ডেস্ক

Published:
2024-02-23 18:11:19 BdST

লাখ লাখ বাচ্চার মুসলমানি ডাক্তাররাই করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন,এটা ডাক্তারদেরই কাজ,হাজামের নয়


ডা: আহমেদ জোবায়ের

 

ডা: আহমেদ জোবায়ের
__________________

সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দুইজন শিশু বাচ্চা মারা যায়।
তারা হাজাম দিয়ে খৎনা করাতে যায়নি।যাদের মুসলমানি করার কথা, সেই সার্জনের কাছেই গিয়েছেন।
ফিরেছেন সন্তানের লাশ নিয়ে বুকফাটা আহাজারি করতে করতে।
গতকাল আমি আয়হামের খালার একটা ইন্টারভিউ কালবেলায় দেখলাম।
আয়হামের মায়ের কপাল চাপড়ানো আহাজারি দেখলাম।
চিকিৎসক পরিচয়ের বাহিরে আমিও একজন বাবা। আমি আমার সন্তানের সারকামসেশন আমার নিজের হসপিটালে সার্জনকে দিয়ে প্রটোকল মেনেই করিয়েছি।
আলহামদুলিল্লাহ,কোনো সমস্যা বা জটিলতা হয়নি।
কিন্তু একজন মায়ের সন্তান হারানোর এই আর্তনাদ দেখে স্থির থাকা অনেক কষ্ট।
যারা সন্তান হারিয়েছেন, তাদেরকে কোন ভাষাতেই সান্ত্বনা দেওয়া যায়না।তাদের গভীর দু:খবোধ ও কষ্টের জায়গাটা স্পর্শ করা যায় নিজেকে তাদের জায়গায় দাঁড় করালে।

শোকাবহ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

দেশে আসলে মুসলমানি নিয়ে হচ্ছেটা কি এমন প্রশ্ন অনেকের?
অনেকে নানা কন্সপাইরেসি থিউরিও হাজির করছেন।
দেশের মা বাবারা এমন ঘটনাগুলো জেনে আতংকিত হয়ে যাচ্ছেন।
এমনকি অনেক চিকিৎসক মা বাবাও তাদের সন্তানদের খৎনা করা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত, চিকিৎসকদের ক্লোজ গ্রুপে তাদের মন্তব্য থেকে এমন জেনেছি।

দেশে লাখ লাখ বাচ্চার মুসলমানি ডাক্তাররাই করছেন।
ভবিষ্যতেও করবেন।
এবং এটা ডাক্তারদেরই কাজ।
হাজামের কাজ নয়।
হাজাম দিয়ে মুসলমানি করাতে গিয়ে বাচ্চাদের শিশ্ন কেটে ফেলা,ইঞ্জুরি করা,অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া, প্রিসাইজলি কাটতে না পারা,ইনফেকশন হওয়া সহ নানাবিধ জটিলতার কারণ হাজাম দিয়ে খৎনায় হয়।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর পেডিয়াট্রিক সার্জারী বিভাগে গিয়ে খোঁজ করলে এমন অহরহ কেইসের সন্ধান পাবেন।
হাজাম দিয়ে খৎনা কোন সচেতন মানুষ কখনোই করাতে পারেন না।

প্রশ্ন উঠছে,উৎকন্ঠা নিয়ে মানুষ জানতে চাচ্ছে, ডাক্তার দিয়ে খৎনা করাতে গিয়ে আমার সন্তান লাশ হবার ঝুঁকি দেখা দিলে হাজাম ই কি ভালো নয়?

না হাজাম ভালো নয়।
কখনোই ভালো না।

যেই দুইটা বাচ্চা মারা গেছে, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার আছে।
অবহেলা ছিলো না বলছিনা।
সেগুলো সত্যি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

চিকিৎসকদের অধিক দায়িত্ববান ও মনযোগী হওয়া উচিত ছিলো।
এনেস্থিসিয়া দিয়েই মুসলমানি হবে।
প্রটোকল এর বাহিরে কিছু করার আর সুযোগ নেই।
প্রফেশনাল এটিটিউড এবং কেইস বাই কেইস পূর্ণ গুরুত্ব দিয়েই খৎনা করতে হবে ডাক্তারদের।

এখানে মিডিয়া ভিন্ন খেলায় মেতেছে।
এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এমনিতেই ভঙ্গুর।
সিস্টেমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূষিত পাপ।এগুলোর জন্য চিকিৎসকরা দায়ী নন।
এদেশের চিকিৎসকরা খুবই দুর্বল কমিউনিটি।এরা তেমন ক্ষমতাবান নন কেউ।
কিন্ত দেশের মানুষের এখনো যেটুকু আস্থা আছে দেশের বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর তা ভেঙে গেলে লাভ হবে কার সেটাও গভীর ভাবে ভাবতে হবে।
এদেশে মিডিয়ায় অনেক দালাল আছে যারা দেশের রোগীদের বিদেশমুখী করতে চায়।এতে তারা মোটা অংকের কমিশন পায়।কলকাতায় গেলে চিকিৎসাও হয় শ্রী লেদারের জুতাও কিনা হয়।
এদেরকেও চেনা জরুরী।

আপনি একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে কি করবেন খৎনা নিয়ে?
আপনি একজন ডাক্তারের কাছেই যাবেন।
সেই চিকিৎসক কিভাবে অপারেশন করবেন জেনে নিবেন।
আপনার বাচ্চাকে কে এনেস্থিসিয়া দিবেন তার ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত হবেন।
তিনি একজন এনেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞ কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিবেন আপনি।

আপনি অভিভাবক হিসেবে এখন থেকে যেকোনো অপারেশন করানোর আগে দালালদের খপ্পরে পড়ে চুক্তিভিত্তিক অপারেশন করতে যাবেন না।
আপনি চিকিৎসককে বলবেন আমার রোগীর অপারেশন আপনি করবেন কিন্ত এনেস্থিসিয়া যিনি দিবেন তার ব্যাপারে আমি জানতে চাই,নিশ্চিত হতে চাই।

শুধুমাত্র আপনাদের সচেতনতাই পারে আপনাদের আতংকে ভোগা থেকে বিরত রাখতে।

এনেস্থিসিয়া দেওয়ার আগে আপনার রোগী ফিট কিনা অপারেশন এর জন্য সেসব চেকআপ করা হয়েছে কিনা নিশ্চিত হবেন।

দেখুন বিদ্যমান সিস্টেমেই আপনি একজন সচেতন নাগরিক হলে সুচিকিৎসা আপনি পেয়ে যাবেন।
ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দিয়ে দেশের হাজার হাজার রোগী বান্ধব চিকিৎসককে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনারাই।
একজন চিকিৎসক এর অবহেলা দিয়ে পুরো কমিউনিটিকে জাজ করাও বেইনসাফি আচরণ।

দেশের আনাচে কানাচে প্রচুর দালাল।
এদের চিহ্নিত করে বয়কট করুন।
যে চিকিৎসক অনেক ব্যস্ত,তাদের এড়িয়ে যারা কম ব্যস্ত,নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী মনযোগ দিয়ে দেখেন,তাদের দেখান।
যেকোনো অসুস্থতায় তারকা চিকিৎসক দেখানোর মনোভাব পরিহার করে যিনি যত্ন নিয়ে দেখেন,কথা শুনেন এমন চিকিৎসক দেখান।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের সর্বাঙ্গে ব্যথা
ঔষধ দিবো কোথায় অবস্থা।
এরমধ্যে মিডিয়ার ভূমিকা গঠনমূলক না,বরং চিকিৎসক বিদ্বেষী, দেশীয় চিকিৎসাবিমুখ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তা বুঝাই যায়।

একটা জিনিস খেয়াল করে দেখুন,সুন্নাতে খৎনাকে যেভাবে প্রচার করে দেশের মানুষকে আতংকিত করছে মিডিয়া,ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদকের বাসা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাওয়া কাজের মেয়েকে নিয়ে সেভাবে এই মিডিয়া নিউজ করেছে কি?
সাংবাদিকদের সাংঘাতিকতা,অপসাংবাদিকতা নিয়ে তারা কখনো নিউজ করে?
সবাই না,কিছু কিছু সাংবাদিক কি পরিমান তেলবাজ,চাটুকার, দালাল সেটা ভাতের হোটেলে গিয়ে তাদের অন্নপ্রাশন দেখলেই বুঝার কথা।

আমি বলবো আপনারা প্লিজ আতংকিত হবেন না।
আপনার বাচ্চাদের খৎনা এদেশে নিরাপদ ভাবে করানোর জন্য হাজার হাজার দক্ষ চিকিৎসক আছেন।
লাখো লাখো বাচ্চার খৎনা তারা আগেও নিরাপদে করেছেন,ভবিষ্যতেও করবেন।

সচেতন ভাবেই আস্থা রাখুন।

লেখক ডা: আহমেদ জোবায়ের : কলামিস্ট

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়