Ameen Qudir

Published:
2019-02-22 11:50:46 BdST

শ্রদ্ধাঞ্জলিঅধ্যাপক ডা. ফারুক আলম: 'হি ইজ দ্য ব্যাকবোন অব সাইকিয়াট্রি'


 

 

ডা. ফাতেমা জোহরা
________________________

বিদায়,প্রস্থান,চলে যওয়া,অবসর নেয়া সবসময়ই কষ্টের।যদি সেই সেটা হয় প্রিয় মানুষের ক্ষেত্রে। আজ কথা বলব এমন একজন মানুষের যিনি দীর্ঘকাল আমাদের হাসপাতালের প্রফেসর এবং ডিরেক্টর ছিলেন।তিনি অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম স্যার।আমি যখন ২০০১ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট এ অনারারী ট্রেনিং এ ঢুকি তখন স্যার ছিলেন।তখন থেকে শুরু করে এই ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্যারের কাছে থেকে অনেক কিছু শেখা হয়েছে।দেখেছি অনেক কিছু। ফেব্রুয়ারির ঠিক মধ্য দিন। এ দিন ছিল স্যারের বিদায়।স্যার অবসরে যান এদিনে । সেদিন ছিল সবার চোখে পানি,সবার কন্ঠ বাষ্পরুদ্ধ!একজন মানুষ কতটা মহান হলে এমন হতে পারে!এই হাসপাতালের উন্নতির পিছনে স্যারের অবদান অনেক।হাসপাতালের প্রথম RP, প্রথম ডেপুটি ডিরেক্টর তিনি।হাসপাতালে তৈরী,প্রতিটি ইট,সিমেন্ট,পাথর সবকিছুর হিসাব আছে উনার কাছে।হাসপাতালের পদ নির্ধারণ,হাসপাতালের ফাউন্ডেশন করা,হাসপাতালের প্রজেক্টকে রাজস্বখাতে নিয়ে যাওয়া, হাসপাতালে ৬টা ক্লিনিক, ডে কেয়ার সার্ভিস, হাসপাতালের ভার্টিকাল এক্সটেনশন, আউটডোর এ রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধি, সকালের মর্নিং ও দুপুরের ইভনিং সেশন চালু করা,পরপর অনেকগুলো সার্ভে করা,হাসপাতালে ৭০% বিছানা নন পেয়িং করা,হাসপাতালে ইমারজেন্সীতে পুরুষ ও মহিলা আলাদা ভাবে করা, টেলিমেডিসিন সার্ভিস,ইন্সটিটিউট এর সামনে সাইনবোর্ডে হাসপাতালের সব ইনফরমেশন দেয়া,ডিজিটাল এনাউন্সমেন্ট,ডিজিটাল সাইনবোর্ড, NIMH ওয়েবসাইট তৈরী,CT scan ও MRI মেশিন আনা,২৫০ বেড বাড়ানোর জন্য আবেদন,বিভিন্ন ম্যানুয়েল তৈরী করা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সবকিছুর পিছনে স্যারের অবদান।সব ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করা,ফেল করলে পিছিয়ে না গিয়ে আরও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া,হাসপাতালের ডিরেক্টর হিসাবে প্রতিটা কাজ সময়মত করা,প্রতিদিন সকাল ৭.৪৫ মিনিট থেকে দুপুর ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকা,পরীক্ষার সময় ছাত্র ছাত্রীর যেকোন সমস্যাকে নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়ে সব দায়ভার নিজে বহন করতেন।তিনি সবসময়ই চাইতেন সবাই পাশ করুক, কেও যেন ফেল না করে। কেও ফেল করলে তার পুরা দায়ভার স্যার নিজের কাধে নিতেন। স্যার বলতেন,অপরাধের শাস্তি হয় কিন্তু ভুলের সংশোধন হয়।

এছাড়া ও মাদক নিয়ে Act, Mental Health Act এসব কিছুর পিছনেও স্যারের অবদান অনেক। স্যার খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন।যেকারো যেকোনো সমস্যা হোক প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত সব সমস্যা নিয়েই স্যারের কাছে যাওয়া যেত।ডিরেক্টর হিসেবে গুরুগম্ভীর হিসাবে না বরং একজন সদা হাস্যোজ্জল মানুষ হিসাবেও যে ডিরেক্টর হওয়া যায় স্যার তার জ্বলন্ত উদাহারন। তিনি নির্লোভ,তার চাওয়া শুধু অন্যদের ভাল হোক। তা সে হাসপাতালের রোগী হোক বা স্টুডেন্ট। শুধু হাসপাতালের ক্ষেত্রে নয়,ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি অসাধারণ বাবা,স্বামী, শ্বশুর। তিনি বলতেন তার স্টুডেন্টদের যে "তোমরা সকালবেলা আস আর দুপুরবেলা যাও।দুপুরের পর থাকলে বোঝা গেল যে তোমাদের সংসারে ঝামেলা আছে।অফিসের বাইরের সময়টুকু পরিবারকে দিবা"। আমাদের শ্রদ্ধেয় জালাল বলেন,"স্যার বলতেন দুইটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। গুছিয়ে ফেলা এবং ম্যানেজ করা।" শ্রদ্ধেয় নাজিমুদ্দৌলা স্যার উনার সম্পর্কে বলতেন " He is the backbone of the psychiatry". স্যার সবদিকেই সমানভাবে খেয়াল রাখতেন।

তবে শিক্ষকের কোন বিদায় হয়না।ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক চিরকালের।স্যার ইন্সটিটিউট থেকে চলে গেলেও স্যার সারাজীবন বেচে থাকবেন তার কাজের মধ্যে।স্যার কখনো রাগ করতেন না।উনার ইমশোন কন্ট্রোল করার ক্ষমতা অসাধারন। এটা আমাদের সবার থাকা উচিত।স্যার আমাদের সবাইকে হাতে কলমে শেখাতেন।এমন গুন সত্যি অসাধারণ। এমনকি স্যারের বাসায় গেলেও আতিথেয়তা অসাধারন হতো। কোথাও কাজের জন্য গিয়ে কারও রুমে থাকা নিয়ে সমস্যা হলে স্যার বলতেন নিজের রুমে থাকতে।স্যার শিখিয়েছেন রিস্ক না নিলে কোন কাজ করা সম্ভব না।স্যার শুধু স্যারই না,বরং একজন গুরুজন,বাবা,শিক্ষক,পরিচালক,বন্ধু সবকিছু। ভাল থাকবেন স্যার।

লেখক : ডা. ফাতেমা জোহরা
সুলেখক। পেশায় চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


প্রিয় মুখ এর জনপ্রিয়