Ameen Qudir

Published:
2018-02-17 17:48:15 BdST

ওসিডি ডায়েরি ১৭আপা, ৬মাসের মধ্যে যদি ৬বার বাসা বদলাতে হয়; কি যে যন্ত্রণা


 

 

 

 

ডা. সুলতানা আলগিন ।
সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। কনসালটেন্ট, ওসিডি ক্লিনিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

__________________________

স্বামী-স্ত্রী একসাথে ঢুকলেন। কথায় কথায় বোঝা গেল স্বামী স্ত্রীর উপর বিরক্ত। লোকটি পেশায় ব্যবসায়ী । সারাক্ষণ ব্যস্ততার মাঝে থাকেন।বিয়ে হয়েছে বছরখানেক। এখন আলাদা সংসার করার দরকার। উনি বলেই ফেললেন আপা ৬মাসের মধ্যে যদি ৬বার বাসা বদলাতে হয় তাহলে আমার ব্যবসা লাটে উঠবে।


কেন বাসা বদলান?
ভদ্রলোক স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন প্রত্যেকবার উনি নিজে দেখেশুনে পছন্দ করে বাড়ী ভাড়া নেন। সপ্তাহখানেক না যেতেই অস্থির হয়ে ওঠেন। তার এই বাসা ভাল লাগছে না । বাসা বদলানো কত ঝক্কির কাজ। সংসার ছোট। জিনিষপত্র কম। কিন্তু ঝামেলাতো একই। জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর দেয় না।


এবার মহিলার দিকে তাকালাম । বললাম ব্যাপার কি?
কাচুমাচু হয়ে জানালেন ঘটনা সত্যিই। আপা আমার ভিতর একটা অস্বস্তি হয় । মনে হয় ওর বা পরিবারের কারও কোন ক্ষতি হবে। আর তার পর থেকেই শুরু হয় অস্বস্তি ।


কি দেখে এমন মনে হয়?
মহিলা জানালেন কোন বাসা সবদিক দিয়ে ঠিক হবে না । এটা আমি বুঝি। ঘরের কোণাকাণি দেখে আমার খারাপ লাগা শুরু হয়। আমার মধ্যে কুসংস্কার জিনিষটা মারাত্মক। যেমন ঠিক করলরাম সোমবার বাসা বদলাবো। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় হযরতের জন্মদিন সোমবার । এই দিন এসব কাজ করা ঠিক হবে না। কথায় কথায় কসম কাটি।


“মাছ” শব্দটি আমি শুনতে পারি না। বাসার সামনে দিয়ে মাছওয়ালা গেলে আমি স্থির থাকতে পারি না। মাছওয়ালার ডাক শুনলে বা পাশের বাড়ীর মহিলারা যখন মাছ কেনে তখন আমি কানে তুলা দিয়ে রাখি। সবার কাজ শেষ হলে আমি বের হয়ে দরজা সিড়ি বারান্দার গ্রীল মুছতে থাকি। আমি ছোট বেলা থেকে মাছ খাই না।
পাশে বসে থাকা স্বামী বলেন আপা আমি গ্রামের ছেলে। প্রতি বেলায় আমার মাছ না হলে চলে না। শপিংমলে গেলে মাছের কর্ণারে হাজার চেষ্টা করেও নিয়ে যেতে পারি না।
এখন আমি কি করব?
আরও শুনবেন।

গত ৫বছরের পত্রিকা বিশেষ করে সাপ্তহিকীগুলো ,ওর ছোটবেলার বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে একটা সুটকেস বহন করতে হচ্ছে। কোন জিনিষ ফেলতে চায় না। সবকিছুই তার কাজে লাগতে পারে। এই আশংকায় আপা সবছিু জমিয়ে রাখে। কিন্তু প্রচন্ড অগোছাল। এতবড় বাসা গুছিয়ে রাখা আর মাসে মাসে বাসা বদলানো --- কিভাবে সম্ভব ?


মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন গুছিয়ে রাখেন না?
আলসেমী কাজ করে। মনে হয় করবো। ঠিকঠাক মত করবো ভাবতে ভাবতে সময় চলে যায়। সাপ্তাহিকীগুলো না রাখলে মনে হয় কি যেন মিস করলাম। আমি জানি সব সময় এই পত্রিকাগুলো পড়াও হয় না। তারপরও আমার খটকা থাকে। আমি ফেলতে পারি না।


স্বামী জানালেন তার স্ত্রী প্রচন্ড বদরাগী। অন্যের সুখ তার ভাল লাগে না। অন্যের কিছু দেয়া জিনিষ তার কখনওই পছন্দ হয় না। কেউ কিছু দিলে তা ফিরিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। সে মনে করে তাকে কেউ ভালবাসে না।


স্ত্রীর দিকে তাকালাম ।
তখন সে বলে উঠলেন আমার আপা কিছুই ভাল লাগে না। নতুন বিয়ে হয়েছে । সবাই কত হাসিখুশী থাকে । আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। কোন কাজ সময়মত করতে পারি না। সকালের নাস্তাটা পর্যন্ত ¯স্বামীকে রেডী করে দিতে পারি না। তার মধ্যে আমি ঝামেলা করেই চলেছি।

আমি মুক্তি চাই । আমি সুস্থভাবে বাচতে চাই। সংসার করতে চাই।

তার মত বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ এই রোগে ভুগছেন । সংসারে নিজেদের অজান্তেই অশান্তি হচ্ছে ভাঙ্গণ ধরছে। সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে এই “ওসিডি” রোগ। রোগের সুচিকিৎসাই কেবলমাত্র এর সমাধান দিতে পারে। সুতরাং অজ্ঞানতা কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে আসুন। পরিবার,প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন সমাজকে হতাশার পথ থেকে সরিয়ে আশার আলো দেখাই।

 

 

 

Image result for ocd

 

 

কতগুলো কমন অজুহাত আছে ।

যেমন *একটু ভাল বোধ করলে ওষুধ আনার কেউ ছিল না বা পাওয়া যায় নাই বা *আপনার কাছে আসার সময় হয়ে গেছে তাই নতুন কোন ওষুধ যদি দেন আর কেনা হয় নাই। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে কোন ওষুধ চলবে কোনটা কতদিন পর বন্ধ হবে তারা কেউ একবারও চোখ বুলায় না বা কাউকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করে না। আবার ওষুধ বাজারে কিনতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা নিয়মিত একটা ব্যপার। অথচ প্রথম দিনের ইন্টারভিউটা যে কত প্রয়োজনীয় বুঝতে চায় না।


ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।


___________________________

 

 


কিছু দরকারি পরামর্শ


বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম

________________________

 

Related image

 

প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?

 

একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।

 

১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?

Image result for ocd

 

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।

লেখার সৌজন্য

ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়