ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2022-06-21 22:35:52 BdST

সিলেটে শিশু সার্জারির পাইওনিয়ার সার্জন ডা. শামছুর রহমান ময়না আর নেই


ছবি সৌজন্যে ডা. শরীফুল ইসলাম রুবেল

ডেস্ক
____________________

সিলেটে শিশু সার্জারির পাইওনিয়ার সার্জন ডা. শামছুর রহমান ময়না আর নেই। অকালেই হাসি খুশি সুস্থ সজীব মানুষটা সবাইকে কাদিঁয়ে চলে গেলেন। মারা যাওয়ার আগে তিনি সিলেটের বন্যাকবলিত মানুষের সেবায় নিবেদিত হয়ে কাজ করার সংকল্প করেছিলেন। সেই মহান কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতিতেই অকাল প্রয়াত হলেন তিনি।

যেমন ছিলেন দক্ষ চিকিৎসক সার্জন ; তেমনি ছিলেন ভাল মানুষ। সকলের প্রিয় ছিলেন । ডা. শামছুর রহমান ময়না সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু সার্জারী বিভাগ, সিলেট এম,এ,জি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

অধ্যাপক ডা. শামছুর রহমান ময়নার অকাল প্রয়াণে গভীর শোক জনিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা র
অধ্যাপক ও ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ডা. সুলতানা আলগিন । তিনি শোক বার্তায় বলেন , বাংলাদেশের এক সুর্যসন্তান , লোকসেবী চিকিৎসককে আমরা হারালাম। আমি প্রয়াতের পরিবারে প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাই।

লেখক ও লোকসেবী ডা. শরীফুল ইসলাম রুবেল এক গভীর শোক-তর্পণে জানান ,

শামছুর রহমান ময়না স্যার। শিশু সার্জারিতে সিলেট অঞ্চলের পাইওনিয়ার সার্জন। কাল রাতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে করা urethroplasty রোগীর ফলোআপ শুনে রাত ১ঃ০০ টায় চৌকিদেখি'র নিজ বাসায় ফিরে, স্ত্রী চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা রশীদ নিপার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে শুয়ে পড়েন।
সিলেটে এখন বন্যার দূর্ভোগের শেষ নাই।আর শিশু সার্জারীর রোগীদের শেষ ভরসাস্থল শামছুর রহমান স্যারের ও বিকল্প নাই।সুতরাং, সারা দিনের ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয়ার পর ঘুম সহজেই চলে আসে। রাত ৩ঃ০০ টায় বুকে চিন চিন সামান্য ব্যাথা অনুভব হয়। এরকম হওয়াটা অস্বাভাবিক মনে হয় নাই। পাশ ফিরে কোল বালিশটা ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। ব্যথা বাড়তে থাকল, প্রায় ঘন্টা খানেক পর বুকের উপর তিন মন ওজনের একটা পাথরের চাপ অনুভূত হল, তীব্র ব্যাথায় ঘুম ভেঙ্গে গেল।। এয়ার কন্ডিশনের ঠান্ডায় ও সারা শরীর ঘেমে উঠল। তারপর প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
শীতল, নিথর শরীর থেকে প্রাণ বায়ু অনেক আগেই বের হয়ে গিয়েছিল । ওসমানী মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে জরুরি অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু, মৃতদেহে প্রাণ ফেরানোর কোন চিকিৎসা আজ অব্দি আবিষ্কৃত হয়নি, এরকম কিছু থাকলে উনাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দিতেন না সহকর্মীরা॥
ভাবতেই অবাক লাগে, গতকাল রাউন্ড দিয়েছেন, রুগী দেখেছেন, শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। সকাল আনুমানিক ১১ঃ৩০ ঘটিকার সময় ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. শিশির চক্রবর্তী মহোদয়ের কক্ষে অনেকক্ষণ গল্প করেছিলেন।সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি, ওসমানী মেডিকেলে পানি উঠাসহ সমসাময়িক অনেক কথাই বলেছিলেন। আজ তিনিই নির্বাক॥
আমাদের অত্যন্ত প্রিয়জন ও শ্রদ্ধাভাজন ডা. শামছুর রহমান ময়না স্যার, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু সার্জারী বিভাগ, সিলেট এম,এ,জি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ; আজ সকালে ইহলোক ত্যাগ করেন।

সদা হাস‍্যোজ্জ্বল এই চিকিৎসক মানুষ হিসেব খুবই অমায়িক ও রোগী-বান্ধব ছিলেন।তাঁর দক্ষ সার্জারিতে এই অঞ্চলের অনেক জটিল শিশু রোগী সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন। সিলেটে প্রথম Conjoined twin successfully separate করেছেন তিনিই। ডা. শামসুর রহমান স্যারের ডাক নাম ছিলো ময়না। উনি যখন পোস্টিং পেয়ে সিওমেক যোগ দেন, তখন সার্জারী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রফিকুন সালেহিন স্যার টাট্টা করে বলেছিলেন, "এই হাসপাতালের ময়না রোগীদের ( শিশু রোগীদের ) জন্য একজন 'ময়না' এসেছেন"।
সিলেটে ছোট বাচ্চাদেরকে আদর করে ময়না ডাকার রেওয়াজ আছে।
সত্যিকার অর্থেই তিনি সিলেট অঞ্চলের শিশুদের সার্জিক্যাল রোগের জন্য ফেরেশতার মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর সূনিপূণ এবং নিখুঁত শৈল্য চিকিৎসার প্রশংসা সর্বজনবিদিত।
তিনি এক সময় শিক্ষক হিসাবে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগে যোগ দেন ।সিওমেক কলেজে চালু থাকা পোস্টগ্রাজুয়েশন এমএস কোর্স স্টুডেন্টদের একমাত্র অভিভাবক তিনিই। সিলেটের শিশু সার্জারীর দিকপাল একজন Disciplined gentleman।পদোন্নতি বঞ্চিত থাকায় মনে দুঃখ ছিল। পরিকল্পনা ছিল, আগামী সেপ্টেম্বরে তাঁর সরকারী চাকুরীর পঁচিশ পূর্ণ হলে ইস্তফা দিবেন এবং সিলেটের শিশু সার্জারীর উন্নতির জন্য কিছু করবেন। স্থানীয় পাইওনিয়ার হসপিটালের বর্ধিতকরণের কাজে তত্ত্বাবধান করছিলেন এবং স্থায়ীভাবে চেম্বার করার ইচ্ছে ও ছিল।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ২৫ তম ব্যাচের তুখোড় ছাত্র,ছাতকের কৃতি সন্তান ও দুই সন্তানের জনক এবং বিপিএ, সিলেট শাখার আজীবন সদস্য।অত্যন্ত সজ্জন, সদা হাস্যোজ্জল, প্রাণবন্ত একজন দক্ষ সার্জন আমাদের মাঝে থেকে অতি অল্প সময়ে চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনে হতবিহ্বল সার্জন আর স্টাফরা বলছিলেন, 'এই শহরে ময়না স্যারের সমতুল্য পেডিয়াট্রিক সার্জন তৈরি হতে আরও অনেক সময় লাগবে। তাঁর এই শুন্যতা পুরণ হওয়ার নয়।সিলেটের এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।'

 


ডা. শামসুর রহমানের মৃত্যুতে বিএনএ ওসমানী হাসপাতাল শাখার শোক


সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান, প্রখ্যাত শিশু সার্জন ডা. শামসুর রহমান ময়নার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা।

সংগঠনের সভাপতি শামীমা নাসরিন ও সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক এক শোকবার্তায় বলেন, ডা. শামসুর রহমান ময়না একজন দেশসেরা শিশু সার্জন ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র ও অমায়িক চিকিৎসক ছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তাদের সাথে তার সম্পর্ক ছিল খুবই আন্তরিক। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটের শিশু সার্জারি চিকিৎসায় বড় ক্ষতি হয়ে গেল।

নেতৃবৃন্দ ডা. শামসুর রহমান ময়নার রূহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়