Ameen Qudir
Published:2018-05-30 15:54:02 BdST
তাজিন আপা , আর দেখা হলোনা
ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
__________________________
আমাকে একসময় নাটকের নেশা পেয়ে বসেছিল। তখন আমার ফেসবুক ছিলনা। ব্লগও ছিলনা। লেখালেখির জায়গা ছিল লিটল ম্যাগ আর ডেইলি পেপার। পত্রিকায় লিখতে হত স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখা। ওতে আমার মন ভরতনা। লিটলম্যাগে গল্প লিখতাম। ভাল লাগতো। কিন্তু মনে হতো আমি যা বলতে চাই তা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে এবং ভালভাবে পৌঁছাতে হলে নাটক হতে পারে একটা ভাল মাধ্যম। আমি নাটক লেখা শুরু করলাম।
আমার সেই নেশা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অল্প কিছু নাটক লিখেই আমি থেমে গেছি।
কেন আমার সেই নেশা স্থায়ী হয়নি সেটা একটু বলি। সবটা বলা যাবেনা।
নাটক লিখতে হয় অনেকগুলি বিষয় মাথায় রেখে।
চ্যানেলের কথা মাথায় রাখতে হয়। কোন চ্যানেল কোন ধরণের নাটক পছন্দ করে সেটা ভাবতে হবে। নাটকের থীমে খুব কন্ট্রোভার্সিয়াল কিছু আনা যাবেনা। এন্ডিং টা পজিটিভ না হলে কিছু কিছু চ্যানেল আপত্তি করে।
শুটিং জোন নিয়ে ভাবতে হয়। মানে গল্পটা এমন যেন না হয় যে অনেকগুলি লোকেশনে গিয়ে শ্যুট করতে হবে। একটা লোকেশনে হলে সবচে ভাল। সর্বোচ্চ দুটো। নাহলে খরচ বেড়ে যাবে। ইনডোরে সেরে ফেলতে পারলে সবচেয়ে ভাল। আউটডোর হলে যেন আশেপাশের পার্কেই সেরে ফেলা যায়। দূরে গ্রামে যেতে হলে সমস্যা।
কাস্টিং নিয়ে সবচেয়ে বড় বিপদ। অমুক অমুক নায়ক নায়িকার এখন টিআরপি ভাল। চ্যানেল এদের পছন্দ করে।
গল্পটা যেন পছন্দের নায়ক নায়িকার সাথে ম্যাচ করে। মানে পরিচালক ভেবে রেখেছেন অপূর্ব বা সজলকে নেবেন। চ্যানেলও চায়। কিন্তু আপনার গল্পের নায়ক গ্রামের ছেলে, তাহলে অসুবিধা।
একটা নাটকে দুটো প্যারালাল মেইল ক্যারেক্টার থাকলে সমস্যা। দুজন স্টার নিতে হবে, খরচ বেশি। ফিমেল ক্যারেক্টারের ক্ষেত্রেও একই বিপদ।
প্যারালাল ক্যারেক্টারে কারো লেংথ কম কারো বেশি হলে বিপদ। স্ক্রিপ্ট তো কেউ আগে পড়েনা। নাটক শুরু করার পর নায়িকা বলে বসতে পারে "আমার ক্যারেকটারের ডিউরেশন তো কম। আমি করবনা এই বালের নাটক। "
আমি একটা নাটক লিখেছিলাম। নাম "পেয়িং গেস্ট'। এক নববিবাহিত তরুন দম্পতি, যার স্বামীটি একজন স্বল্প আয়ের চাকুরে, বাসা ভাড়া বাঁচাতে একজন পেয়িং গেস্ট/ সাবলেট নেবে। পেয়িং গেস্ট মাঝবয়সী মহিলা হলে ভাল।
পেয়েও যায় তারা।
সেই মাঝবয়সী মহিলা হঠাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু টাকা পেয়ে যায় যা নিয়ে শুরু হয় সেই স্ট্রাগলিং চাকরিজীবী তরুনের ভেতর এক মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন।
নাটকের কাস্টিং চূড়ান্ত হলো। তরুনটি সজল- সে সময়ের একনম্বর নায়ক।
তরুনের স্ত্রীর চরিত্রে তৎকালীন সদ্য লাক্স সুপারস্টার বিদ্যা সিনহা মীম।
পেয়িং গেস্ট - তাজিন আহমেদ।
শ্যুটিং শুরু হবার পর দেখা গেল মীমের চরিত্রে গ্ল্যামার হয়ত আছে কিন্তু ইম্পরট্যান্স কম। মূল ফোকাস ঐ পেয়িং গেস্ট মানে তাজিন আহমেদ।
মীম বেঁকে বসল প্রথম দিন শ্যুটিং করার পর। বহু কষ্টে ম্যানেজ করা হল।
নাটক বানানো হল।
তাজিন আহমেদকে নিয়ে টেনশন শুরু হল। উনার টি আরপি তেমন নেই। চ্যানেল বলে মেইন ক্যারেক্টার উনি। কেমনে হবে?! এইখানে অমুক হইলেও চালাইতে পারতাম।
পরিচালক আমাকে বলে ভাই কি সমস্যায় পড়লাম কন তো দেখি!
যাইহোক শেষে নাটকটি বিটিভিতে চলেছে। তাজিন আপার সাথে আমার সরাসরি দেখা হয়নি। আমি শ্যুটিং এর দিন ছিলামনা। পরিচালককে বলেছেন "রাইটারকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাবেন। এরাউন্ড ফরটি কাউকে সেন্ট্রাল ক্যারেকটার বানিয়ে নাটক লিখেছেন- ভাল্লাগছে। আর আমি ভেবেছিলাম পেয়িং গেস্টকে নিয়ে প্রেমট্রেম, স্ক্যান্ডাল এইসব হবে। কিন্তু পরে দেখলাম অন্য বিষয়। এটাও ভাল্লাগছে।"
আমি পরিচালক মারফত তাঁর কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করেছি। প্রতিউত্তর দিতে পারিনি। ভেবেছিলাম কোন একদিন নিশ্চয়ই দেখা হবে। হলোনা। উনি চলে গেলেন, খুব তাড়াতাড়ি।
আহা এই সন্ধ্যা বিষণ্ণতায় ভরে গেল।
____________________________

আপনার মতামত দিন: