Dr.Liakat Ali

Published:
2022-02-02 19:50:25 BdST

সিডনিতে বাংলাদেশি মেডিকেল ছাত্রী খুন, এসিড ভর্তি বাথটাবে লাশ ফেলে রেখেছিল প্রেমিক মিরাজ


 

সংবাদ দাতা
_________________

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি মেডিকেল ছাত্রী নির্মম ভাবে খুন হয়েছে। তাকে হত্যা করে এসিড ভর্তি বাথটাবে ফেলে রাখে পাকিস্তান প্রেমিক মিরাজ জাফর ।
সার্জন বা চিকিৎসক হয়ে মানবসেবা করার স্বপ্ন দেখা আরনিমা হায়াৎ এর এই নির্মম খুন হওয়া ভীষণ ঝড় তুলেছে বাংলাদেশী সমাজে। সবাই দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।

ঘাতক মিরাজ জাফর ও অারনিমা হায়াৎ


সিডনির উত্তর প্যারাম্যাটার পেনান্ট হিলস রোডের একটি বাসায় অ্যাসিডভর্তি বাথটাবে এ লাশ পাওয়া যায়। গত রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।

এ হত্যার দায়ে ২১ বছর বয়সী পাকিস্তানি প্রেমিক মিরাজ জাফরকে আটক করা হয়েছে।

ডাক্তার হয়ে মানবসেবা করার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশী আরনিমা হায়াৎকে নিষ্ঠুরতম উপায়ে খুন ও প্রমাণ লোপাটের অপচেষ্টাকে এক শোকাবহ বেদনাদায়ক ঘটনা বলে উল্লেখ করে ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর ডা সুলতানা আলগিন এক শোকবার্তায় প্রয়াত মেডিকেল ছাত্রীর পরিবার সদস্যদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানিয়েছেন। তিনি হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।

প্রাথমিক তদন্তে পারিবারিক কলহে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। লাশ দীর্ঘক্ষণ অ্যাসিডে ডুবে থাকার কারণে তরুণীর পরিচয় ও অন্যান্য প্রমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সার্জন হয়ে মানবসেবা করার স্বপ্ন দেখা
আরনিমা হায়াৎ–এর
পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। প্রেমের সম্পর্ক থেকে পরিবারের অমতে ছয় মাস ধরে আলাদা ছিলেন আরনিমা হায়াৎ। তাঁরা বিয়েও করেছিলেন বলে পরিবারের ধারণা। আটক তরুণ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ২১ বছর বয়সী মিরাজ জাফর তাঁর স্বামী।

সার্জন হয়ে মানবসেবা করার স্বপ্ন দেখা
আরনিমা হায়াৎ–এর বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডের আগে মধ্যরাতে চিৎকারের আওয়াজ পান প্রতিবেশীরা। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমি আমার বাসার পেছনে ছিলাম। আনুমানিক রাত ২টার দিকে আমি কারও কথা শুনতে পাই। প্রথমে মনে হচ্ছিল, তাঁরা গান গাওয়ার জন্য চিৎকার করছে। এর একটু পরই সব চুপ।

ঘাতক মিরাজ জাফর ও অারনিমা হায়ৎ

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তমতে, আরনিমা হায়াৎকে আগে হত্যা করা হয়। পরে প্রমাণ নষ্ট করতে একটি বাথটাব অ্যাসিড ভর্তি করে সেখানে আরনিমার লাশ ফেলে রেখে চলে যান মিরাজ জাফর। যাতে লাশ শনাক্ত করণ কঠিন হয়। আটক করার পর তিনি আদালতে উপস্থিত হননি। এমনকি জামিনের জন্যও আবেদন জানাননি মিরাজ জাফর। আগামী এপ্রিলে এ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

 

আরনিমা হায়াৎ–এর বাবা আবু হায়াৎ ও মা মাহাফুজা হায়াৎ। তাঁরা ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে আরনিমার বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। আরনিমা ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে সিডনির টেম্পি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন আরনিমা। আরনিমার চিকিৎসক সার্জন হওয়ার স্বপ্ন ছিল বলে জানান বাবা। মেয়ের জন্য একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও কিনেছিলেন তিনি। তবে মনোমালিন্যের জেরে গাড়িটি অব্যবহৃত আছে।

মেডিকেল ছাত্রী মেয়ের এমন মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন মা ও বাবা। বুকভাঙা আহাজারি নিয়ে বাবা আবু হায়াৎ বলেন, ‘আমি তিলে তিলে আমার মেয়েকে গড়ে তুলেছিলাম… সে বড় সার্জন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। ওরা আমাকে মেরে ফেলত, আমার মেয়েকে মারল কেন। তারা দুনিয়াতে এসেছে, থাকত, দেখত, কেন ওকে হত্যা করা হলো। আমি হাসপাতালে ফোন দিয়েছিলাম, তারা বলেছে, সমস্ত শরীর ঝলসে গেছে।’ বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন আরনিমার মা মাহাফুজা হায়াৎ। বারবার শুধু বলছেন, ‘আমার মেয়ে আর ফেরত আসবে না।’

বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে সিডনির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। বর্বোরচিত এ হত্যাকাণ্ড ব্যাপক আলোচনায় এসেছে সিডনিতে। অস্ট্রেলিয়ার সব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে এ সংবাদ।
সবাই নজির মূলক বিচার দাবি করেছে খুনি মিরাজ জাফরের।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়