Ameen Qudir
Published:2018-10-31 16:33:24 BdST
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম : বাংলাদেশে প্লাস্টিক সার্জারির নিভৃতচারী দিশারী
ডা: এ. হাসনাত শাহীন
_____________________________
আমি তাকে চিনি একটু অন্যভাবে। ইমপালস হাসপাতালে যোগদানের পূর্বে একজন চিকিৎসক হিসেবে তাকে চিনতাম স্বনামধন্য একজন প্লাস্টিক সার্জন হিসেবে। কিন্তু এখানে আসার পর আমার বন্ধু ও ব্যাচমেট তারই স্টুডেন্ট প্লাস্টিক সার্জন ডাঃ মোস্তফা আমিন খান সাকির মাধ্যমে সরাসরি সৌজন্য সাক্ষাৎ একদিন। সেদিন তার আরেকটি পরিচয় পেলাম, অকৃত্রিম আন্তরিকতার। পরিচয় পর্বেই উনি জেনে নিলেন আমি ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি ডিসিপ্লিন এ কাজ করছি। দাম্ভিকতা বিবর্জিত এই মানুষটির সাথে এরপর লিফটে, করিডোরে বা যেখানেই দেখা হত পরম আন্তরিকতা আর হাসিমুখে খোজ খবর জিজ্ঞেস করতেন। তার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন, তিনি কতটা নিভৃতচারী। এই দেশে প্লাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্ট এর উন্নতিকল্পে তার ভূমিকা অতুলনীয়। এই দেশে স্থাপিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে স্থাপনের কারিগরদের নাম জিজ্ঞেস করলে তার নামটি বোধহয় ৯৫ শতাংশ সাধারণ মানুষই বলতে পারবেন না। অথচ তার অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে দেশ- বিদেশে প্লাস্টিক সার্জারিতে বাংলাদেশি যারাই কাজ করছে তার বেশিরভাগই তার স্টুডেন্ট। নবীন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া, তাদের সুযোগ দেয়ার যে নির্মোহ, নির্লোভ বাসনা আমি তার মাঝে দেখেছি, বোধহয় তার স্টুডেন্টরাও এই কথাটি অকপটে স্বীকার করে নিবেন।
আমি আগেই বলেছি আমি তাকে চিনি একটু অন্যভাবে। এবার আসি সেই কথায়। পরিচয়ের পরপরই উনি তার ডায়াবেটিস ও হরমোন জনিত জটিলতার রোগি গুলো আমার কাছে রেফার্ড করতে শুরু করলেন। এই বিষয়ে এক যুগেরও বেশি কর্ম অভিজ্ঞতা থাকা স্বত্ত্বেও প্রথম প্রথম এই ভেবে কিছুটা বিচলিত হতাম, উনার মত একজন স্বনামধন্য প্রফেসরের আস্থা অর্জন করতে পারবো কি না? আল্লাহর অশেষ রহমত, রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অন্যান্যদের মত তারও আস্থা আমি অর্জন করতে পেরেছি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা হরমোনের কোন জটিলতা থাকলে এ সংক্রান্ত ব্যাপারে উনি রোগীর প্লাস্টিক সার্জারি করার পূর্বে বা পরে আমার মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন। এমনও দেখেছি তার মত এমন ব্যস্ত আর বড় সার্জন শুধুমাত্র আমার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে অপারেশন পোস্টপন্ড করে দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আমি এ ধরণের মানুষগুলোর আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবুল কালাম স্যার, আমি হয়তো আপনার ডিসিপ্লিনের সরাসরি ছাত্র নই। কিন্তু আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি একজন শিক্ষকের মত। যার কাছ থেকে আমি শিখছি অমায়িকতা, নির্মোহতা, কর্মের মূল্যায়ন ও যোগ্যতরকে যথাযথ মূল্যায়ন ও সম্মান করার শিক্ষা, হোক না সে নবীন। এই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যদি এ রকম কিছু সিনিয়র পথ প্রদর্শকের সমাবেশ ঘটে, তবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জনে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
_______________________________
ডা: এ. হাসনাত শাহীন
মেডিসিন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: