Ameen Qudir
Published:2019-08-20 04:46:51 BdST
বঙ্গবন্ধু তাকে হাত ধরে বিছানায় বসালেন, তারপর যা বলেছিলেন, জানাচ্ছেন অধ্যাপক ডা মোজাহেরুল হক
ডেস্ক
________________________
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে বিরল ও স্মৃতিময় প্রথম সাক্ষাতের কথা জানালেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক অধ্যাপক মোজাহেরুল হক। তাকে বঙ্গবন্ধুর সকাশে প্রথম বারের মত নিয়ে যান চট্টগ্রামের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন চৌধুরী। মহিউদ্দিন চৌধুরী ডা. মোজাহেরুল হকএর স্নেহাস্পদ স্বজন ছিলেন । অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এক লেখায় খুলে বলেন, সেই সাক্ষাতে বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন; কি নির্দেশ দেন। স্মৃতিসুষমার সেই লেখা ডাক্তার প্রতিদিনের পাঠকদের দরবারে বেশ হল।
অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক-এর সেই লেখা
________________________
মহিউদ্দিন কে খুব মনে পড়ে। বংগবন্ধুর কাছে সেই আমাকে পরিচিত করতে নিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামে হোটেল শাহজাহানে। ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাকে বড়ভাই বলে মাজহার ভাই বা মোজাহের ভাই বলে ডাকতো আার মহিউদ্দিন ডাকতো ডাক্তর সাব বলে।
আামার মা একবার জীবনে তাকে দেখেছে কিন্ত জীবনে ভোলেনি। আমি বিলেত যাবার আগে ১৯৭৯ সন হবে একদিন হঠাৎ কি মনে করে জিগ্যেস করে জানতে চেয়ছিলেন সে বেচে আছে কিনা। তাকে মা অত্যন্ত সাহসী জানতো।
একদিন রাতে বাসায় এসে বাইরে থেকে 'ডাক্তর সাব' 'ডাক্তর সাব' বলে ডাকা ডাকি। সাথে মৌলভী সৈয়দ ও আরও একজন মন্জু কলেজিয়েট স্কুলের সহপাঠী।মন্জু জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ আজিজ সাহেব এর ছেলে।
আমার বোন আছমা (পাকিস্তানীদের হাতে শহীদ ৪ঠা এপ্রিল) চট্টগ্রাম গার্লস কলেজ এর ছাত্রী, ও মহীউদ্দীন কে চেনে। এসে বললো মহিউদ্দিন ভাই এসেছে।
আব্বা আমি ছাত্র রাজনীতি করি পসন্দ করতেন না। কিন্তু ছোটবেলা হতেই হাত ধরে শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, ভাষানী, আবদুল গফ্ফার খান ওনাদের জনসভায় নিয়ে যেতেন।
ঘরের বাইরে এসে কাছের মুদি দোকান এর বেন্চিতে বসে কথা হল। কাল সকালে শাহজাহান হোটেলে
' মুজিব ভাই চট্টগ্রামের ছাত্র নেতাদের সাথে নাস্তা করবেন কথা বলবেন'। জানলাম উনি আজই এসেছেন। চাঁপা কলা আর মুড়ি খেয়ে ওরা বিদায় নিল।
আমাকে মহিউদ্দিন সকালে বাসা হতে নিয়ে যাবে।
যথারীতি পরদিন সকালে মহিউদ্দিন এলো একটি বেবীট্যাক্সি নিয়ে। দুজন রওনা দিলাম। পথে যেতে বললো আমরা সোজা ' মুজিব ভাইয়ের রুমে যাবো'.
বংগবন্ধু মহিউদ্দিন কে খুব স্নেহ করতেন।
বেবীট্যাক্সির মিটারমত ১১ আনা ভাড়া বুঝিয়ে দিয়ে দোতলায় উঠলাম। অনেকেই এসে গেছে। বিরাট টেবিল। চারপাশে বসার ব্যবস্থা। সবাই দাড়িয়ে সালাম বিনিময় হল।
'আঁরা এক্কানা আইর' বলে আমার হাতে একটা টান দিয়ে নিয়ে চললো। জানলাম গতরাতে মান্নান ভাই (শহর আওয়ামী লীগ সম্পাদক) ও মহিউদ্দীন এসে দেখা করে গেছে।
সঠিক দরজায় নক করতেই ভেতর হতে সেই গুরু গম্ভীর আওয়াজ। আয়। যেন আশা করে ছিলেন মহিউদ্দিন আসবে।।
সালাম দিলাম। 'কি রে ভাল আছিস? সামনে বিছানায় বসা সেই মহীরুহ। যাকে ছবিতে দেখেছি কিন্তু সত্যি দেখি নি। দুরুদুরু বুকে বলেছিলাম মনে হয় ভালো। মহিউদ্দিন কে সামনের সোফাতে বসতে বলে আমার হাত ধরে বিছানায় বসালেন। বললেন ' সাহস আছে? সাহস থাকতে হবে। ভয় করলে চলবি না। সামনে কঠিন সময়। ছয় দফা দিছি। তোরা ছাত্ররা আমার শক্তি। আন্দোলন এ নামতি হবে।' আমার পিঠে হাত। এরপর আরও দু চারটি কথা। এবার আমার উদ্দেশ্যেই ' তুই রাজনীতি করবি, আওয়ামী লীগ এ ডাক্তার নেতা নাই। মনে রাখিস। সবাই আসছ? যা তোরা আমি আসতাছি।"
তাকালাম তাঁর মুখের দিকে। চোখের দিকে তাকানোর সাহস করিনি।
তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা। গর্বে বুকটা আমার ফুলে উঠেছিলো। ডাক্তারদের অনেকেই জানেন না চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেই মেডিকেল কলেজগুলির মধ্যে প্রথম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয়। স্নেহাষ্পদ মহিউদ্দিন চৌধুরীর এর সহযোগিতা আমার আমৃত্যু মনে থাকবে।
আল্লাহ এই সংগ্রামী নেতাকে বেহেশত নসীব করুন। আমিন।
আপনার মতামত দিন: