Ameen Qudir
Published:2018-01-07 17:16:35 BdST
বাংলাদেশের নাইটিঙ্গেল : বাংলার মাদার তেরেজা এই লুসি হেলেন
ডা. সুলতানা আলগিন
_______________________
মাদার তেরেজার মত তিনি এই বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষের কেউ নন। এশিয়ারও নন।
মানবতার মহান ধর্মের টানে মানবতার জন্য তিনি ছুটে এসেছেন সুদুর ইউরোপ থেকে।
আজ থেকে ৬৭ বছর আগে। সেবা করেছেন বাংলাদেশের মানুষের। অবিরাম সেবা। সেজন্য নিয়েছেন কুমারীব্রত। সেবাই যে তার ধর্ম।
অামরা কি সম্মানিত করতে পেরেছি এই বাংলাদেশের মাকে। মাদার তেরেজাকে।
মাদার তেরেজা নোবেল পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছেন।
লুসি হেলেনের মাধ্যমে আমরাও তেমন বিশ্বপরিবারে সম্মানিত হতে পারি। তিনিও পেতে পারেন নোবেল পুরস্কার। এনে দিতে পারেন বাংলাদেশকে সম্মান।
সেজন্য আগে বাংলাদেশে তাকে সম্মানিত করা চাই।
অথচ পুরস্কার তো দূরের কথা ; লুসি হেলেন সামান্য বাংলাদেশ নাগরিকত্ব পর্যন্ত পাচ্ছেন না।
এতই হতভাগ্য এই দেশ আমার। এত হতভাগ্য এই বাংলাদেশ জননী আমার। আমরা জননীকে দিতে পারি না সম্মান। তখন কেমন করে বিশ্বসম্মান বয়ে আনব।
সেই ১৯৫০ সালে কুড়ি বছরের তরুণি লুসি হেলেন ক্যাথলিক চার্চের নান হয়ে এদেশে এসেছিলেন ।
বাংলার মানুষকে বড্ড ভালোবেসেছিলেন এই বৃটিশ তরুণি। সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করেছেন নানা হাসপাতালে।
যুদ্ধের সেই দিনগুলোতে যখন ডাক্তার-নার্সের সংকট, লুসি সেবিকা হলেন নির্যাতিত মানুষের, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেন অকাতরে । লন্ডনে চিঠি লিখলেন বারবার তাঁর সব পরিচিতজনকে, তুলে ধরলেন পূর্ববাংলায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস নির্যাতনের খবর। জনমত গঠনে তাঁদেরকে আবেদন করলেন বারবার।
কিন্তু কি বিস্ময়। তিনি নাগরিকত্ব পেলেন না। কত জন কত উপাধি পেল। লুসি কোন সম্মান পেলেন না। সে ছিল বাংলাদেশেরই অাত্মঅসম্মান।
সিস্টার লুসি ফিরে গেলেন বরিশালের চার্চে।
এদেশকে লুসি দিয়েছেন তাঁর যৌবন, তাঁর পৌঢ়ত্ব, তাঁর গোটা জীবন।
এ মাটিতে কাটিয়েছেন ৬৭টি বছর।
বয়স ৯০ এর কাছাকাছি।
বড় সাধ তাঁর এই দেশের নাগরিক হয়ে এমাটিতে শয্যা নেবেন।
কিন্তু তাঁর নাগরিকত্বের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান করছে আমাদের রাষ্ট্র। তিনি নাগরিক হতে পারছেন না এদেশের।
এই বৃদ্ধাকে প্রতিবছর ৩৮ হাজার টাকা জমা দিয়ে তাঁর ভিসা রিনিউ করতে হচ্ছে।
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়ানো এই চির সন্যাসী বৃদ্ধার জন্য ৩৮ হাজার টাকা জোগাড় করাটাও বড্ড কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
__________________________
ডা. সুলতানা আলগিন । সম্পাদক , ডাক্তার প্রতিদিন।
আপনার মতামত দিন: