Ameen Qudir
Published:2018-02-24 18:02:39 BdST
" মেয়েদের দেখলে আমার কু চিন্তা আসে; বিয়ে করে সংসার করবো কিভাবে "
ডা. সুলতানা আলগিন ।
সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। কনসালটেন্ট, ওসিডি ক্লিনিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
_________________
৪০বছর বয়সী একজন ভদ্রলোক এলেন । কাপড়চোপড় একটু নোংরাই বলা চলে। অবিবাহিত। অস্থিরতা তার মধ্যে কাজ করছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম । কোন তাড়া আছে নাকি?
ভদ্রলোক বললেন না। তাড়া নেই।
তবে?
উনি জানালেন ,“ আপা, আমি প্রায়সময়ই অস্থিরতায় ভুগি। কিন্তু প্রচন্ড অলসতা কাজ করে। আমি একজন ভাল সুইপার। কারও কোন কাজ আমার পছন্দ হয় না। বাসার তেলাপোকা টিকটিকি ধুলাবালি ঝুল কোন কিছুই আমার চোখ এড়ায় না। কমোড থেকে শুরু করে রান্নাঘর পর্যন্ত আমিই সাফসুতরো করে রাখি।
আমি বলি আপনার পোশাক দেখে তা কিন্তু মনে হয় না।
আপা আমার চারদিক পরিষ্কার করতে গিয়ে নিজের পরিচ্ছন্নতার সময় হারিয়ে যায়। সবশেষে যখন নিজের জন্য বুঝি সময় দেয়া দরকার তখন আলসেমী পেয়ে বসে। যাইযাই করেও আর গোসল করতে ইচ্ছে করে না। তবে যখন গোসলে ঢুকি কমপক্ষে ৩ঘন্টা। সকালে অফিসের জন্য যখন রেডী হই তখনও আলসেমী কাজ করে। ২ঘন্টার মত সময় লেগে যায় প্রতিদিন। বেসরকারী অফিস। সহ্য করবে কতদিন? মানুষের কথাশুনতে ভার লাগে না। অগত্যা চাকুরী ছেড়ে দেই।
নামাজ আমি মসজিদেই পড়তাম । কিন্তু মনের মধ্যে আশংকা কাজ করলো যদি ১টা লোমও শুকনা থাকে আমার ওযু হবে না। ফলে নামাজও হবে না। পাশে দেখতাম ৫-৭জন লোক ওযু করে চলে গেছে আর আমি লোম ভেজাতে ব্যস্ত। এভাবে করতে করতে দেখলাম লোকজন আমাকে দেখে মুখ টিপে হাসে । এখন আর মসজিদে যাই না । নামাজও আর ঠিকমত পড়া হয় না।
বললাম বিয়ে করছেন না কেন ?
আমার সাথে কেউ এডজাস্ট করতে পারবে কি না-- এই বলে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়েন ভদ্রলোক।
বলেন, আমি চিন্তা করি, এরকম সুইপারের সাথে কেউ সংসার করতে রাজী হবে কি না ? এখনতো কাজের লোক পাওয়া যায় না। আমি রাজী আপা। সংসারের কাজ না হয় আমিই করলরাম।এখন কর্মজীবি পাত্রীর খোজ করতে হবে আপা। লোকে বলবে হাউজহাজব্যান্ড । বাসায় কাজের লোক আছে কিন্তু নামে মাত্র। রান্না আমার মা করে। হাসতে হাসতে বলেন ভাবছি রান্নার ট্রেনিংটা নিয়ে নিব কিনা।
আপা অরেকটা সমস্যা আছে। মেয়েদের দেখলে আমার কুরুচিপূর্ণ চিন্তা আসে। সহজে সরাতে পারি না । একজন ভদ্রমহিলাকে নিয়ে যদি এরকম চিন্তা হয় তবে বিয়ে করে সংসার করবো কিভাবে ?
এবার উনার মুখটা মেঘে ঢেকে যায়। বিমর্ষ হয়ে পড়েন।
বললাম দুশ্চিন্তার কিছু নাই। চিকিৎসা করলে সুস্থ থাকবেন। কমপক্ষে নিয়ন্ত্রণে থাকবে আপনার সমস্যা। আপনার এই ওসিডি রোগটি সম্পর্কে ধারণা আছে, ইনসাইট ভাল । আপনার সুস্থতা আশা করি তাড়াতাড়ি আসবে ।
তবে “থ্রি ডি”-- ড্রাগ,ডায়েট,ডিসিপ্লিন -- মেনে চললে উপকার পাবেন ।যদিও ব্যপারটি সময়সাপেক্ষ। ঠিকডোজে ওষুধ,সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাবার আর শৃংখলাপূর্ণ জীবনযাপন আপনাকে সুস্থজীবন পেতে সাহায্য করবে।
__________________
কতগুলো কমন অজুহাত আছে ।
যেমন *একটু ভাল বোধ করলে ওষুধ আনার কেউ ছিল না বা পাওয়া যায় নাই বা *আপনার কাছে আসার সময় হয়ে গেছে তাই নতুন কোন ওষুধ যদি দেন আর কেনা হয় নাই। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে কোন ওষুধ চলবে কোনটা কতদিন পর বন্ধ হবে তারা কেউ একবারও চোখ বুলায় না বা কাউকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করে না। আবার ওষুধ বাজারে কিনতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা নিয়মিত একটা ব্যপার। অথচ প্রথম দিনের ইন্টারভিউটা যে কত প্রয়োজনীয় বুঝতে চায় না।
ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
___________________________
কিছু দরকারি পরামর্শ
বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম
।
________________________
প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?
একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।
লেখার সৌজন্য
ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
আপনার মতামত দিন: