Ameen Qudir

Published:
2019-08-05 20:00:30 BdST

ফেসবুকে ইনবক্স ইভটিজাররা কি মানসিক রোগী না ক্রিমিনাল!


 

 

 

ডা. সুলতানা আলগিন
___________________

সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,
কনসালটেন্ট, ওসিডি ক্লিনিক।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
____________________


যারা ফেসবুকে ইনবক্সে নারীদের টিজিং করে, উত্যক্ত করে , তারা কি মানসিকভাবে সুস্থ। ইদানিং মিটু সহ নানা নারী আন্দোলনের কারণে চাপা পড়া অনেক সত্য বেরিয়ে আসছে। অনেক সাহসী নারী এই ইনবক্স টিজারদের ছবি ও স্ক্রিন শট দিয়ে সবার সামনে মুখোশ খুলে দিচ্ছেন। অনেক সামাজিক ও পেশা সংগঠনও নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। প্রহসন হল , ধরা পড়ার পর এই ইভ টিজাররা বেশীর ভাগ বলছেন, তাদের একাউন্ট হ্যাকড হয়েছিল। খুবই ফালতু অজুহাত।
আবার অনেক সময় ইভ টিজাররা দাবি করছেন , তারা মানসিক রোগী। চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেখেয়ালে কাজগুলো করছেন। যে মানসিক ডাক্তারের চিকিৎসা নিচেছন , তার প্রেসক্রিপশনও দেখাচ্ছেন।
এখন আমরা এই ইনবক্স টিজারদের মানসিক রোগী বলে ধরে নেব কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন। আদৌ তারা মানসিক রোগী না ক্রিমিনাল , সেটা যাচাই করবার উপায় কি।

 

একটি নজির
________________


সম্প্রতি ডাক্তারদের ফেসবুক সংগঠন BDF এমন এক ডাক্তার ইভ টিজিংকারীকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরে ব্যপক তোলপাড় তুলেছে। আমি তাদের লেখা থেকে ইভটিজারের নাম পরিচয় না বলে কাহিনিটা তুলে ধরছি।

BDF কর্মীরা ওই ইভ টিজার সম্পর্কে বলছে:
সে SZMC 19 batch. Session 2009-2010 এর শিক্ষার্থী ছিল।

চিকিৎসক মহলে ইতিমধ্যেই তার কুকর্মের কারনে সে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে গত দুদিনে।
মি টু এর কথা মনে আছে তো?
ব্যাপারটা অনেকটা ঐ রকম। একজন নারী চিকিৎসক অপর লিঙ্গের চিকিৎসক দের দ্বারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর ম্যাসেন্জারে হ্যারাজমেন্ট এর ঘটনা শেয়ার করার পরে উঠে এলো এই ডাক্তারের নাম।
শতাধিক নারী চিকিৎসক BDF এর কাছে এই ডাঃ এর বিরুদ্ধে ম্যাসেন্জারে আপত্তিকর বার্তা পাঠানোর এবং হ্যারাজমেন্ট এর অভিযোগ জানান।
বিষয় টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ডাঃ এর ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয় BDF.

তার ব্যাচমেট এবং সহপাঠী দের মাধ্যমে জানা গেল নানা ধরনের অপরাধের সাথে ছাত্র জীবনে ও জড়িত ছিল সে। তার বিরুদ্ধে ইভটিজিং এর অভিযোগ ও পুরনো। এমনকি ২০১৪ সালে পিকেটিং এর সাথে জড়িত থাকাতে ফৌজদারি মামলা তে জেল ও খেটেছে সে।
BDF প্রতিনিধি তার সাথে টেলিফোনে এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। এমনকি লিখিত বক্তব্য ও দেয়।
তার অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং এত বিপুল সংখ্যক নারী চিকিৎসক কে হয়রানির অভিযোগ থাকায় BDF তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ইভটিজার ডাঃএর বিরুদ্ধে BMDC এবং কেন্দ্রীয় BMA এর কাছে লিখিত অভিযোগে দাখিল করে।

সে নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ দাবী করলে BDF তাকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে সাহায্যের আশ্বাস দেয়।

 

এখন করণীয় কি : এই ইভটিজারদের মোকাবেলায় কি করা দরকা র
____________________

প্রশ্ন হল , এই ইভ টিজারদের মানসিক রোগী বলা যাবে কিনা।
এটা মান্যতা দেয়া যায়, এ ধরণের ইনবক্স ইভ টিজিং স্বাভাবিক কাজ নয়। এরা কেউ মনোবৈকল্যের শিকার হতে পারে।
তবে অনেকে ক্রিমিনাল প্রবৃত্তির বশে কাজটি করে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
এই দুই গ্রুপকেঅআলাদা করা হবে কেমন করে !
এটা সচেতনতার ব্যপার।
এই সচেতনতা রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের দুতরফেই দরকার। রোগী এ ধরণের কাজ যখন করছেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞর শরণ নিতে পারেন।
সেটা তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরুর পর নয়। যদি সেটা হয়, তবে ধরে নিতে হবে, ক্রিমিনাল অফেন্স এড়াতে কৌশলগত কারণে তা করছেন। সেটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়।
তাই বলে কেউ কেউ মানসিক বৈকল্যের কারণে তারা করছেন না, এটাও জোর দিয়ে বলা যায় না।
এদের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন। এখন এধরণের অপকর্ম অপরাধ অপস্বভাব যেমন বাড়ছে। তেমনি এসব নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ধরা পড়ার নজিরও বাড়ছে।
এই অপস্বভাবীদের তাই সামাজিক অপদস্থ হওয়ার বড় ঝুঁকি থাকছেই।
তাই এই রোগ সারিয়ে নেয়াই ভাল।
যার এই ধরণের অপস্বভাব আছে, সে নিজে আত্মসচেতন হয়ে ডাক্তারদের কাছে আসতে পারেন।
রোগীর এই অপস্বভাব সম্পর্কে তার বন্ধু স্বজনদের জানার কথা। তারাও এটা জানলে যত দ্রুত সম্ভব , তাকে চিকিৎসা নেওয়াতে পারেন।
এই ক্ষেত্রে রোগ বিস্তারে কোন উপকার নেই। আছে অপকার। রোগ ভাল নয়। রোগ উপশমই উত্তম।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়