Ameen Qudir
Published:2017-07-31 18:02:35 BdST
রফি সাহাব : এই দিল হ্যায় মুশকিল
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য স্যানাল _______________________________________ জুলাই মাস এলেই যে দুজনের কথা মনে পড়ে- তাঁরা হলেন, উত্তমকুমার আর মহম্মদ রফি । দুজনেই পঞ্চান্নর কোঠায় চলে যান । হৃদরোগে মারা যান দুজনেই । দুজনের মধ্যে আরও একটা মিল হলো :- মৃত্যুর ৩৭ বছর পরেও এঁরা জনমানস আচ্ছন্ন করে রেখেছেন – এখনও । তানসেনের গান শোনার সৌভাগ্য হয় নি, হওয়ার কথাও নয়, তবে - সঙ্গীত পরিচালক নওসাদ আলি তাঁকে ভারতের আধুনিক তানসেন আখ্যা দিয়েছিলেন। মহম্মদ রফির বয়স তখন পঞ্চান্ন। হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে যান রফিসাব। মান্না দে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন :- বাংলা গানে আমি যত শক্ত গানই করি, সেটা জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু হিন্দিতে ব্যপারটা এমন না। সেখানে আমি ছিলাম বহিরাগত। হিন্দি ভাষায় বাঙালি হয়ে গান গাইতাম। যাদের ভাষা ছিল হিন্দি তারা অনেকটাই এগিয়ে ছিল। যেমন রফি ছিল পাঞ্জাবী, হিন্দি উর্দু ওর স্বাভাবিকভাবেই আসত। আমি সেটা মেনে নিয়েছিলাম। কারণ, রফির মতো গায়ক ভারতবর্ষ পায়নি। একজন বড় গায়ক আরেকজনের প্রতি এরকম খোলামেলা ভাবে স্বীকার করছেন, এটা ভাবা বর্তমানে কেন যেন বিশ্বাস হয় না । রফি সাহেবের গান কিন্তু কোনো দিনই রফির গান বলে পরিচিতি পেয়েছে বলে আমার জানা নেই ! যখন যে নায়কের কণ্ঠে গেয়েছেন, তখনই সেটা সেই নায়কের গান বলেই পরিচিতি পেয়েছে । গীতা দত্ত-মহম্মদ রফি’র গাওয়া ডুয়েট ‘আাঁখো হি আঁখো মে’ গানটি জনপ্রিয়তা পেলেও সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় হয়েছিল ‘সি আই ডি’-র অন্য আরেকটি ডুয়েট: ‘অ্যায় দিল মুশকিল…ইয়ে হ্যায় বম্বে মেরি জান’। বিনাকা গীতমালা’য় জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রথম হয়েছিল এই ডুয়েট । তদানীন্তন বোম্বেতে যে ডবল ডেকার ট্রাম চলত, তার সাক্ষী হয়েছিল এই গানের চলচ্চিত্রায়ন । দুর্মর রোমান্টিসিজমে আচ্ছন্ন করে শ্রোতাদের৷ হিন্দি সিনেমার গানে টানার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল রফি সাহেবের । বম্বেতে একটা সময় ছিল- মাতালের মুখের গান মানেই মহম্মদ রফি। সলিল চৌধুরী নিজেও ‘দো বিঘা জমিন’-এ জনি ওয়াকারের মুখে রফিকেই গাইয়েছিলেন। আর প্রেমের গান ? কত বলি ? পাঠকরা সেই সব গান আজও শোনেন , কোনো একটা গানকে শ্রেষ্ঠ বলা যাবে না । সবই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ । অনায়াসে উঁচু সপ্তকে সুর খেলাতে পারতেন‚ রফি সাব। ও দুনিয়াকে রখওয়ালে - গানটা শুনে দেখবেন । ব্যক্তিগত ভাবে আমি অন্য একটা গানের কথাই বলবো :- কলাবতী রাগে স্বর লাগছে স গ প ধ ণ । এই রাগে অনেকেই গান গেয়েছেন । মহম্মদ রফি -----দিল দিয়া দর্দ লিয়া ছায়াছবিতে গেয়েছেন কলাবতী রাগের গান 'কোই সাগর দিল যো বহলাতা নহি!! দীর্ঘ ৩৫ বছরের কেরিয়ারে শচীন দেব বর্মন,সলিল চৌধুরী, শঙ্কর-জয়কিষেণ, লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল, ও পি নাইয়ার প্রায় সব বড় বড় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেই কাজ করেছেন রফি। সাদা হাফ সার্ট আর ঢোলা প্যান্ট ছিল রফি সাহেবের প্রিয় । সখ বলতে ভোর বেলা ব্যাডমিন্টন খেলা । রয়্যালটি নিয়ে একটা গণ্ডগোল হওয়াতে লতাজী, রফি সাহেবের সঙ্গে তিন বছর গান গান নি । তখন রফি সাহেবের সাথে গাইতেন- সুমন কল্যাণপুর ! আশা ভোঁসলের সাথে রফি সাহেবের অনেক গানই আছে অমর হয়ে । লিখে শেষ করা যাবে না---- এই কিংবদন্তী গায়কের কথা । প্রসঙ্গত আজই [৩১/০৭/২০১৭] আনন্দবাজার পত্রিকায় -সুরঞ্জন চৌধুরী কলকাতা-৯৭ থেকে লিখেছেন :- রফি সাবকে নিয়ে । আপনাদের পড়ার জন্য কপি +পেষ্ট করলাম । === দিল কি আওয়াজ... বছর ছয়েক আগে নন্দন-২-তে ফিল্ম ডিভিশনের তথ্যচিত্র ‘মহম্মদ রফি’ দেখতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। প্রথমত, ছোট প্রেক্ষাগৃহে লোকে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে একটা সাদা-কালো ডকুমেন্টারি দেখছে, কারণ সিট সব ভর্তি। দ্বিতীয়ত, পরদায় রফি যখনই গান শুরু করছেন, তখনই লাইভ জলসার মতো দর্শক-শ্রোতারা প্রবল হর্ষধ্বনি করে উঠছেন, অবিকল যেমন অতীতে নেতাজি ইন্ডোর, ব্যারাকপুর বা আসানসোলের জলসায় হত। তৃতীয়ত, ছবি শেষ হওয়ার পর বাইরে এসে মানুষের ক্লান্ত অথচ উজ্জ্বল মুখে জোরালো আলোচনা ও গানের কলি। যেন জলসা-ফেরত মানুষের উল্লাস। মনে হচ্ছিল, সেই ষাট-সত্তরের দশকে ফিরে গিয়েছি। রফির গানগুলো কিছুতেই বুড়ো হচ্ছে না। এ কি শুধুই সংগীত প্রতিভা? কালজয়ী সুর? না কি এ সবের অতীত কোনও আত্মিক-আধ্যাত্মিক রহস্য? রফির জনপ্রিয়তা নিয়ে অজস্র আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁর আধ্যাত্মিকতা নিয়ে বেশি আলোচনা শোনা যায়নি। প্রামাণ্য সূত্র-নির্ভর গোটাকয়েক গল্প। স্নেহভাজন মহেন্দ্র কপূরকে রাত বারোটার আকাশ দেখিয়ে মহম্মদ রফি বলেছিলেন, ‘এই যে দেখছ আকাশ, চাঁদ, তারা? এগুলো যে বানিয়েছে, গান সে-ই দিয়েছে। সে না চাইলে গান কেন, গলা দিয়ে থুতুও বেরোবে না।’ লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, ‘আমার দাবি ছিল যারা গান গায়, তাদের গানের রয়ালটি দিতে হবে। কিন্তু রফিসাহেবের সঙ্গে মনান্তর হল। উনি বললেন গান করে এক বার পয়সা নিয়েছি, আবার কী! মুঝে অউর প্যায়সা নহি চাহিয়ে।’ ও পি নইয়ারের সুরে রফির বিখ্যাত ‘দিল কি আওয়াজ ভি সুন’ গান ছাড়া ‘হামসায়া’ ছবিটা কেউ মনে রাখেনি। সুপার-ফ্লপ। প্রযোজক-পরিচালক-নায়ক জয় মুখোপাধ্যায়ের বাজারে অনেক ধার। এমতাবস্থায় জয়ের বাড়িতে এক সন্ধেবেলা মহম্মদ রফির আগমন। ‘হামসায়া’ ছবির পারিশ্রমিক তিনি ফেরত দিতে এসেছেন, যদি জয়ের একটু সুরাহা হয়। জয় স্তম্ভিত, কিন্তু টাকা ফেরত কোনও মতেই তিনি নেবেন না। রফি চুপ করে থাকলেন কিছু ক্ষণ। তার পর সেই বিখ্যাত মৃদু হাসি হেসে জয়ের হাতে টাকার খামটা দিতে দিতে বললেন, ‘দিল কি আওয়াজ ভি সুন!’ নায়ক নিরুত্তর। রফির বাক্সংযম? সুলতান মেহমুদের সঙ্গে জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার। সুলতান অনুযোগ করেছিলেন, রফিসাব আপনি এত কম কথা বলেন যে, ইন্টারভিউ নিতে বড় অসুবিধে হয়। রফির উত্তর ছিল, ‘কী করব, আমার গলার আওয়াজটা তো ভাল নয়, তাই কথা কম বলি। এই গলা নিয়ে আমি কখনওই রেডিয়ো-তে ঘোষকের চাকরি পেতাম না।’ যে কণ্ঠস্বরকে পরিচালক মনমোহন দেশাই বলেছিলেন ‘খুদা কি আওয়াজ।’ মাত্র ৫৫ বছর বয়সে শ্রাবণের আকুল বিষণ্ণ সন্ধ্যায় চলে গেলেন, লতার ভাষায় এই ‘ভগওয়ান কে আদমি।’ সত্যিই তো। নইলে ‘ইভনিং ইন প্যারিস’ বা ‘বহারোঁ ফুল বরসাও’ গেয়েছেন যিনি, তাঁর পক্ষে কী করে গাওয়া সম্ভব হল ‘তেরে ভরোসে নন্দলালা’-র মতো ভজন? ক’জন পারেন? === মৃত্যুদিনে প্রণাম
আপনার মতামত দিন: