Ameen Qudir
Published:2019-09-20 20:56:36 BdST
একটি টিউমারের জন্মদিন
ডাঃ জোবায়ের আহমেদ
__________________________
আমার বাবা তখন বি এ তে পড়েন।
ফাইনাল পরীক্ষা সামনে।।খুব ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।। একদিন পড়ার টেবিলে দাদি গিয়ে বাবা কে বিয়ের সুখবর দিলেন।।তখনো তিনি আমার বাবা হন নি।।
সুখবর শুনে মানুষের চোখে মুখে আনন্দ চিকচিক করে কিন্ত উনি মুখ গোমরা করে ফেললেন।।
দাদি গিয়ে দাদা কে জানালেন উনার রিয়েকশন।।
আমার বাবা উনার বাবা কে যতটুকু সম্মান, মর্যাদা দিয়েছেন এতটুকু হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা খুব কম সন্তানই তাদের বাবা কে দিয়ে থাকেন।।
বাবা মা এর বিরুদ্ধাচরণ ইহজীবনে করেননি।।
দাদা ভাই আমার বাবা কে সাথে নিয়ে গেলেন জৈনপুরের পীরসাহেব হযরত মাওলানা এমরান আহমেদ সিদ্দিকী এর খানকা শরীফে।
হুজুর বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন,আমাদের এতদ অঞ্চলে উনার খুব সুখ্যাতি ছিল।
হুজুর সব শুনলেন, আব্বা কে স্নেহ করতেন।
দাদাভাইকে বললেন, আমি ইস্তিখারা করে এক সপ্তাহ পর সিদ্ধান্ত দিবো।
এক সপ্তাহ পর দাদাভাই বাবা কে নিয়ে হাজির হলেন হুজুরের খানকাতে।
হুজুর হঠাৎ ঘোষণা দিলেন নুরুল আমিন (আমার বাবা)এর বিয়ে আমি পড়াব।
আমার বাবার আর না করার সুযোগ থাকলো না।
জৈনপুরের পীরসাহেব হুজুর উনার পুরো জীবনে দুইটা বিয়ে পড়িয়েছিলেন।। এর মধ্যে আমার বাবা মা এর টা একটা।।
বছর ঘুরে আমার মা এর কোল জুড়ে বড় বোন আসে।
প্রথম সন্তান যার কন্যা, সেই বাবা ভাগ্যবান।
ছয় মাস পর আম্মা একদিন আব্বা কে জানালেন
উনার পেটে কি যেন একটা চাকা নড়ে।।
অনেকটা টিউমার এর মত।
মা খুব ঘাবড়ে গেলেন।
আব্বা আম্মাকে নিয়ে গ্রাম থেকে পিজিতে হাজির হলেন।
তখন পিজির গাইনী বিভাগের সম্ভবত রেজিস্টার ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডাঃ শায়লা খাতুন।।
ম্যাডাম আম্মাকে চেকআপ করে আব্বা কে নিশ্চিত করলেন আপনারা যেটাকে টিউমার ভাবছেন সেটা টিউমার নয়।
ম্যাডাম মিষ্টি খেতে চাইলেন।
আমার আত্মীয়রা আমাকে এবরশান করে ফেলতে বলেছিলো।
এক বাচ্চা কোলে, তাকে পালাই দায়।
তারমধ্যে আরেকজন।
আমার মায়ের দৃঢ়তাই আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলো।
মা লজ্জা পেয়েছেন অনেকের কথায় কিন্ত উনি উনার সন্তানকে হত্যা করেননি।
১৯৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিকাল বেলায় সেই টিউমার আমার বাবা মা এর দ্বিতীয় সন্তান ও বড় ছেলে হিসেবে এই সুন্দর পৃথিবীতে আগমন করে।
আমার মা খুব মায়া নিয়ে গালে চুমু দিয়ে প্রায়ই
উনার সেই টিউমার কে আদর করেন এবং টিউমার এর ডাক্তার হয়ে উঠা নিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে উঠেন।
মা বাবার জন্যই আজকের পৃথিবীর সুন্দর দেখতে পাই আমি।
সবুজ দেখি।আলো দেখি।।
সব অসুন্দর এর মাঝেও সুন্দর খুঁজে বেড়াই।
আমি তাই সবসময় এবরশানের বিপক্ষে।
আজকের জন্মদিনে আমার প্রিয় বাবা মা এর প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানাই।।
এই দুইজন মানুষের ভালবাসা ও অকৃত্রিম মায়ায় ভরে আছে আমার জীবন।।আজকের জন্মদিনে আমার একটাই শপথ, বাবা মার মুখের হাসি ধরে রাখা।।উনাদের সেবা করে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রশান্তি লাভ করতে চাই।।সুখ মানেই মা বাবার মুখের হাসি।।
আপনার মতামত দিন: