Ameen Qudir

Published:
2017-11-19 00:29:55 BdST

ওসিডি ডায়েরি পর্ব ১৩" যখন ছুরি দিয়ে পেয়াজ আলু কাটতাম ,মনে হতো নিকটাত্মীয় কাউকে কাটছি"


 



 

ডা. সুলতানা আলগিন
________________________


মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করত। এখন বেকার অবিবাহিত। নিজেদের আত্মীয়ের দোকানে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে ছিল। ডিউটি শেষে কর্মচারীরা নিজেদের রান্না নিজেরাই করে খেত। অবসর সময়ে মোবাইলে দেশে কথা বলতো আর ফেসবুকে সময় কাটাতো।

২৪-২৫ বছর বয়সী যুবকের কন্ঠে হতাশা আতঙ্কের সুর বেজে ওঠে।
জিজ্ঞাসা করলাম এত ভয় পাচ্ছ কেন ?


সে বলল ভালই সময় কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ কি যে হলো । মোবাইলে একদিন ফেরাউনের ছবি ভেসে ওঠে। তারপর থেকেই যত সমস্যার শুরু। সারাক্ষণ মাথায় সব অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা আসতে থাকে। কিছুতেই সরাতে পারছিলাম না। খেতে পারতাম না । ঘুমাতে গেলে দুঃস্বপ্নে জেগে উঠতাম।


কি কি চিন্তা আসতো ?


বলল ফেরাউনের ছবি দেখার পর থেকে ঐ ছবি চোখে ভাসতো। মনে হতো ফেরাউনকেই আল্লাহ মানতে হবে। যখন খেতে বসতাম ঢোক গিলতে গেলেই চিন্তাটা বেশী আসতো। তখন খাবার আর গিলতে পারতাম না । এভাবে আস্তে আস্তে খাওয়া কমে গেল। খেতাম না। ওজন কমে যাচ্ছিল । অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছিল।


মুসলমান হয়ে এমন চিন্তা আমি কিভাবে মেনে নেই ?


এই মোবাইলে মক্কা কাবার ছবি, সুরা সবই দেখছি পাশাপাশি উল্টাপাল্টা কতকিছুইতো দেখেছি । এখন এগুলো মানতে কষ্ট হয় । ইহকাল পরকাল দোজখ বেহেশত শালীন অশালীন সঠিক বেঠিক নিয়ে দ্ব›দ্ব সারাক্ষণ চলতেই থাকে।


আরও বলল ওখানে কর্মচারীদের সবাইকে পালাক্রমে রান্না করতে হতো। যখন ছুরি দিয়ে পেয়াজ আলু কাটতাম মনে হতো নিকটাত্মীয়ের কাউকে কাটছি।


রীতিমত ঘাম দিত। ক্যাশে যখন বসতাম কাউকে ভাংতি টাকা দিতে গেলে কোন টাকার কয়টা নোট দিতাম তা মনে মনে গুনতাম আর মনে রাখার চেষ্টা করতাম।

না পারলে কষ্ট হতো । আসলে এটা যে সম্ভব না আমি বুঝতাম। দিনে এত বেচাকেনা হয় তাতে নোটের হিসাব কিভাবে রাখব ? তবে ব্যলেন্সের হিসাবে কখনও ভুল হয় নাই।
ওযু করার সময় পানির ছিটা লাগলে ৫-৬বার রিপিট করতে হয় ।

ছোটবেলায় মেয়েদের দেখলে চোখে পরীর ছবি ভেসে উঠতো। আগে বেশী হতো। বিয়েশাদী করি নাই। স্বপ্নদোষের পর ৫০-৬০ বার কাপড় শরীর না ধুলে নিজেকে নাপাক মনে হয়। এভাবে দিনে দিনে কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়েছি। দেশে আসার পর নতুন আরেকটা সমস্যা দেখা দিয়েছে ।

 

কি সমস্যা ?


আমার লিঙ্গের গোড়ায়, ঘাড়ে সাদা সাদা দাগ দেখা দিয়েছে । ডাক্তার দেখিয়েছি । উনারা চিকিৎসা দিয়েছেন কিন্তু দাগ যায় নাই। বলেছেন দুশ্চিন্তার কোন কারন নাই। আমার রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা নাই । দুশ্চিন্তা হলো সাদা রং নিয়ে । তাই বলপেন দিয়ে লিঙ্গের গোড়ায়, ঘাড়ের সাদা দাগ কাল করে রাখি যাতে সাদা দাগ দেখতে না হয়।
আমাকে আপা এসব থেকে উদ্ধার করেন। এসব অহেতুক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। এসময় যদি ইনকাম না করি কবে করব ?

 

বললাম এই রোগের নাম ওসিডি। যাকে চলতি ভাষায় শুচীবাই বলে । তাকে আশ্বস্ত করলাম চিকিৎসার বিকল্প নেই। নিয়মিত সঠিক ডোজে ওষুধ খেতে হবে। দেশের বাইরে গেলে প্রেসক্রিপশন করিয়ে নিয়ে যাবেন । কিন্তু ওষুধ চালিয়ে যাবেন।
________________


কতগুলো কমন অজুহাত আছে ।

যেমন *একটু ভাল বোধ করলে ওষুধ আনার কেউ ছিল না বা পাওয়া যায় নাই বা *আপনার কাছে আসার সময় হয়ে গেছে তাই নতুন কোন ওষুধ যদি দেন আর কেনা হয় নাই। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে কোন ওষুধ চলবে কোনটা কতদিন পর বন্ধ হবে তারা কেউ একবারও চোখ বুলায় না বা কাউকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করে না। আবার ওষুধ বাজারে কিনতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা নিয়মিত একটা ব্যপার। অথচ প্রথম দিনের ইন্টারভিউটা যে কত প্রয়োজনীয় বুঝতে চায় না।


ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। মানসিক চাপের কারনে রোগের বাড়তি কমতি থাকবে । ধৈর্য ধরে ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।


___________________________


কিছু দরকারি পরামর্শ


বি:দ্র: সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্যের একটা ছোট তালিকা দেয়া হলো। এসব খাবার আমাদের দেশে সবখানেই পাওয়া যায়। তবে কারও যদি কোন খাবারে নিষেধ থাকে তবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য আইটেম আপনার প্রতি বেলার খাবারে রাখতে পারেন। ওষুধের পাশাপাশি এসব সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাদ্য আপনার শরীরে সিরোটনিনের চাহিদা মিটাবে ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য:মাংস,কলিজা,ডিম ,দুধ ও দুধ জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ
ফলমূল :পাকা কলা,আনারস, খেজুর, বাদাম, আম,আঙ্গুর,এ্যাভোকেডো
শাকসব্জি: পালং শাক,পুইশাক,বেগুন, শিম জাতীয় বীজ,ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, মাশরুম

________________________

 

 

প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?

 

একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।

 

১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?

 

 

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।

 

লেখার সৌজন্য

 

ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
____________________________

 

ডা. সুলতানা আলগিন । সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়