Ameen Qudir

Published:
2017-09-05 17:43:40 BdST

ওসিডি ডায়েরী ১০বৌটি বলছিল শাশুড়ীকে জানাতে হয়: তার কোন তারিখে মাসিক হয়


 

 

ডা. সুলতানা আলগিন

_________________________________


গৃহবধূ মহিলা বোনের সাথে এসেছে । আতঙ্কিত চেহারা । কোন কথার সরাসরি উত্তর দিতে চাচ্ছে না । বোন যতই বলছে নির্ভয়ে সব কথা বলতে ;সে ততই কাচুমাচু করছিল। তার সমস্যা হলো সে সবসময় স্বামীর ধমক বকাঝকার ভয়ে ভীত। চুন থেকে পান খসলেই হলো ।

১০ বছর যাবৎ সংসার করছে । এখন মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে যখন তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। বুঝলাম সে কনভারশন ডিসঅরডারে ভুগছে। জিজ্ঞেস করলাম কি ঘটনার প্রেক্ষিতে এই রকম হয় ?

তার জবাবে মহিলা বললেন তার স্বামীর যখন বাসায় ফেরে ঘর অগোছালো দেখলে প্রচন্ড রেগে যায় । ছোট ২জন বাচ্চা আছে তাদের সামলাতে সে পারে না।

ভাইবোনদের মধ্যে সে সবচেয়ে ছোট তাই অত কাজ করতেও সে অভ্যস্ত না। শরীরে কোন দাগ,ফোস্কা দেখলেতার সাথে অদ্ভুত আচরণ করে যা বলার মত না। প্রেগনেন্সীতে পেটে যে দাগ পড়েছিল তা নিয়েও মন্তব্য করে। তার স্বামী বলেছে তার মার পেটে সে এরকম দাগ দেখে নাই।তারআচরণ দেখে মনে হয় সে কোন ছোয়াচে রোগীর সাথে আছে। সে যে কোন সময় রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। তাদের সেক্সুয়াল লাইফ বিঘ্নিত হচ্ছে। রাস্তায় বেরহলে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। কেন হাটতে দেরী হচ্ছে, কেন একসাথে লিফটে উঠতে পারল না, কেন পাশের লোকটির কাছে দাঁড়াল , তারদিকে কেন তাকাল ---- এরকম প্রশ্নের বানে সে জর্জরিত।


রাস্তায় উত্তেজিত হয়ে পরিবেশটা নরক বানিয়ে তোলে।
যৌথ পরিবার। শাশুড়ীর ভয়ে রুম থেকে বের হতে পারে না। সে বাথরুমে ঢুকলে ৩-৪ ঘণ্টা কাটায়।

বাথরুমের মধ্যে কমোড,বেসিনকল,দরজা নিয়ে সার্কাসের মত ঘুরতে থাকে। কোমড় থেকে পা পর্যন্ত; ক নুই থেকে আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত বার বার ধুতে থাকে। তার আলাদা বাথরুম । সেখানে বিভিন্ন রংয়ের সাবান আছে। একেকটা সাবান একেকটা অঙ্গ ধোয়ারজন্য।

 

বৌটি বলছিল শাশুড়ীকে জানাতে হবে তার কোন তারিখে মাসিক হয় এবংকবে শেষ হয়। এই সময় সে যেন ভুলেও তার রুমে না ঢোকে।

ঢুকলেই তার পাক পবিত্রতা শেষ। ছেলের বৌ এর সহবাসের হিসাবও আকারইঙ্গিতে জেনে নেয়।
রোগীর বোনটি বলছিল ওর বোনটিকে কোনদিন এরকম রাগারাগি করতে দেখে নাই। বাচ্চাদের সাথে সে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। ওদেরদেখাশোনাও করেনা । আর স্বামী বাসায় আসলে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে। অজ্ঞান হওয়াটা ওর দিনে দিনে বাড়ছে।

 

এখনকিকরা ?
পরেরসপ্তাহে স্বামীসহ দেখাকরতে বললাম। জানালাম যদি ¯স্বামীর সমস্যা থাকে তারও চিকিৎসার প্রয়োজন।


পুরো পরিবারটি এবার আসল। কিন্তু বিড়ালের
গলায় কে ঘন্টা পরাবে এই নিয়ে শুরু হলো মুখদেখাদেখির পালা।

স্ত্রীর চেহারা তো শুকিয়ে কাঠ। স্বামীর চেহারা থেকে রাগ ঠিকরে বের হচ্ছে।

তাকে মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে আনা হয়েছে কেন !
শুরুটা অবশেষে আমিইকরলাম ।


কেন আপনি এত রেগে যান ? আপনার স্ত্রী কি সমস্যা করে ? ওর কোনআচরন আপনার পছন্দ নয় ? আপনি কি তাকে কোনরক ম
সন্দেহ করেন ?

উত্তরে জানালেন সে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসে। অগোছালো সে পছন্দ করে না। ছোটবেলা থেকে এভাবেই বড় হয়ে এসেছে। সে বলল তাদের বাসা সবসময় পরিপাটি ছিল।

বিয়ের পর থেকেই সব উল্টাপাল্টা। অফিস থেকে এসে দেখি সকালের জিনিষ সেভাবেই
পড়ে আছে।


হাতের কাছে কোন জিনিষ খুজে পাই না। এক
জায়গায় কোন কিছু রাখলে পরে সেটা কোথায় খুজে পাব জানি না। বাইরে গেলে এত কেয়ারলেসলি চলে আমার অসহ্য লাগে।

যদি রিক্সায় ধাক্কালাগে,, কেউ যদি ওর গায়ে হাত দেয় বা ধাক্কা দেয় ।লিফটে আমার কাছে না দাড়িয়ে দূরে দাড়ায়। আতঙ্কে থাকি যদি উঠতে না পারে ।এসব সামান্য জিনিষ নিয়ে সমস্যা প্রতিদিনই হচ্ছে ।


আমি বললাম আপনার মায়ের শুচীবাই রোগ আছে আপনি কি তা জানেন ?

সে বলল তার মার কিছুটাশুচীবাই রোগ আছে। কিন্তু সে যে ঐ রোগই বহন করে চলেছেন
তা তিনি মানতে নারাজ। উনাকে বুঝিয়ে বললাম এই ওসিডি রোগের জানা মতে ৬০-৭০রকমের লক্ষণ আছেআপনিকিতাজানেন ?

আপনার মায়ের লক্ষণটা যে আপনার মধ্যে থাকবে তা কে বলল? মনে করেন সবাই তো
এখন জ্বরে ভুগছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারা কেউ ডেঙ্গু, কেউ ভাইরাল ,কেউ চিকনগুনিয়াতে
আক্রান্ত হয়েছে । সবার লক্ষণ জ্বর বা
কাছাকাছি হলেও ডায়াগনসিস ভিন্ন ।

তার কারণ আর চিকিৎসাও ভিন্ন। আজকে যদি আপনার ওসিডি ডায়াগনসিস না হতো তবে একে অপরকে দোষারোপ করে বাকিজীবন আপনারা পার করে দিতেন। তিক্ততা বাড়তে বাড়তে সম্পর্ক
আরও খারাপ পরিণতির দিকেও যেতে পারতো। চিকিৎসা নিন । সম্পর্কেও উন্নয়নকরুন।

_______________________________

 

 

প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?

 

একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।

 

১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?

 

 

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।

 

লেখার সৌজন্য

ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
____________________________

 

ডা. সুলতানা আলগিন । সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়