DR. SULTANA ALGIN

Published:
2020-07-15 20:30:46 BdST

মাসিকের মানসিক বিড়ম্বনা : প্রিমিন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার: যা করণীয়


 

ডা. সুলতানা আলগিন


সহযোগী অধ্যাপক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

______________________


মেয়েদের মাসিক হওয়া তার স্বাভাবিক প্রজনন স্বাস্থ্যের অংশ। এর কারণে মেয়েরা মাতৃত্বের সুযোগ পায়। মাসিক হওয়াটা কাঙ্খিত ব্যাপার। এ নিয়ে কিছু মানসিক ও শারিরীক সমস্যারও সৃষ্টি হয়। কারও কারও মাসিক শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে এই সমস্যাগুলো শুরু হয় । আর মাসিক শুরু হয়ে গেলে ২-৩দিনের মধ্যে কমে যায় । প্রচন্ড কষ্ট হয় । একে প্রিমিন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার বলে । বর্তমানে এটা মানসিক রোগ হিসেবে গণ্য করা হয় ।
অন্য ডিসিপ্লিনের কোন কোন চিকিৎসক এই মানসিক সমস্যার দিকগুলো আমলে নেন না। ফলে অনেকে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন।

মানসিক প্রভাব
____________
১. মেয়ে হয়ে কেন জন্ম নিলাম। প্রতি মাসে এই কষ্ট সহ্য হয় না। এটা কি আজীবন সহ্য করতে হবে!
২. ছেলে হয়ে জন্ম নিলেই ভাল হতো।
৩. ইউটেরাস অপারেশন করে ফেলে দিলে ভাল হতো। অনেকে এদরণের চিন্তায় ক্রেজিও হয়ে পড়ে।

লক্ষণসমূহ:
মুড সুইং বা মনের ভাবের অস্থিরতা,বিষন্নতা,হতাশা,প্রচন্ড রেগে যাওয়া,অকারণে দ্বন্ধে লিপ্ত হওয়া, মেজাজ খিটমিটি ,কাজে অনীহা,দুর্বলতাবোধ,খাবার রুচিতে অনীহা,নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা,ঘুমের সমস্যা,হাতপা কামড়ানো,পেট ভরা ভাব,জয়েন্টে/পেশীতে ব্যথা,স্তনে ব্যথা ভার ভার ভাব,হট ফ্লাশ ইত্যাদি

কেন হয় ?
মাসিকের সময় হরমোনের ব্যালেন্স পরিবর্তিত হয়।তখন শরীরে নিউরোট্রান্সমিটার সিরোটনিনের মাত্রা কমে যায় । আর এই সিরোটনিন মানুষের মুড,ঘুম,মেজাজ,বিষন্নতা নিয়ন্ত্রণ করে।

কাদের হয় ?

রিপ্রোডাক্টিভ লাইফ বা প্রজননক্ষম জীবনে প্রায় তিন চতুর্থাংশ মহিলাই এই সব লক্ষণ তাদের পিরিয়ডের সময় অল্পবিস্তর ভুগে থাকেন । তবে এই রোগে ভোগেন ১.৮ %- ৫.৮% মহিলা। কিন্তু যখন এই লক্ষণগুলো সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যায় তখন মেয়েদের কষ্টের সীমাপরিসীমা থাকে না। তাদের ঘরসংসার, দাম্পত্যজীবন,পড়াশোনা , অফিস, সামাজিকতা সবকিছুই তখন ব্যহত হয়। মাসের পর মাস এই কষ্টে ভুগতে ভুগতে অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায় । আত্মহত্যার প্রবণতা এই রোগীদের মধ্যে অন্যদের তুলনায় ২.৮গুণ বেশী। এছাড়া বিষন্নতা রোগ, প্যানিক ডিসঅর্ডারও দেখা যায় ।
বংশগত কারণেও হতে পারে। পরিবারে মা,বোন কারও যদি থাকে তবে সম্ভবনা আছে। কারও নিজের বা বংশের কারোর প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন হয়ে থাকে তাদেরও এই রোগ হতে পারে।

কি করণীয় ?
খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন বেশ সুফল দেয়। যেমন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন সিম বরবটি ব্রকলি সবুজ শাকসব্জী খেতে হবে।
দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার , বাদাম খেজুর ও প্রচুর পানি পান করতে হবে।
কৌটা খাবার বাদ। কফি,বেশি মিষ্টিজাতীয় বাদ।
যোগ ব্যায়াম , মেডিটেশন , রিল্যাক্সেশন থেরাপি বেশি করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম চাই।

মাথায় রাখতে হবে এটা মানসিক রোগ। গাইনেকোলজিষ্ট এর পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আপনাকে নিতেই হবে। এখানে দ্বিধাদ্বন্ধ ঝেড়ে ফেলে দিন । চিকিৎসা নিলে আপনি আপনার পরিবার সুস্থ থাকবে । আপনার জীবন সফলতায় ভরে উঠবে।

 

 

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়