Desk

Published:
2022-06-29 23:50:31 BdST

মর্মান্তিক বেদনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ডা. অদিতি: রেখে গেছেন ৩ মাস বয়সী সন্তানকে


ডা. অদিতি


সংবাদদাতা
______________________


ডা. অদিতি সরকারের নিষ্পাপ ৩ মাস বয়সী সন্তান অবুঝ চোখে যেন হারিয়ে যাওয়া মাকেই খুঁজছে। তাকে ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অদিতির স্বজন ও সহপাঠিরা। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন সহকর্মীরাও। এ এক অসহনীয় মর্মস্পর্শী দৃশ্য।


সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৩১তম ব্যাচের প্রাক্তনী এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অদিতি সরকার আর নেই । মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মাত্র ৩ মাস বয়েসী শিশু সন্তানকে রেখে অকালেই চলে গেলেন তিনি। রেখে গেছেন আরও একটি শিশুসন্তান। বুধবার (২৯ জুন) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

ডা. অদিতি সরকার একজন বিরলপ্রজ মেধাবী চিকিৎসক উল্লেখ করে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক এবং ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ডা. সুলতানা আলগিন এক শোক বিবৃতিতে বলেন, খুবই দু:খজনক ঘটনা। এমন মৃত্যু কখনওই কাম্য নয়।
ডা. অদিতি সরকার শিশুরোগে এমডি ও এফসিপিএস করেছেন। দুই সন্তানের জননী অদিতির ছোট সন্তানের বয়স মাত্র তিন মাস।

গত ২৪ জুন ঢাকার ওয়ারী থানার হেয়ার স্ট্রিট সড়কের একটি বাসায় অগ্নিদগ্ধ হন মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. অদিতি।

এ প্রসঙ্গে অদিতি সরকারের স্বামী মনীশ মণ্ডল জানান, গতকাল দুপুরে কাজ শেষে বাসায় ফিরে একটি কক্ষে যান তিনি। এরপর হঠাৎ চিৎকার শোনা যায়। পাশের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর শরীরে আগুন জ্বলছে। পানি ঢেলে আগুন নেভানো হয়। এরপর ৯৯৯-এর ফোন করে একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তবে স্কুল সহপাঠীসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ডা. অদিতি। তাঁর শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়।

ডা. সেলিনা এ শাহীন লিখেছেন ,

#বাতাসে_পোড়া_গন্ধ_অদিতিরা_পুড়ছে

একজন মেয়ে যখন ডাক্তার হয়, সমাজ তাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে।
সে অসামাজিক, আত্মকেন্দ্রিক, অসুন্দর, বই খাতা ছাড়া কিছু চেনে না, আরো কত কত অভিযোগ।

কেউ স্বেচ্ছায় আবার কেউ বাবা মায়ের কথা রাখতে এই লম্বা পথটা পাড়ি দিতে গিয়ে না জানি কত শত স্বপ্ন আনন্দ গলা টিপে মারে , তার হিসাব ডাক্তার মেয়েদের থাকে না।

সেই যে স্কুলের শেষের দিকে দৌড় শুরু হয়, সেই দৌড় চলতে থাকে অমৃত্যু। সময়মত পাশ করতে হবে, পোষ্ট গ্রেজুয়োশান করতে হবে, সরকারী চাকুরী, বিদেশী ডিগ্রী আর সবকিছু ছাড়িয়ে যায়, বাবা মায়ের আতংক, এর তো বয়স বেড়ে যাচ্ছে, বিয়ে দিতে হবে। বাচ্চা নিতে হবে।

সমাজের বেঁধে দেয়া নিয়মে তারা চলতে চলতে ভুলেই যায়, একসময় তারাও আকাশ দেখতো, কবিতা পড়তো। কেউ মনে মনে রুপা আবার কেউ মীরা হতে চেয়েছিলো।বাবা মায়ের বকুনীর ভয়ে তাদের কখনো কৃষ্ণচূড়া দেখা হয় না।

তাদের ভালো থাকার গল্পগুলো একসময় পরিবারের কিংবা রোগীদের ভালো থাকাতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।সবাই ভাবে, এদের অনেক টাকা, এদের আবার হতাশা কি?

জীবনের কাছে আমাদের সবার নিজস্ব কিছু চাহিদা আছে।সে চাহিদাগুলো যখন সময় পেরিয়ে গেলেও পুর্নতা পায় না, মানুষ হতাশ হয়। ডাক্তার মেয়েরাও তার ব্যাতীক্রম নয়।

ঘোড়দৌড়ে পিছিয়ে যাওয়ার ভয়ে, তারা শুধু দৌড়ে যায়। বেশীর ভাগই নিজেকে ভুলে থাকে, আর যারা খুঁজতে থাকে, তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়।

ভাবছিলাম, অদিতির কথা। এতো কাঠখড় পুড়িয়ে যখন সে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে, হঠাৎ কি এমন হলো যে, সে নিজেকে ঝলসে দিতে চাইলো?

আমরা কেউ জানিই না, রোজ কতবার ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে অন্গার হয়ে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, এবার শরীর পোড়ানোর পালা?

একবারও কি মনে হচ্ছে আমাদের, দুধের শিশুটিকে রেখে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে তাকে কতবার নিজের সাথে যুদ্ধ করে হারতে হয়েছে? সদা হাসোজ্জ্যল অদিতি কত রাত গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছে?

অদিতি একা পুড়ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন, সবচেয়ে ভালো অভিনেত্রী যে ডাক্তার মেয়েটা রোজ দাপটের সাথে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায়, বিকেলে যার চেম্বারে তিল ধারণের স্থান নেই,
বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুখের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া সেই ডাক্তার মেয়েটাও রোজ পুড়ছে, বিষন্নতায় জ্বলে নিঃশেষ হচ্ছে, নিভৃতে গোপনে।

শরীর পোড়া গন্ধ সবাই পায়, মন পোড়া গন্ধ কেউ সুঁকে দেখে না।

 

ডা. শান্তা শারমিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ওয়ালে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘অদিতির সাথে আমার শেষ দেখা ৭ জুন, বিসিপিএস এর কনভোকেশনে। আমার স্কুল জীবনের বন্ধু অদিতি। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, আবেগপ্রবণ, সবসময় হাসিখুশি একটা মেয়ে। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এর ৩১তম ব্যাচের মেধাবী ছাত্রী অদিতি এর মধ্যেই এফসিপিএস এবং এমডি করেছে পেডিয়াট্রিকসে। দুই সন্তানের মা অদিতির ছোট সন্তানটি কেবল তিন মাস বয়সী।
‘অদিতি আজ শেখ হাসিনা বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট এ ৬০ শতাংশ বার্ণ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। অবস্থা আশংকাজনক। পরিচিতজনেরা বলছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল নাকি সে! তার স্বামী বলেছে ডিপ্রেশনে ভুগছিল। আবার এও বলেছে, স্বামী-স্ত্রীর ভিতরে মন কষাকষি চলছিল। অদিতিকে চিনি, সেই ছোট্টবেলা থেকে। ডিপ্রেশনে থাকার মেয়ে তো অদিতি না।

আপাত দৃষ্টিতে সুখে থাকার সব উপকরণই তার জীবনে ছিল। কিসের এত শূন্যতা ছিল, ওর জীবনে যে নিজেকে এভাবে নিঃশেষ করতে চাইলো ও? তবে কি পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছিল ও? মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন। সঠিক উত্তর একজনই দিতে পারে সে হস্পিটালের আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। "

ওয়ারি থানার ওসি কবির হোসেন হাওলাদার জানান , স্বামীর সঙ্গে রাগারাগি করে অদিতি নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন বলে বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। বাসায় জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহারের স্পিরিট ছিল। সেগুলো ঢেলেই তিনি গায়ে আগুন লাগিয়েছেন। এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়