Ameen Qudir

Published:
2017-08-27 17:29:03 BdST

রোগকাহিনীবনের বাঘে খায় না,মনের বাঘে খায় :রোগ সামান্য : পরিনাম অসামান্য


 


প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম

___________________________________


কাহিনী সংক্ষেপ : মিসেস সাহারিনা,,বয়স-৩২। বাচ্চাকে স্কুলে দিতে গেলে অন্য ভাবীরা প্রেসার,হার্ট এটাক,কিডনি রোগ ইত্যাদি নিয়ে গল্প করতো।এগুলো শুনতে শুনতে আমার মাথা গরম হয়ে যেতো।
একদিন অজ্ঞান হয়ে যাই।ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ডা. বলে সামান্য হাই ব্লাড প্রেসার আছে( আতঙ্ক, ভয়ের সময় প্রেসার এমনিতেই কিছুটা বেড়ে যায়)। ২-৩ মাস পর আমার ডেলিভারির সময় আমার পালপিটেশন বেড়ে যায়,সঙ্গে প্রেসারও।ডা. বলে আপনি আতঙ্কিত তাই এমনটি হচ্ছে( সঠিক সাজেশন ছিল)।
কিন্তু ডেলিভারি হওয়ার পর আতঙ্ক আরো বাড়ে।প্রায়ই প্রেসার আপ- ডাউন করে।আমি ভয়ে ঘন ঘন প্রেসার মাপাতাম।প্রেসারের ঔষধ খাওয়ার পর অবস্হা আরো খারাপ হয়।কোন মৃত্যু সংবাদ শুনতে পারতাম না,দুঃসংবাদ শুনতে পারতাম না।এক সময় এমন হয় টিভি দেখা বন্ধ করে দেই যেহেতু কখন সংবাদে কোন দুর্ঘটনার সংবাদ প্রচারিত হয় এই ভয়ে।
অস্হির লাগতো,সব সময় ভয় এই বোধ হয় মারা যাচ্ছি। ঘর থেকে বের হতে পারতাম না প্রেসার বেড়ে যাবে,মারা যাবো। বাসায় স্বামী পাশে তাও ভয়।মন একেবারে দুর্বল হয়ে গেলো।বাথরুমে ও একা যেতে পারতাম না।দরজা লাগাতাম না যদি এটাকের সময় দরজা খুলতে না পারি।একই ঘরে ও পাশের রুমে একা যেতে পারতাম না।অন্ধকার হলে রুম থেকে বের হতে পারতাম না।বাচ্চা কিছু কিনে দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতো কিন্তু ভয়ে নীচে নামতাম না দোকানে যেতে।স্বামী চাকরি করে তাই বাচ্চা স্কুলে নিতে হতো আমাকে।ভয়ের কারনে বাচ্চা স্কুলে নিতাম না।এভাবে তাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।গত কয়েক বছর বাবার বাড়ী,শ্বশুর বাড়ী কোথাও যাইনি- এই ভয়ে( ঘর থেকেই বের হতে পারি না,দূরে কেমনে যাবো?)। কখনো বাইরে গেলে প্রেসারের ঔষধ সব সময় সঙ্গে রাখতাম
ডাক্তার দেখাতে ও যেতে চাইতাম না,যদি পরীক্ষা নিরীক্ষায় কোন খারাপ রিপোর্ট আসে? জোর করে নিয়ে গেলে ডা. রুমে ঢুকে আরো অসুস্থ হয়ে পড়তাম।স্বামী, বাচ্চাদের চেপে ধরে বসে থাকতাম। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছি, তারা বলে পরীক্ষায় কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি,কিন্তু রেফার করে না।
আমি হাসি ভুলে গিয়েছিলাম। এখন যে এতো কথা আপনাকে বললাম,তখন ডাক্তারদের কাছে কিছুই বলতে পারতাম না।
চিকিৎসার পর তিনি নাটকীয় ভাবে উন্নতিলাভ করেন
যতবার তারা ভিজিটে আসে প্রতিবারই কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলে স্বামী স্ত্রী দুজনই সমস্বরে বলে আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি
তবে স্বামী বলে স্যার সে করুন অবস্হা নেই কিন্তু এখনো ও বাইরে গেলে প্রসারের ঔষধ সঙ্গে নিতে ভুল করে না।
( এতো বেশী সাফার করেছে যে ভালো হওয়ায় আল্লাহ এর কাছে তাদের কৃতজ্ঞতার কোন সীমা নাই।ডা. হিসেবে এই পাওনাটুকুর মূল্য অপরিসীম)
_____________________________________


প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
মোবাইল :০১৭১৫১১২৯০০
ইমেইল :[email protected]

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়