Ameen Qudir

Published:
2018-02-03 20:49:00 BdST

ওসিডি ডায়েরি পর্ব ১৬“কুকুরের সাথে প্রেম-বিরহ চলছে শ্যালকের ” ভগ্নিপতি হেসে জানালেন


 

 

 

ডা. সুলতানা আলগিন

 

_____________________________

৩৭বছরের লোকটি এসেছে ভগ্নিপতির সাথে। উস্কোখুস্কো ভাব । চুলে চিরুনীর আচড় পড়ে না সহজে। বেশিরভাগ সময় ঘরেই কাটে। মুখটা শুকনো ।
জিজ্ঞাসা করলাম ঘুম খাওয়া দাওয়া কেমন?
উত্তরে জানাল আগে থেকে ঘুম খাওয়া দাওয়া কমে গেছে। বাইরে যাওয়াও কমে গেছে।

কেন?
এখনতো আপনার ব্যস্ত থাকার সময়।


_আগে বন্ধুবান্ধব ছিল । আড্ডা দিতাম । বের হতাম। এখন ওরা কেউ চাকরি করে কেউ ব্যবসা । সবাই বিয়েশাদীও করেছে।


আপনি কিছু করছেন না কেন? বিয়ে করেছেন?

রোগীটি “না” বলার সাথে সাথে পাশে বসা ভগ্নিপতি হেসে উত্তর দিল “ওরতো কুকুরের সাথে প্রেম-বিরহ চলছে” ।
ব্যাপার কি?
রোগীটি লজ্জায় আরও মাথা নীচু করে।
আমি বললাম বলেন তো কি হয়েছে?
ভগ্নিপতি বললেন, ও তো কুকুরের ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না। আমাদের খোলা বাড়ী । মাঝে উঠোন। কুকুর বিড়াল মুরগী ঘোরাফেরা করে সারাদিনই। মাঝেমধ্যে এরা ঘরে ঢুকে যায়। ওর ধারণা কুকুর ওর স্যান্ডেলে মুখ লাগিয়েছে। ঐ লালা থেকে কুকুরের বাচ্চা হবে। তাই ও বিয়েতে রাজী হচ্ছে না।

কুকুরতো দূরের কথা কুকুরের ছবি পেপার /টিভিতে দেখলেও স্যান্ডেল পরনের কাপড়চোপড় তাকে ধুতেই হবে। শরীরের কোথাও কোন আচড়ের দাগ দেখলে ও জনে জনে জিজ্ঞাসা করে ওটা বিড়ালের আচড় কি না ? বাইরে গেলে এদের সামনে/ পাশ দিয়েই যেতে হবে । তাই বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওর ঠোট নাক মোটা। এই নিয়ে সে খুব চিন্তিত।

তাছাড়া উনি আরও বলেন ওর লিঙ্গের সাইজ নাকি ছোট হয়ে গছে। বিয়ে করলে ছিড়ে যেতে পারে। তাই বিয়ে প্রসঙ্গ বাসায় তোলা যাচ্ছে না।
এবার রোগীকে বললাম আপনার কিছু বলার আছে কিনা?
উত্তরে বলল এসব চিন্তাভাবনাগুলো আমি মন থেকে সরাতে পারি না।


এবার নিজ থেকে জানালেন উনার চোখের সামনে কোন ধারাল বস্তু যেমন বটি,চাপাতি দেখলে জবাই এর দৃশ্য ভেসে ওঠে। চাইলেও সরাতে পারি না । অস্বস্তি হয় । এজন্য লাল রং এর কোন দাগ কোথাও দেখলে ও জনে জনে জিজ্ঞাসা করে ওটা রক্তের দাগ কি না ? দেখতে পাচ্ছি বুঝতে পারছি এটা রক্তের দাগ না কিন্তু মনকে মানাতে পারি না।
কেউ যদি আমার জিনিষিপত্র ধরে তাতেও আমার রাগ হয়। মনে হয় ওরা কুকুর বিড়াল মুরগী ধরেছে। মোবাইলটা পর্যন্ত লিকুইড সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলি।


আমি আইটিতে গ্রাজুয়েট। এভাবে বসে থাকলে আমার চলবে না। আমাকে দয়া করে এখান থেকে বের হতে আপনি সাহায্য করুন।
তখন আমি বললাম তোমাকে তুমিই সাহায্য করবে আর আমরা তোমাকে সাপোর্ট দিব। রাজী থাকলে আমরা সবাই মিলে এগুতে পারি।
এতক্ষণে রোগীর ঠোটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
বললাম ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে । ফলোআপে আসতে হবে। খাবারের লিস্ট অনুযায়ী খাবেন। ধৈর্য হারালে চলবে না। এসব ওষুধ কাজ করতে সময় বেশী নেয় । তাই হতাশ হওয়া যাবে না।

_____________________


কতগুলো কমন অজুহাত আছে ।

যেমন *একটু ভাল বোধ করলে ওষুধ আনার কেউ ছিল না বা পাওয়া যায় নাই বা *আপনার কাছে আসার সময় হয়ে গেছে তাই নতুন কোন ওষুধ যদি দেন আর কেনা হয় নাই। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে কোন ওষুধ চলবে কোনটা কতদিন পর বন্ধ হবে তারা কেউ একবারও চোখ বুলায় না বা কাউকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করে না। আবার ওষুধ বাজারে কিনতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা নিয়মিত একটা ব্যপার। অথচ প্রথম দিনের ইন্টারভিউটা যে কত প্রয়োজনীয় বুঝতে চায় না।


ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।


___________________________


কিছু দরকারি পরামর্শ


বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম

________________________

 

প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?

 

একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।

 

১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?

 

 

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।

 

লেখার সৌজন্য

ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
____________________________

 

ডা. সুলতানা আলগিন । সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়