Ameen Qudir

Published:
2017-07-29 20:02:15 BdST

হুমায়ূন আহমেদ এবং আজকের প্রত্যাশা


 

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

 

__________________________

 


১ সময়টা ছিল সত্তর দশক। বাংলাদেশের কাব্য জগতের সূর্য তখন মধ্যগগনে জ্বলজ্বল করছিল। রাহমান - মাহমুদ - গুণ প্রমুখেরা প্রবল হুংকারে রণদুন্দুভি বাজাচ্ছিলেন। অথচ, কথা সাহিত্য ছিল ঊষর মরু। অখ্যাত এক লেখক হুমায়ূনের লেখা বেরুল। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার। পাঠকেরা বিপুল সম্ভাবনাময় নুতন ঘোড় সওয়ারের আগমনী বারতা শুনতে পেলেন। আহমেদ সফার মত প্রাজ্ঞজনকেও একই আশাবাদ উচ্চারণ করতে শোনা গেলো।


২।বই বিমুখ পাঠকেরা ফিরে এল আপন ডেরায়। ভালবেসে বুকে তুলে নিল হুমায়ূনকে। খুঁড়িয়ে হাঁটা প্রকাশণা শিল্প মেরুদণ্ড টানটান করে দাঁড়াল। একুশের বইমেলা তখন ভারতীয় লেখক আর জেমস হাডলী চেজের মত যৌনগন্ধী বইয়ে সয়লাব। সেই আগল খুলে মুক্তধারা বইয়ে দিলেন হুমায়ূন। পাঠক বইমেলা ঢুকতে লম্বা লাইন দিল। ঘন্টার পর ঘন্টা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ নেয়ার আনন্দে বিভোর হল পাঠককুল।
৩।হুমায়ূন সৃষ্টি করলেন বিচিত্র সব চরিত্র।হিমু, রুপা,মিসির আলি। রোগশোকে ভোগা, জীবন যুদ্ধ - এ ক্লান্ত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় তাঁর লেখনীতে খুঁজে পেল নিজের জীবনেরই আঁকা নানাবিধ ক্যানভাস।
৪।একঘেয়েমি ভরা টেলিভিশন পেল বহুমাত্রিক অনুষ্ঠানমালা। তাই বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় বের হলে মিছিল বের হল,টুনির মৃত্যুতে আকুল দর্শক খোদ লেখকেরই বিচার চাইলো।
৫।সকল তারকাদের মত হুমায়ূনের জীবনে শক্ত,কঠোর দিন এসেছিল। সেটি ঠেলে থিতু হয়েই এগিয়ে গেছেন এই ঘোড় সওয়ার। প্রকাশিত হল জোছনা ও জননীর গল্প,মাতাল হাওয়া, মধ্যাহ্ন। সিরিয়াস পাঠকদেরও তৃষ্ণা অনেকটাই মিটলো।
৬।এরপরের ঘটনা আমাদের সবারই জানা। মরণঘাতী ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হলেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি। বিক্রিত বইয়ের সংখ্যার মানদন্ডে তিনি সম্ভবত শরতকেও ছাড়িয়েছিলেন।
৭।কথার তুবড়ি ফোটানো আর টেবিল ভেঙে ফেলা সমালোচকরা তাঁর লেখার শিল্পমান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও নুতন কোন কথা সাহিত্যিকের মানচিত্র আজো খুঁজে পেল না বাংলাদেশ।
৫।হুমায়ূন চলে যাওয়ার পাঁচ বছর পেরিয়েছে। বাংলাদেশের কথা সাহিত্য তার দারিদ্রের ভিতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় বই বিমুখ নুতন প্রজন্মকে বইমুখী করতে আরেক হুমায়ূনের তীব্র প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে বাংলাদেশ।নুতন কোন হুমায়ূন বিশুস্ক সাহিত্যের ভুবনে প্রবল বারিপাত ঘটিয়ে মরুদ্যানের মিষ্টি হাওয়া বইয়ে দেবে, সেই প্রত্যাশায় আজো স্বপ্ন দ্যাখে বাংলাদেশ।

_____________________________

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ । সম্প্রতি

আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ইউনিটটি সেনা, নৌ,বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহারকৃত সকল খাদ্যসামগ্রী এবং ড্রাগ তথা ওষুধ পথ্য পরীক্ষা - নিরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযুক্ততা/ অনুপযুক্ততা নিরুপন করে।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

আপনার মতামত দিন:


প্রিয় মুখ এর জনপ্রিয়