Saha Suravi
Published:2024-12-02 10:41:05 BdST
" সহজ সাবজেক্ট গাইনী"
ডা. তারিক অনি লিখেছেন , নিজের ইন্টার্ণ লাইফের ঘটনা। তাঁর লিখিত অনুরোধ ,"পাঠক দয়া করে জাজমেন্টাল হবেন না, ক্ষমাসুন্দর হাস্যরস খুজবেন। তবে বলে রাখি এখন আমি আগের মত অশিক্ষিত নই। রেফার করে দেই !"
ডা. তারিক অনি
——————————————-
ইন্টার্ণী করছি। গাইনী আউটডোরে প্লেসমেন্ট হয়েছে। ২ ঘন্টার মধ্যেই বুঝে গেলাম, আমার যে গাইনীর জ্ঞান সেটা দিয়ে রোগী দেখা সম্ভব না।
সব রোগীর ই পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যা। এরচেয়েও ডিফিকাল্ট হিস্ট্রি নেওয়া। হিস্ট্রি নিতে গেলে আরও পেচিয়ে যায়। গ্রাম কি শহর, জোয়ান কি বয়ষ্ক, সবাই সব প্রশ্নের একই “হ্যা” উত্তর দেয় ! যাই জিজ্ঞেস করি মাথা নাড়ে।
মাসিক কি প্রতিমাসে হয় ?
- হয়
রক্ত কি বেশি যায় ?
- জ্বী স্যার বেশি
কতদিন পর পর রক্ত যায় ?
- স্যার প্রতিদিন ই ব্লাড যায়
এই না বললেন মাসিক প্রতিমাসে হয়?
- স্যার মাসেও হয় আবার প্রতিদিন ই হয় !!
আমি গোল্লাপাট্টা খেতে থাকলাম। ঢাকা মেডিকেলের গাইনী আউটডোরে একেক রুমে তখন ১০০ রোগীর লাইন। আমি ২ ঘন্টায় কোনমতে ২ টা রোগী দেখেছি। তাও গাইনী আপুদের সাথে কনসাল্ট করে করে। এভাবে তো চলতে পারে না!
আমাকে উদ্ধারে এক গাইনীর এক সুন্দরী সিনিয়র আপু এগিয়ে এলেন। আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন, যা খাতা কলম নিয়ে আয়। গাইনী শিখিয়ে দিচ্ছি।
আমি পুরো এমবিবিএস এ যা শিখতে পারিনি, উনি আমাকে ১০ মিনিটে শিখিয়ে দিলেন। আমি তো অবাক! এত্ত সোজা !
আপু ডেমো দিয়েছিলেনঃ
শোন, গাইনীর রোগীর একটাই সমস্যা - পিরিয়ডের সমস্যা।
তাহলে তোকে প্রথমেই বুঝতে হবে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ টা আসলে কি ? এটা কি ব্লাড নাকি অন্যকিছু। কনফার্ম হতে হবে। জিজ্ঞেস করবিঃ লাল না সাদা।
লাল মানে তো বুঝতেই পারতেসিসঃ ব্লিডিং।
আর সাদা স্রাব মানেঃ ইনফেকশন।
এবার ট্রীটমেন্ট।
ব্লিডিং এর সমস্যা বললেই নরমেন্স ট্যাবলেট দিবি। ডোজ ও সহজ।
৩+ ৩ + ৩
২+ ২+ ২
১+ ১+ ১
১+ ০ + ১
মনে কর, এভাবে মনে কর একটা তিন মাসের টেপারিং কোর্স দিলি। এরপর আবার ফলোআপ। ব্যাস। ব্লিডিং এর ধরণ বুঝে ডোজ একটু বাড়াবি কমাবি। বেশি ব্লিডিং, বেশি নরমেন্স। কম ব্লিডিং, কম নরমেন্স।
আর রোগী যদি বলে সাদা স্রাবঃ বুঝবি ইনফেকশন। ইনফেকশন মনে হলেই এন্টিবায়োটিক দিবি। নামঃ সেকনিড ডিএস। আর কাউন্সেলিং করবিঃ স্বামীর সাথে ২ সপ্তাহ মিলামিশা করবেন না।
যা এবার রোগী দেখা শুরু কর! আউটডোরে রোগী জমে যাচ্ছে। সমস্যা হলে ম্যাডামের রুমে আছি আমি।
আমি হাসিমুখে রোগী দেখা শুরু করলাম। পরের এক ঘন্টায় নিজে নিজেই গোটা বিশেক রোগী দেখে ফেললাম! রোগী দেখছি আর ভাবছি গাইনী এত্ত সহজ !! গাইনীতেই ক্যারিয়ার করবো কি না সেটাও মনে মনে ভাবছি ….
১।
- মা, আপনার কি সমস্যা ?
- পিরিয়ডে রক্ত যায় ….
- নরমেন্স ….
২।
- মা আপনার কি সমস্যা ?
- মাসিকে সাদা স্রাব যায় ….
- সেকনিড ডিএস। স্বামীর সাথে মিলামিশা করবেন না।
৩।
দুই-চারজন এ্যটিপিকাল মিক্স রোগী ছিল। এদের লাল রং, সাদা রং দুটোতেই সমস্যা। তাতে কি ? আমি এখন গাইনী তে এক্সপার্ট। নিজের বুদ্ধি খাটালাম। কম্বো থেরাপি।
নরমেন্স+ সেকনিড ডিএস+ স্বামীর সাথে মেলামেশা বন্ধ।
আউটডোর ভালোই চলছিলো। সমস্যা হল এক বুড়ি কে নিয়ে। শুনে মনে হল তার সম্ভবত ইনফেকশন। আমি সেকনিড ডিএস লিখে বললাম, শোনেন স্বামীর সাথে মেলামেশা বন্ধ!
- স্যার, কুদ্দুসের বাপ তো মারা গেছে মেলা বছর। স্বামী নাই গো বাবা …
- ঠিক আছে, বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিলামিশাও বন্ধ।
- স্যার আমরা গরীব মানুষ, বয়ফ্রেন্ড পামু কই ?
- ঠিক আছে, আপনার আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশি যেই থাকুক, সবার সাথে ২ সপ্তাহ মিলামিশা বন্ধ !!
রোগীনী বিদায় হল! আমি বুঝলাম গাইনী আসলে আমাকে দিয়ে হবে না। আমি সহজ সাবজেক্ট সার্জারী তে চলে এলাম !!
————————————————
ডা. তারিক অনি
ব্যাচ কে-৬১, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
রেজিস্ট্রার, জেনারেল সার্জারী।
ম্যাকায় বেজ হাসপিটাল, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া।
আপনার মতামত দিন: