Ameen Qudir
Published:2017-07-10 17:33:37 BdST
ঠিকুজি না মেলা একটি সফল দম্পতির গল্প
ডা. আশীষ দেবনাথ
_________________________________
১০ জুলাই ১৯৯৮ সাল। জীবনের সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনার দিন। কারন সেদিন মুক্ত আকাশে উড়ন্ত একটি পাখিকে জোর করেই খাঁচায় বন্দী করা হলো।
জীবনে বিয়ে করবো না এমন সুপ্ত বাসনা মনের মধ্যে ছিলই। তবে এই সিদ্ধান্তটা কঠিন ভাবে নেয়ার বিপক্ষ যুক্তি ছিল আমার কোন ছোট ভাই না থাকা। যাক, তখন চেম্বার নাম মাত্র করি। বর্নবাদে বিভক্ত হিন্দু সমাজ দেব নাথ পাত্রীর জন্য পাত্র খুঁজছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে পরিচালক হিসেবে রিটায়ার করা কিশোরগঞ্জ নিবাসী আমার শ্বশুর তখন বেগমগঞ্জ কৃষি প্রশিক্ষন ইনষ্টিটিউটের প্রিন্সিপাল। খবর পেয়েছে দেব নাথ পাত্রের। পাঠিয়ে দিয়েছে আমার চেম্বারে উনার কৃষি কর্মকর্তাকে। আমি প্রমাদ গুনি। সেদিন পরিচয় শেষে কোন রকমে বিদায় দেই।
বড় ভগ্নীপতির মধ্যস্থতায় মেয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হলো। তবে বিয়ের ব্যাপারে আমার দুটি স্পষ্ট নির্দেশনা ছিলো গার্ডিয়ানদের কাছে। ১) আমি একটাই মেয়ে দেখবো এবং সেটিই বিয়ে করবো ২) কোন যৌতুক চাওয়া যাবে না। স্বাভাবিকভাবেই তারা এমন ঘোষনায় অসন্তষ্ট। বড় ভগ্নীপতির ভাবনা, শালা আমার ডাক্তার। ১০টা দেখে একটা বিয়া করামু!! যাক আমি গোয়েন্দা সূত্রে খবর নিয়ে নিলাম মেয়ে দেখতে কেমন! সিদ্ধান্ত হলো রাতে দেখার। আমি বেঁকে বসি। কারন তখন চরম লোডশেডিং এর ভিতরে কি জানি ধরাইয়া দেয়!! অাশ্বস্ত করা হলো তাদের বাসায় জেনারেটর আছে।
যাক মেয়ে দেখা হলো। আত্মীয়দের কথা মাত্র একটা দেখা হলো! এদিকে চৌমুহনী বাজারের বিগ মার্চেন্ট মেয়ে সহ টাকার বস্তা নিয়ে বসে আছে। আমার ধমকের চোটে সব ঠান্ডা। আমার সিদ্বান্ত বিয়ে আমি এখানেই আমি করবো।
এবার ঠিকুজি মিলানোর পালা। ওদের এলাকায় এমন কোন সিষ্টেমই নেই। তাই ঠিকুজিও নেই। তাই ওরা একটা ভূয়া ঠিকুজি বানিয়ে আমাদের দিল। যদিও এটা পরে জেনেছি। আমার ভাগ্নে আমার ঠিকুজিসহ ঠাকুর মহাশয়ের কাছে গেল। ফলাফল ঠিকুজি মিলল না। ভাগ্নেকে বলি মা'কে একথা তো জানানো যাবেই না। ঠাকুর মশাইকে বলবি ঠিকুজি মিলেছে যাতে এটা ঘোষনা দেয়। সেভাবেই সব ঠিকঠাক হলো।
বিয়ের দিন কাট্টা উপবাস থেকে বিয়ে করতে হয়। রাত ২টায় লগ্ন। মানে আমাকে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা অভুক্ত থাকতে হবে। এটা আমি মানি কিভাবে? জীবনে বিয়ে করবো একবারই তাও খালি পেটে? অসম্ভব!! দুপুরে কাউকে না জানিয়ে হোটেলে গিয়ে মুরগীর মাংশ দিয়ে ভাত খেয়ে নিলাম।
তারপর! জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম না মানা এই পাখিটিকে রাতের ঝলমলে আলোতে খাঁচায় বন্দী করা হলো ঠিক সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার মতো। আজ তার ২০ তম বছরে পদার্পন।
দুটি ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাল আছি আমরা। যদিও আমাদের একটু ঝগড়াঝাটি দেখলেই মায়ের দীর্ঘ নিঃশ্বাস উনার রুম থেকে শুনতে পাই, "আহারে ঠিকুজিটা মিলেনি"!! কারন পরে ঘটনা জানাজানি হয়ে গিয়েছিল।
জীবনে অল্পতেই খুশী থাকা এই অসংসারীর সফলভাবে বিবাহের ২০ তম বছরের পদার্পনের মূল কারিগর ঠিকুজী না মেলা মেযেটি শ্রী মতি পল্লবী দেবী। আমরা আপনাদের আশীর্বাদ প্রার্থী।।
____________________________
লেখক ডা. আশীষ দেবনাথ
বিশেষজ্ঞ এনেসথেসিওলজিষ্ট, নোয়াখালী। সিএমসি ২৮।
আপনার মতামত দিন: