Ameen Qudir

Published:
2017-06-14 17:06:35 BdST

আপনি কতটুকু আত্মমর্যাদাশীল


 

                                     

 

 

 

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
________________________________


"অন্যদের সঙ্গে সহমত হয়ে চলার পুরস্কার হচ্ছে সবাই আপনাকে পছন্দ করবে কেবল আপনি ছাড়া"- বলেছেন রিতা ম্যাউ ব্রাউন ।

তার মানে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গা ভাসিয়ে দিলে আপনি হয়তো অন্যদের কাছে প্রিয়ভাজন হবেন,তাদের পছন্দ পাবেন, কিন্তু তা পাবেন নিজে নিজকে পছন্দ না করার বিনিময়ে।আপনি কি তেমনভাবে জীবন যাপন করেন যা আপনার নিজস্ব লক্ষ্য, আদর্শ, মুল্যবোধ ও প্যাশনকে সম্মান করে? নাকি অন্যদেরকে আপনার উপর দিয়ে দৌড়ে যেতে দেন।নিম্মোক্ত প্রশ্নগুলো নিজকে করুন ও যাচাই করুন কতটুকু আত্ম মর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করছেন:

১। আপনি অন্যের স্টান্ডার্ড দিয়ে নিজকে পরিমাপ করেন? অন্যদের স্টান্ডার্ড অনুযায়ী চলতে না পারলে মানসিক পীড়নে ভুগেন? মনে রাখবেন নিম্ম আত্ম মর্যাদাবোধ যাদের তারা সব সময় চায় অন্যদের স্টান্ডার্ড এ নিজকে খাপ- খাইয়ে নিতে যাতে তাদের পছন্দ পান,কারো বিরাগভাজন না হোন।অন্যদের পছন্দ, অনুমোদন ( এপ্রোভাল) না পেলে তাদের মন হীনতায়,গ্লানিতে ভরে উঠে।কেননা তারা আশঙ্কা করে এতে অন্যরা ক্ষেপে যাবে,তাকে এড়িয়ে চলবে,তাকে সমালোচনা করবে- ইত্যাদি। এবার নিজকে যাচাই করুন ও প্রয়োজনে বদলে ফেলুন।

 

 

২। আপনি কি রসিকতা/ মশকরা করে নিজের প্রকৃত অনুভূতি ঢেকে রাখতে চান? এটিও অন্যের চোখে নিজকে সুখী,ভালে দেখানোর চেষ্টা।আমাকে সব সময় হাসি খুশী থাকতে হবে,মন খারাপ দেখলে তারা আমাকে নিয়ে মিটিমিটি হাসবে,ব্যঙ্গ করবে, তাই জোর করে হলেও আমি ভালো আছি,সুখে আছি তা দেখাতে হবে।তার মানে অন্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন,নিজেকে ঢেকে রেখে,চেপে রেখে। কোন মেকি উপায়েই আপনি সুখী হবেন না এবং অন্যদের চোখ ফাকি দিতে পারবেন না।এবার নিজকে যাচাই করুন ও আত্ম করুনা পরিহার করে,আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন হোন।

৩। অন্যকে খুশী করতে চরম মিথ্যে বলতেও কার্পন্য করেন না? একজন মানুষ ও যদি সত্য ও ন্যায্য কথা বলে আর বাকী শত মানুষ গ্রুপিং করে তার বিরুদ্ধাচারন করে আপনি কি শত মানুষের বিপক্ষে দাড়িয়ে ঐ নিসঙ্গ সঠিক মানুষের পক্ষে দাড়ানোর সৎ সাহস ও নৈতিক মনোবল রাখেন?না মেজরটির কোপানলে পড়ার ভয়ে,শক্তিশালী গ্রুপ এর পক্ষে অবস্হান নেন? শক্তিশালী পক্ষে থাকার এই দাসানুদাস মানসিকতা তৈরী হয় নিজের বুনিয়াদী আত্ম সম্মান বোধ দূর্বল হলে,অন্যদের অনুমোদন, পছন্দ পাওয়ার দূর্নিবার চাহিদা থাকলে।সবার সামনে নিজের মাথা উচু করে গর্বিত ভঙ্গিতে দাড়াবার সাহস কেবল উচ্চ আত্ম মর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষেরই থাকে ।

৪।" টক্সিক" মানুষদের টিটকারি, অপমান,অবজ্ঞা, শ্লেষ মেনে নিয়ে জীবন যাপন করছেন? এই টক্সিক বা বিষাক্ত মানুষ গুলো থাকতে পারে আপনার কর্মস্হলে,সামাজিক জীবনে কিংবা পরিবারেও।এদেরকে সহ্য করে যাওয়া,এদেরকে " বাতিল" করে দিতে না পারা মানে আপনি ভীত, শঙ্কিত এই ভেবে যে এদের ঘাটলে,ক্ষেপালে আপনি একাকী হয়ে পড়বেন,আরো আক্রমন,প্রতিহিংসার সম্মুখীন হবেন।একটি স্বাধীন,মুক্ত,উন্নত মস্তক নিয়ে আত্ম মর্যাদাশীল, সম্মানিত জীবন বাদ দিয়ে ঐ দূর্বৃত্ত,বিষাক্ত কীটদের ছোবল খেয়েও তাদের সঙ্গে আপোষ করে,মাথা নত করে,হীন,মর্যাদাহীন জীবন যাপন বেছে নেওয়া মানে ন্যুনতম আত্ম মর্যাদা না থাকা।এখন সিদ্ধান্ত আপনার
৫। আপনি সব সময় প্রোডাক্টিভ কিছু করার তাড়নায় থাকেন? বিশ্রাম, বিনোদনে সময় ব্যয় করলে নিজকে অপরাধী মনে হয়, লজ্জা অনুভব করেন? নিজকে অকাজের মনে হয়? তার মানে বসকে তুষ্ট করতে,কলিগদের টেক্কা দিয়ে নিজে অনেক দায়িত্ববান, কাজের লোক প্রমান করার তাগিদ আপনার বেশী। অবশ্য নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় বিশ্ামর,বিনোদন বাদ রেখে নয়।( কোন প্রতিষ্ঠান ই আপনার একার উপর নির্ভরশীল নয়।নিজকে অপরিহার্য প্রমান করে সাময়িক সুবিধা পাবেন কিন্তু হারাবেন নিজের মতন,মুক্ত,আত্ম মর্যাদাশীল জীবন। এটি অন্তর্গত মানসিক দারিদ্রতা মাত্র। কেউ আছেন পরিবারে অশান্তি তাই অফিসেই সারাক্ষণ থাকি,কলিগরা দায়িত্বহীন, অকাজের,আমি ছাড়া প্রতিষ্ঠান অচল ইত্যাদি কারনে দিনরাত কাজ পাগল হয়ে থাকেন।মনে রাখবেন প্রোডাক্টিভ মানুষের চেয়ে সমাজে সৃজনশীল মানুষ বেশী দরকার।

 


৬। অতীতে যা ঘটে গেছে তা সহজে ভুলতে পারেন না? অতীত আপনাকে বিষন্ন,হতাশ,হেয়,ছোট করে রাখে? পীড়ন,যন্ত্রনা,অপমান,ব্যর্থতা কোন কিছুই ভুলতে পারছেন না? তার মানে অন্যদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কে কি বলেছে,করেছে সে ক্ষেদ,ক্ষোভ মন থেকে মুছতে পারছেন না এই জন্য যে আপনি তাদেরকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন।আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে অন্যকে এতো প্রাধান্য দেয় না।তারা তাদেরকে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভাবে না যে তাদের কথা,মন্তব্য, আচরন তাকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে যাবে ।


________________________________

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
ইমেইল :[email protected]

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়