়োজনীয় যথার্থ মেডিকেশন।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       