ডাক্তার প্রতিদিন
Published:2020-05-12 16:59:43 BdST
করোনাকালে ওসিডি রোগীদের জন্য বিশেষ জরুরি পরামর্শ
ডা. সুলতানা আলগিন
সহযোগী অধ্যাপক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
ওসিডি কনসালটেন্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা
_____________________________
ওসিডি বংশানুক্রমিক রোগ। আপনি অনেক দিন থেকে এই রোগে ভুগছেন। আপনার কারণে আপনি নিজে বা আপনার আত্মীয়¯স্বজন প্রতিবেশী বা অনাত্মীয় কেউ মৃত্যূভয়ে আতঙ্কিত নন। আপনার ওসিডি আপনাকে একটা ভুল অযৌক্তিক চিন্তার দ্বারা তাড়িত করে। যাকে আপনি চাইলেও মাথা থেকে সরাতে পারেন না। আর তারই কারণে আপনি ধোয়াধুয়ি,গোসল করা ,বাথরুমে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন। আপনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে আপনার পরিবার আপনার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপনার এই আচরণ আপনার পরিবারের বা সমাজের আর কেউ করছে না। আপনাকে বাধা দিলে আপনি রাগ করছেন । ঝগড়া করছেন। খাওয়াদাওয়া ঘুম সবকিছুরই ব্যঘাত ঘটছে। ওসিডির ক্ষেত্রে শুধু আপনিই আইসোলেশনে থাকছেন। পরিবার থেকে সমাজ থেকে একমাত্র আপনারই সামাজিক দূরত্ব শারীরিক দূরত্ব বাড়ছে। আপনার দ্বারা করোনার মত কারও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা নাই।আপনার অজান্তেই আপনি ঘরবন্দী হয়ে পড়ছেন।
আপনি ক্রমশ অন্যান্য মানসিক রোগ যেমন ডিপ্রেশন , ফোবিয়া ,প্যানিক ডিসঅর্ডারের মত রোগে ভুগতে পারেন। নিজেকে আঘাত করার বা আত্মহত্যার প্রবণতাও আপনার মধ্যে দেখা দিতে পারে। সাথে যদি অন্যান্য শারিরীক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ থাকে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিলেও এসব রোগ নিয়ন্ত্রনে আনা কঠিণ হয়ে পড়ে।
ওসিডির চিকিসা বিভিন্ন ওষুধ,সাইকোথেরাপী ,শৃংখলার মধ্যে থেকে করা হয়। আর করোনা ভাইরাস জনিত রোগ। তার প্রতিরোধে এখনকার নিয়মবিধিগুলো সবাইকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যাতে কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন বেড়ে না যায়। এখানে সমাজের প্রতিটি লোক ভালনারেবল। আপনার অজান্তেই আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। করোনা কোন চিন্তাজটে ঘুরায় না।
ওসিডির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা:
ওষুধ :যেমন- এস.এস.আর.আই. গ্রুপের ওষুধ এবং অন্যান্য
সাইকোএডুকেশন : রোগী ও তার পরিবারকে রোগ সম্পর্কে জানানো । তাদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করা।
সাইকোথেরাপী : এক্সপোজার এন্ড রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপী, শাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন থেরাপী,রিলেক্সেশন থেরাপী,কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপী
এছাড়াও যা করণীয় ঃ
১। পর্যাপ্ত ঘুম ২। নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ৩। সঠিক খাদ্যাভাস ৪। নিয়মিত ব্যায়াম ৫। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি।
নিম্নলিখিত সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাবারগুলি নিয়মিত খাওয়া উচিত ----
* আমিষ জাতীয় খাবারঃ মাংস, কলিজা, ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ।
* ফলমুল জাতীয় খাবারঃ কলা, আনারস, আম, আঙুর, খেজুর।
* শাকসবজিঃ পালং শাক, পুই শাক, বেগুন, ফুলকপি, শিম জাতীয় বীজ, মাশরুম, টমেটো, ব্রকলি।
যে সকল খাবার কম / খাবেন না ----
মিষ্টি জাতীয় খাবার, ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন-চকলেট, চা, কফি, সফ্ট ড্রিংকস, ক্যাফেইন যুক্ত কিছু ওষুধ, মদ জাতীয় পানীয়, কৌটায় সংর¶িত খাবার।
যা মনে রাখবেন :
অন্যান্য শারিরীক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ চিকিৎসার মাধ্যমে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ঠিক তেমনি এই ওসিডি রোগটিও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। এইসব আচরণসমূহকে ¯স্বাভাবিক না ভেবে কমিয়ে আানতে চেষ্টা করুন। সচেতন হন। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আর করোনা হচ্ছে সাময়িক ভাইরাসজনিতরোগ। বিশ্ববাসী এখন ভ্যাকসিনের আশায় দিন গুণছে। সার্স,মার্স,প্লেগ,কলেরা ,গুটিবসন্ত যেমন মহামারী আকার ধারণ করেছিল এটাও তেমনি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেক বেশী ছোয়াচে। এর প্রভাব কতদিন থাকবে বলা যাচ্ছে না। কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন কমাতে, মানুষের মৃত্যুর আশংকা কমাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। সচেতন হোন । নিজে এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখুন।
AD.
আপনার মতামত দিন: