Dr.Liakat Ali

Published:
2022-02-03 19:48:48 BdST

মর্গ থেকে মর্মান্তিকওমরা হজ করা কাপড় দিয়ে দাফনের আর্জি জানিয়ে ফেসবুক লাইভে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন ব্যবসায়ী ও নায়ক রিয়াজের শ্বশুর


 

সংবাদ দাতা
_______________
আবু মহসিন খান। বুধবার রাতে ধানমন্ডিতে নিজের বাসায় তিনি এ ঘটনা ঘটান।মহসিন খানের সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’আমি এই কাপড় পরে ওমরা করেছি। এই কাপড় দিয়েই যেন আমাকে দাফন করা হয়।’

আবু মহসিন খান (৫৮) চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর।

 

ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া মিডিয়ার কাছে জানান, ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন আবু মহসিন খান। রাত ৯টার দিকে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

 

খবর পেয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। উপকমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আবু মহসিন খান একাই ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলে সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন তিনি।
‘মহসিন খানের সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’ এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মহসিন খান ২০১৭ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

ঘটনাস্থলে পুলিশ আরও জানায়, মরদেহের পাশে থাকা একটি টেবিল থেকে পাঁচটি কাগজ ও কাফনের কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। কাগজে পারিবারিক নানা হতাশার কথা লেখা রয়েছে। একটি কাগজে লেখা রয়েছে কার কাছে তিনি কত টাকা পাবেন। ফ্ল্যাটের দরজায় সাদা কাগজে লেখা ছিল মামা দরজা খোলা, ধাক্কা দিয়ে ভেতরে আসুন। নিহতের বাসা থেকে তাঁর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপও জব্দ করা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া কাপড়ের ওপর একটি সাদা কাগজে লেখা ছিল, ‘ আমি এই কাপড় পরে ওমরা করেছি। এই কাপড় দিয়েই যেন আমাকে দাফন করা হয়।’

 

শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে নায়ক রিয়াজ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের রিয়াজ বলেছেন, এ মৃত্যুর বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে, তার সঙ্গেই তাঁরা একমত পোষণ করবেন।

প্রয়াতের এক আত্মীয় জানান , মহসিন খান পোশাক কারখানায় সুতা সরবরাহ করতেন। ঋণে জর্জরিত হয়ে তিনি ব্যবসা ছেড়ে দেন। ২০১৭ সালে তাঁর মূত্রনালিতে ক্যানসার ধরা পড়ে। বিদেশে চিকিৎসা করেছিলেন।বাসায় কোনো কাজের লোক ছিল না। বাইরে থেকে খাবার এনে খেতেন।

আবু মহসিন খানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান।

আবু মহসিন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। ছেলে বড়। তিনি মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।

ফেসবুক লাইভে যা বলেছেন, বিস্তারিত বিবরণ
_______________

মো. আবু মোহসীন খান আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে লাইভে লাইভে আসেন। সেখানে তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের হতাশার কথা বলেন। এরপর তিনি নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন।

আত্মহত্যার আগে তিনি বলেন, 'আমি মহসিন। ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো এক সময়ে আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছুই নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো, মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, সেটা শেয়ার করলে হয় তো সবাই জানতে পারবে, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবে।'

'গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে, মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। কষ্ট লেগেছে। আজকে আমার আরেকজন খালা মারা গিয়েছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তার তিনটা ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন–কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলব, এই খালা অনেকটা লাকি।'

 

'আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে, এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি। ছেলেমেয়ে স্ত্রী যাদের জন্য যাই কিছু আমরা করি। আমরা সব কিছু করি সন্তান এবং ফ্যামিলির জন্য।'

'আপনি যদি একশ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন, তার টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তাহলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়।'


'গত করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বোঝেন। যাদের জন্য আমি বেশি করছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে।'

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা সুলতানা আলগিন এর পরামর্শ 

________

এই মর্মান্তিক মৃত্যু প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর ডা সুলতানা আলগিন বলেন, এ এক শোকাবহ ঘটনা। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন দরকার।
মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে এই ভুক্তভোগীরা এই অনাকাঙ্খিত ভুলের দিকে অনেকে ধাবিত হন। এধরণের মানসিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে তাঁরা মনোরোগ চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে পারেন। মনো সেবা নিলে অনাকাঙ্খিত ভুল পথে ধাবিত হতেন না। জীবনের পথে থাকতেন। জীবন বড় মূল্য বান ও আনন্দময়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগে এদের সেবা দেওয়ার জন্য উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক নানা সেবা রয়েছে।
মনোরোগ বিভাগের নানা ক্লিনিক ও বিএসএমএমইউ র বৈকালি বিশেষ চেম্বারে গিয়ে সেবা নিয়ে রোগী নিজেকে জীবনের পথে সচল রাখতে পারেন।

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়