Dr. Aminul Islam

Published:
2022-01-30 23:17:17 BdST

ক্লিনিক চিকিৎসকদের বেতন কাঠামো কেমন হওয়া উচিৎ? একটি পয়েন্ট টু পয়েন্ট বিস্তারিত প্রস্তাব


 

 


ডা. আজাদ হাসান
________________


স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে বেসরকারি খাতে গড়ে উঠা শত শত প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্মরত হাজার হাজার জুনিয়র চিকিৎসকদের জন্য আজো গ্রগন যোগ্য কোনো বেতন কাঠামো গড়ে উঠে নাই। তাই বেসরকারী ক্লিনিক এবং হাসপাতালে কর্মরত নবীন এবং প্রতিশ্রুতিশীল চিকিৎসকরা আজ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। চিকিৎসা পেশা একটি উন্নত বিজ্ঞান, তাই
স্বভাবতই দেশের মেধাবী ছাত্ররাই চিকিৎসা পেশায় আসেন। আর এই সব মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নতুবা এক সময় দেশ হয়ে পড়বে মেধা শূন্য।

আমাদের দেশে সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এবং কিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান পরিচালিত বিভিন্ন সংস্থা স্বতন্ত্র ভাবে "মেডিক্যাল সেন্টার" পরিচালিত করে থাকে।
উদাহরণ স্বরুপ বেশ কিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে -
বিসিআইসি পরিচালিত বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে অবস্থিত মেডিক্যাল সেন্টার।
বাংলাদেশ পোর্ট অথরিটি হাসপাতাল। ( চট্টগ্রাম ও মোংলায় অবস্থিত)
চট্টগ্রাম ইপিজেড-এ বেপজা পরিচালিত মেডিক্যাল সেন্টার
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত মেডিক্যাল সেন্টার।

এসব প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। এ সব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব নিয়মের আলোকে চিকিৎসকদের বেতন ভাতা দিয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সার্বিকভাবে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য আজো কোনো সমন্বিত বেতন স্কেল গড়ে উঠে নাই।
এহেন বাস্তবতায় বেসরকারি ক্লিনিকে বা হাসপাতালে কর্মরত তরুণ চিকিৎসকদের জন্য "স্বতন্ত্র বেতন স্কেল" প্রবর্তন করা সময়ের দাবী। আর তাদের সেই দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমর্থন জানিয়ে আজ এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করছি।


প্রাইভেট ক্লিনিকে একজন মেডিক্যাল অফিসারের বেতন স্কেল কেমন হওয়া উচিত?

১) মাসিক বেতনঃ
মূল বেতন (২৫০০০/= টাকা) + বাড়ী ভাড়া ( মূল বেতনের ৪০-৫০%) + টিফিন এলাউন্স ( মাসিক ২০০০/= টাকা + ট্রান্সপোর্ট এলাউন্স ৪০০০/= + ড্রেস এলাউন্স (১০০০/= টাকা) + সার্ভেন্টস্ এলাউন্স ( ৩০০০/= টাকা) + ওটি এসিস্ট্যান্স ফিস্ (ফার্স্ট এসিস্ট্যান্ট সার্জনস্ ফিসের ১০%, এবং সেকেন্ড এসিস্ট্যান্ট সার্জনস্ ফিসের ৫℅)।

২) অন্যান্য এলাউন্সঃ
ক) চিল্ড্রেন এডুকেশন এলাউন্স।
প্রতি বাচ্চার জন্য মাসিক ১০০০/= টাকা। দু'জন বাচ্চার জন্য এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে।
খ) প্যাথলজি এবং রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদেরকে তাদের রুটিন ওয়ার্কের জন্য প্রফেশনাল রিস্ক এলাউন্স হিসেবে সারা বছর মাসিক বেতনের অতিরিক্ত বেসিক স্যালারির ১৫% হারে "প্রফেশনাল রিস্ক এলাউন্স" দিতে হবে।
গ) "ইনফেকশাস ডিজিজ রিস্ক এলাউন্স":
★ প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিতে ডিউটি করার জন্য সকল চিকিৎসককে বেসিক স্যালারীর ১০% শতাংশ হারে,
★ প্যাথলজি এবং রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের চিকিৎসকদের জন্য বেসিকের ১৫% শতাংশ হারে,
★ গাইনী এন্ড অবস এবং সার্জারীর চিকিৎসকদের ২০% শতাংশ এবং
★ আইসিইউ, এইচডিইউ এবং এনেস্থিসিয়ার চিকিৎসকদের জন্য ২৫% শতাংশ রিস্ক এলাউন্স দিতে হবে।

৩) বিশেষ ভাতাঃ
ক) নব বর্ষের ভাতা (বেসিক স্যালারীর ৫০%)।
খ) উৎসব ভাতা।
ইসলাম ধর্মাবলম্বী চিকিৎসকগণ দুই ঈদে দু'টি বেসিক স্যালারী (অর্থাৎ প্রতি ঈদে একটি বেসিক স্যালারী) অতিরিক্ত প্রাপ্য হবেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী চিকিৎসক গণও প্রতি বছর দুটি বেসিক স্যালারী উৎসব বোনাস হিসেবে প্রাপ্য হবেন।
উল্লেখ্য প্রভিশনাল পিরিয়ড -এ ( অর্থাৎ চাকুরীর প্রথম এক বছর) দুই ঈদ মিলিয়ে একটি বেসিক স্যালারীর সমান বেতন প্রাপ্য হবেন। আর একটি বিষয় উল্লেখ্য, উৎসব বোনাস পূর্ববর্তী মাসের বেসিক অনুযায়ী হিসাব করা হবে।

৪) বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি।
প্রতি বছর নিম্ন লিখিত হারে বেতন বৃদ্ধি পাবে।

বেতন স্কেলঃ
২৫০০০ - ১৫০০x৮ ইবি ২৫০০x ৮ টাকা।।

অর্থাৎ প্রথম ৮ বছর প্রতি এক বৎসর চাকুরীর জন্য ১৫০০/= টাকা হিসেবে বেতন বৃদ্ধি (ইন্ক্রিমেন্ট) প্রাপ্য হবেন এবং পরবর্তী ৮ বছর প্রতি এক বৎসর চাকুরীর জন্য ২৫০০/= টাকা হিসেবে বেতন বৃদ্ধি (ইন্ক্রিমেন্ট) প্রাপ্য হবেন। এবং ১৬ বছর চাকুরী করলে যেটা বেতন প্রাপ্য হবেন সেটাই একজন মেডিক্যাল অফিসারের স্যালারীর সর্বোচ্চ সীমা হিসেবে গন্য হবে।

৫) গ্রাচ্যুয়েটিঃ
একজন চিকিৎসক কোনো হাসপাতালে নূন্যতম পাঁচ (৫) বছর চাকুরী করলে গ্রাচ্যুইটি প্রাপ্য হবেন। একজন চিকিৎসক যত বছর চাকুরী করবেন, তত মাসের বেতন গ্রাচ্যুয়িটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন।

মাসিক কর্তনঃ
১) কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড। অর্থাৎ একজন চিকিৎসক প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য যত টাকা জমা করবেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উক্ত চিকিৎসকের জন্য তত টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করবেন।

প্রসংগত উল্লেখ্য প্রভিশনাল পিরিয়ড সমাপ্ত হলে একজন চিকিৎসক তাঁর বেতনের শতকরা ২.৫% হতে ৭.৫% শতাংশ হারে প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করতে পারবেন। তবে সেটা কোনো অবস্থায় ৭.৫%-এর বেশী হতে পারবে না।
২) এম্প্রয়িজ ওয়েলফেয়ার ফান্ডঃ প্রতি মাসে মাসিক বেতন হতে শতকরা ১.৫ হতে ২.০% শতাংশ টাকা এম্প্রয়িজ ওয়েলফেয়ার ফান্ডের জন্য কর্তন করা হবে। উক্ত ফান্ড হতে কোনো স্টাফের এক্সিডেন্ট কিংবা দূরারোগ্য ব্যাধি কিংবা আপদ কালীন সময়ে এককালীন সাহায্য দেয়া হবে।
৩) কোনো চিকিৎসক চাকুরী হতে রিজাইন করতে চাইলে তিনি দুই মাস পূর্বে পদত্যাগ পত্র সাবমিট করবেন, সে ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ বেতন প্রাপ্য হবেন। অথবা এক মাসের স্যালারী সারেন্ডার করে চাকুরী হতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারবেন।

বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করে জীবন পরিচালনা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে এমন বাস্তবতায় চিকিৎসকদের বেতন ভাতা সংক্রান্ত আমার লেখা প্রস্তাব সমূহ বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রাখছি।

ডা. আজাদ হাসান
সিওমেক-২১।।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়