DESK

Published:
2024-07-03 15:22:43 BdST

আটবারেও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পাসে বিফল ডা. আক্তারুজ্জামানের লাশ রমেক ডরমিটরিতে


 

ডেস্ক
______________

রংপুর মেডিকেল কলেজের (রমেক) শেখ রাসেল আবাসিক ভবন থেকে চিকিৎসক মো. আক্তারুজ্জামান (৫০) এর
মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই ভবনের পাচ তলার ৬ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আক্তারুজ্জামান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) নিউরোসার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রংপুর মেডিকেলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের একজন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তিন দিন থেকে রংপুরে অবস্থান করছিলেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, ডা. ‘আক্তারুজ্জামান পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন। সকালে ডরমিটরি থেকে জানানো হয়, আক্তারুজ্জামানের রুম থেকে পচা গন্ধ আর রক্ত আসছে। পরে বিষয়টি আমরা পুলিশ ও জেলা প্রশাসককে জানাই। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙে পুলিশ বিবস্ত্র অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে।’

জানা যায়, ডা. মো. আক্তারুজ্জামান নীলফামারীর পৌর শহরের উকিলপাড়া আল হেলাল একাডেমি মহল্লার বাসিন্দা ও সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকেই এমবিবিএস পাস করেন।

এর আগে আটবার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন আক্তারুজ্জামান। কিন্তু কোনোভাবেই উত্তীর্ণ হতে পারছিলেন না। ফলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি দীর্ঘদিন ফ্যাটি লিভারে ভুগছিলেন।

আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী রংপুর নগরীর ধাপ শিমুলবাগ এলাকার কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘আমার সঙ্গে তিন দিন আগে মোবাইল ফোনে আখতারুজ্জামানের কথা হয়েছে। তখন তিনি নীলফামারীর বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। এর মধ্যে কবে তিনি রংপুরে এসেছেন, সেটা আমি জানতাম না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মৃত্যুর সংবাদ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এসেছি। তবে এখন পর্যন্ত বলতে পারছি না কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী, আমার কোনো সন্তান নেই। তার প্রথম স্ত্রীর সংসারে তিন সন্তান রয়েছে।’

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আরিফুজ্জামান জানান, চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

ডা মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির এক স্মৃতি লেখা য় জানান,২০১১ সালের কথা. নিউরোসার্জারি এমএস কোর্স শুরু করেছি কেবল. আক্তার ভাইকে তখন প্রথম দেখি. লিকলিকে রোগা একটা মানুষ, কথা বলেনা কারো সাথে, ডক্টরস রুম, লাইব্রেরিতে এসে একা একা বসে থাকে, কথা জিজ্ঞেস করলেও জবাব দেয়না. বোঝাই যায় অপ্রকৃতিস্থ. সিনিয়রদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম উনি অসুস্থ, বেশ ভালোই অসুস্থ. রোগটার নাম সিজোফ্রেনিয়া. বিএসএমএমইউর মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন.

কয়দিন পর লম্বা সময়ের জন্য গায়েব. আবার একটা সময় দেখলাম আসাযাওয়া করছেন, ওই আগের মতোই, একা একা এসে বসে থাকে, বই নাড়াচাড়া করে. শরীর মোটা হয়ে গেছে. জানতে পারলাম ঔষধের সাইড ইফেক্ট, সম্ভবতঃ রিসপেরিডন নিতেন, সাথে আরো কিছু, আমার ঠিক জানা নেই. একদিন দেখি ডক্টর্স রুমের বারান্দায় বসে বসে স্যান্ডেল ছিঁড়ে খাচ্ছেন, কথা বলার চেষ্টা করলাম, সিঙ্গারা আছে, কলা আছে ওগুলো খেতে পারেন তো... একটু হেসে উনার ড্রয়ার (ফাইলিং ক্যাবিনেট ছিল একটা রুমে, চারটা ড্রয়ার চারজন ব্যবহার করতো) খুলে প্রায় পঁচা একটা কলা আমার হাতে দিয়ে বললেন খাও, কলা খাও...  

তখন মনে হচ্ছিলো আরো তীব্র হয়েছে মনেহয় সমস্যাটা. খারাপ ভালো বুঝার ক্ষমতা হারিয়েছেন. নোংরা কাপড়ের উপর আরো নোংরা একটা এপ্রন পরে আসা যাওয়া করতেন. রোগী দেখার মতো বা অন্য কোন কাজ করার মতো অবস্থা ছিলই না. আসা যাওয়া করতেন কেবল. আজ শুনলাম উনি মারা গেছেন. ডিএফএম কোর্সে নাকি ছিলেন, সেটাও জানতাম না. পরীক্ষা দেয়ার মতো মানসিক অবস্থা উনার আরো আগে থেকেই ছিল না. এত অসুস্থ একটা মানুষ মেডিক্যালের পড়াশোনা, পোস্ট গ্রাড করবেন বা করার চেষ্টা করতে পারবেন সেটা একেবারেই অসম্ভব.

পাশ না করতে পেরে উনি স্যুইসাইড করেছেন এমনটা শুনলাম ফেসবুকের পোস্ট থেকেই. প্রফেশনাল মতামত দেয়ার অবস্থান আমার নেই, দিচ্ছিও না, তবে এইসবের অনেক আগে, বিএসএমএমইউ থেকে ২০১৬ তে বের হওয়ার সময় উনার যে অবস্থা দেখেছি, এতটা ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা উনার থাকার কথা ই না. একজন অসুস্থ মানুষকে ঘিরে এত রহস্য, কেমন যেন লাগছে. তাই লিখলাম.

সোসাইটি হিসেবে আমরা এখনো বেশ প্রিমিটিভ, মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে শিক্ষিত সমাজের এমনকি খোদ ডাক্তার সমাজের এত ট্যাবু, এত বিতিকিচ্ছিরি রকমের রিমার্ক্স মাঝেমধ্যে শুনি যে মনে হয় আমাদের সোসাইটি থেকে "ডাক্তার" হবার যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ আসলে খুব কম আছে. একাডেমিক সার্টিফিকেট নিয়ে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি, কিন্তু আমরাও অনেকেই প্রিমিটিভ, অনেকেই ইনসেন্সিটিভ এবং বর্ডারলাইন ক্রিমিনাল ও.

একসময় হয়তো আক্তার ভাই ও সুস্থ ছিলেন, আমরা যারা এখন সুস্থ আছি, একদিন হয়তো আমরাও এরকম অসুস্থ হবো. তখন যেন কেউ আমাদের শারীরিক নিরাপত্তা এবং উপযুক্ত মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটা করেন, এই নিশ্চয়তা চাই. উপযুক্ত আধুনিক মেন্টাল এসাইলাম চাই, একজন মানসিক রোগীর কষ্ট বহুমাত্রিক, তার পরিবার ও রোগী হয়ে যায়. এভাবে অযত্নে অবহেলায় মারা যাওয়াটা মেনে নেয়া কষ্টকর. উই হ্যাভ ফেইলড এজ এ সোসাইটি.

আইএমসি ০২/০৩

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়