Dr. Aminul Islam

Published:
2024-03-15 13:34:20 BdST

সাদি মোহাম্মদের মৃত্যু এবং নানা মুনির নানা মত বনাম চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য


 

অধ্যাপক ডা তাজুল ইসলাম
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রখ্যাত লেখক
_____________

সাদি মোহাম্মদ এর মৃত্যু এবং নানা মুনির নানা মত বনাম  চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য----

১। ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা শেফ ছিলেন বার্নাড লুইসিয়েভ। বিখ্যাত গল্ট মিলাউ হোটেল তার রেটিং কমিয়ে দেয়।
পরবর্তী সপ্তাহে তিনি আত্মহত্যা করেন -যা পুরো ফ্রান্স জুড়ে ঝড় তোলে।

কিন্তু প্রশ্ন ছিল "ঐ হোটেল কি গল্ট মিলাউকে হত্যা করলো?
মানে তার আত্মহত্যার পিছনে কি ঐ হোটেল দায়ী?

২। আত্মহত্যার পর সব জ্ঞানী, গুনী ব্যক্তিরাও এমনভাবে তাদের সামনে চলে আসা " বিশেষ "কিছু " বিষয়কে" ঐ আত্মহত্যার কারন মনে করে মিডিয়ায় নানা মত দিতে থাকে

৩। দেশে সবাই চিকিৎসক -কারো কোন শারীরিক সমস্যা হলে দেখবেন আপনার আশেপাশে সবাই কোন না কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা আপনাকে দিবে।
অনেকে আবার বিশেষ ডাক্তারের কাছে যেতে বলবে, যেন তারা যাদের "ভালো ও বিশেষজ্ঞ " ডাক্তার মনে করেন দেশে এরাই সেরা

৪। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে তা কি একটু শুনবেন?

৫। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে ; কিশোর কিশোরীদের আত্মহত্যা তাদের মৃত্যুর ৩য় সর্বোচ্চ কারন; বাংলাদেশে প্রতি দিন ২৬-৩৫ জন আত্মহত্যা করে ;আমেরিকায় মৃত্যুর ১১তম কারন আত্মহত্যা

৬। সারা বিশ্বে মানুষ দ্বারা হত্যা  বা এইডস এর কারনে মৃত্যুর হারের চেয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার বেশি

৭।সর্বোপরি আত্মহত্যার হারের চেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা (এটেম্পট)৩-৪ গুণ বেশি

৮। আত্মহত্যার আগে থাকে -আত্মহত্যার চিন্তা ও আত্মহত্যার পরিকল্পনা, পরে আত্মহত্যার চেষ্টা ;সর্বশেষে এদের কিছু মাত্র পূর্নাঙ্গ আত্মহত্যা করে থাকে(কমপ্লিট সুইসাইড)

আমরা শুধু ঐ কমপ্লিট সুইসাইড /আত্মহত্যা গুলো দেখি এবং এদের ও অতি নগন্য সংখ্যক মিডিয়ায় খবর হিসেবে আসে।

৯।মিডিয়ায় আসা আত্মহত্যার সংখ্যা কত কত কম নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। তারমধ্যে সাদি মোহাম্মদ এর মতন "আলোচিত" আত্মহত্যার সংখ্যা আরো কম
তাই আত্মহত্যা একটি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ "জন স্বাস্থ্য " সমস্যা - এটি সমাজ,দেশকে মেনে নিয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে
১০। চিকিৎসা বিজ্ঞান আত্মহত্যা নিয়ে কি বলে?

১১। ব্রেইনে "সেরোটোনিন " নামক নিউরোট্রান্সমিটার এর মাত্রা কমে গেলে -আত্মহত্যা সহ আবেগতাড়িত আচরণ বেড়ে যায়।

১১। আত্মহত্যার পিছনে মানসিক রোগ,সমস্যা দায়ী -৮০%,বিশেষ করে "ডিপ্রেশন /বিষন্নতা " রোগ।

১২। তীব্র ডিপ্রেশনের সঙ্গে আত্মহত্যার সম্পর্ক এতো জোড়ালো ও নিবিড় যে পূর্বের "মিথ" যে ভুল তা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত।

১৩. কি সে "মিথ"?
তাহলো মনে করা হতো (এখনো আমাদের দেশে মনে করা হয়) যে সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের হতাশা, ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

১৪। মনে রাখতে হবে সবদিক থেকে মানসিক ভাবে সুস্থ  মানুষ খুব কম ক্ষেত্রেই সরাসরি আত্মহত্যা করে, যদি না আবেগগত,মন-মেজাজগত, স্বভাবগত ব্যক্তিত্বের ত্রুটি না থাকে অথবা বংশধারার (জিনগত) প্ররোচনা না থাকে।

১৫। আরো থাকে অন্যান্য ম্যুড সমস্যা, আবেগ-তাড়না নিয়ন্ত্রণে সমস্যা (ইমপালস কন্ট্রোল ডিজঅর্ডার) ;পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (বর্ডারলাইন ডিজঅর্ডার) ; এবং চাপ মূলক ঘটনা (যা তার জন্য লজ্জাজনক, অপমানজনক,হেয়কর,গ্লানিকর)
১৬। আরো থাকতে পারে - মনোগত আক্ষেপ, বঞ্চনার অভিমান, অন্যদের বোঝা হয়েছে মনে করা;অন্যদের সঙ্গে  সংশ্লিষ্ট, অংশভুক্ত  না থাকার বেদনাবোধ

;সর্বোপরি "আশাহীনতা " (হোপলেসনেস)

# তাহলে নিজেরাই ভাবুন ও সিদ্ধান্ত নিন চটজলদি মন্তব্য বা চোখের সামনে দেখা কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিবেন না, এর গভীরে বিজ্ঞান সম্মত ধারনা গুলো বিবেচনায় নিবেন।

সবাই ভালো থাকবেন, নিজের ও চারপাশের সবার মনের যত্ন নিবেন ও খবর নিবেন।
কাছের মানুষ খোঁজ রাখলে অনেক লক্ষন আগে থেকেই বোঝা যায় ও সতর্ক হওয়া যায়

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়