Ameen Qudir
Published:2017-07-30 15:35:14 BdST
ওসিডি ডায়েরী ৮"বান্ধবীদের সামনে গেলে আজেবাজে ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠত"
ডা. সুলতানা আলগিন
_________________________________
ওসিডি ডায়েরী ৮____________________
২৫-২৬ বয়সী ছেলেটি,অবিবাহিত ,পেশায় ব্যবসায়ী ।ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।
নিজস্ব ও পারিবারিক ব্যবসা সব একহাতেই চালায়।
চেম্বারে এসে সামনে একটু ঝুঁকে বসল । বলতে শুরু করল -- বর্তমানে বছরখানেক হলো আমার সমস্যাটা বেশী হচ্ছে । আমি আর মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না। সারাক্ষণ অস্থিরতা অশান্তি অনুভব করছি । আমার ওসিডি আছে । আমার মায়েরও একই সমস্যা ।
জিজ্ঞেস করলাম কেন ওসিডি বলছ ? কি কি লক্ষণ আছে তোমার ?
বলল, মায়ের জন্য চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যপারটা বুঝতে পেরেছিলাম। পরে আমি নেটে দেখেছি সব কিছু আমার সাথে মিলে যায় । আমি আপা বেশ ভাল ব্যবসায়ী । আয়-ইনকামও বেশ। কিন্তু বাইরে কখনও খাই না । বোতলের পানি কিনে খাই । বাইরে খাওয়া পারতপক্ষে এড়িয়ে যাই। বলতে পারেন বন্ধ। মনে হয় বাইরে খাওয়া স্বাস্থ্যহানিকর।
কখন কোন রোগ হয়ে যায় । আগে বাইরে কত খেয়েছি । কোনদিন এমন মনে হয় নাই । বুয়ার ধোয়া কাপড় পড়তে অস্বস্তি হয়। কোন কাজ ৩বার না করলে স্বস্তি পাই না । হিসাব শেষে ৩বার কম্পিউটারে চেক করতে হবে। কোন স্বাক্ষর করতে গেলে ৩বার পুরোটা পড়তে হয়।
এত সময় কোথায় আপা ? গলায় ব্যর্থতার কষ্ট বেজে ওঠে ।
আরও আছে । নামাজ আমি নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কোন ওয়াক্তের নামাজ বাদ দিয়ে যদি অন্য কোন কাজ করি সেটা আমার বা পরিবারের ক্ষতির কারণ হবে -- এই ভয়টা মনে গেথে বসে। সহজে সরাতে পারি না।
একটা উদাহরণ দেই। একটা দামী বড় শ্যাম্পুর বোতল কিনেছিলাম আছরের ওয়াক্তে। সাথে অন্যান্য খুটিনাটি কাজও ছিল । নামাজটা পড়া আর হয় নাই। কিন্তু বাসায় এসে মনে হলো এটা ব্যবহার করলে পরিবারের ক্ষতি হবে । সেটা আরেকজনকে দিয়ে দেই।
লজ্জার কথা কি বলব আপা । কারও সাথে বিশেষ করে মেয়েদের সাথে আমার সম্পর্ক টিকে না।
কেন কার সমস্যা ? তোমার না অপর পক্ষের ?
বলল আমি পর্ণ ফিল্ম দেখতে আসক্ত । সপ্তাহ শেষে বাসায় যতক্ষণ থাকি রুম আটকে এইসব দেখি । আর আমার যেসব বান্ধবী ছিল তাদের সামনে গেলে আজেবাজে ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠত । নিজেকে ছোট মনে হতো। আমি ওদের সামনে লজ্জায় সংকোচে কুচকে যেতাম। নিজের মধ্যে গ্লানিবোধ হতো। আমি ধীরে ধীরে সরে আসি ।
আমাকে একটা উপায় করে দেন ।
---------
ওসিডি একটা ক্রনিক রোগ। নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ডোজে ওষুধ খেলে এর তীব্রতা কমে আসবে । সাথে বিহেভিয়ার থেরাপী চলতে পারে। আশা ছাড়া যাবে না। ভয়কে ভুল ভাবনাকে জয় করতেই হবে। পিছিয়ে পড়া চলবে না ।
_________________________
প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?
একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।
লেখার সৌজন্য
ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
____________________________
ডা. সুলতানা আলগিন । সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: