Dr. Aminul Islam

Published:
2021-12-23 21:07:11 BdST

রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতাল থেকে লিখছি, এখন ভালো আছি : ডা আহমেদ শরীফ শুভর হৃদয় ছোঁয়া লেখা


 

ডেস্ক
__________________


রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতাল থেকে লিখছি, এখন ভালো আছি :পাঠকপ্রিয় কলামিস্ট  ডা আহমেদ শরীফ শুভর হৃদয় ছোঁয়া লেখা।

তিনি নিজেই লিখেছেন তাঁর সর্বশেষ হালহকিকত, সুস্থ হয়ে ওঠার কথা।
তাঁর লেখা পত্রস্থ করা হল।
প্রিয় সবাই,

আজকের কথা দিয়েই শুরু করি। শুরুর কথা আর এই পথপরিক্রমার কথা সময় করে লিখবো। আরেকটু শক্তি আর মনোঃসংযোগ বেড়ে নিক।

রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতাল থেকে লিখছি। এখানে এসেছি বিজয় দিবসে। ৮ তারিখে আমার চার ধমনী বাইপাস অপারেশনের পর আইসিউই ও কার্ডিয়াক ওয়ার্ড ঘুরে এখানে এসেছি। সবাইকে রিহ্যাবে যেতে হয় না। যেহেতু আমার ১৫১ সেন্টিমিটার অদীর্ঘ এবং ৫০.৬৮ কেজি ওজনের শরীরে ৫ ঘন্টাব্যাপী এই জটিল অপারেশন হয়েছে এবং এনেস্থেশিয়া থেকে সরাসরি প্রভাবমুক্ত হতে প্রায় ১৬ -১৭ ঘন্টা লেগেছে চিকিৎসকেরা ভেবেছেন আমার অপারেশনোত্তর রিকভারির পথটা দীর্ঘ ও অমসৃন হতে পারে। তাই ইনপেসেন্ট ফিজিওথেরাপি আর অকোপেশনাল থেরাপির জন্য এখানে পাঠানো।

এত বড় অপারেশনের পর যা হয়! ব্যথা তেমন প্রকট নয়। ব্যথানাশক ওষুধের সাহায্যে সেটা সামলানো যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষুধামন্দা, মাত্রারিক্ত ক্লান্তি আমার রিকভারিকে শ্লথ করে দিচ্ছে। সেই সাথে আছে কাশি। কথা বললেই কাশি হয়। বাঁ দিকের ফুসফুসের নিচের অংশ সংকুচিত (কলাপস) করেছিল। এখনো পুরোপুরি প্রসারিত হয়নি। সে দিকে একটু পানিও জমেছে। ডাক্তার মনে করছেন একটু ইনফেকশনও আছে। তাই আজ থেকে এন্টিবায়োটিক শুরু করেছেন।

গত ৬ দিন এখানে আছি। অথচ থেরাপি নিতে পেরেছি মাত্র ২ দিন। এখানে শনি রবিবারে ছুটির দিনে যে কোন একদিন থেরাপি হয়। আমার রবিবারে হওয়ার কথা। সেদিন ভোরতরাত থেকে শুরু হলো বমি এবং মাথা ঘোরানো। পরে বোঝা গেল সেটা হয়েছে একটি ব্যথানাশকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে (যা পরে বন্ধ করা হয়েছে)। সারাদিন ঘোরের মধ্যে গেল। ফিজিও থেরাপি নেয়ার শক্তি ছিল না।

গতকাল ভোরে মুখোমুখি হলাম সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটের। আমার কেবিন যে ওয়ার্ডে সেখানে কোভিড হানা দিয়েছে। সনাক্ত রোগীকে সাথে সাথে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে পুরো হাসপাতাল লকডাউনে। সবাই যে যার কেবিনে বন্দি। ফিজিও থেরাপিসহ সব কর্মসূচি বন্ধ গত ২ দিন ধরে। কাল আমাদের সবার টেস্ট করিয়েছে। সবারই নেগেটিভ এসেছে। আজ আবার করেছে। যদি সবার নেগেটিভ আসে তাহলে হয়তো আগামীকাল থেকে সব কিছু স্বাভাবিক হবে।

ওয়াকার ছাড়া ১০ মিনিট হাঁটা, দাঁড়িয়ে গোসল করতে পারা এবং বাসার দোতলার বেডরুমে পৌঁছানোর সিঁড়ি ভাঙার মতো সামর্থ্য অর্জন করতে পারলে আমাকে ছাড়বে। ওরা আশা করছে সেটা বড়দিন কিংবা তার ২/১ দিন পর এচিভ করা যাবে। হাসপাতালে কোভিড আক্রমণ না হলে হয়তো লক্ষ্য সহজেই অর্জিত হতো। এখন অনিশ্চিত।

ক্লান্তি এবং একাকীত্ব এখানকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ৪/৫ পৃষ্ঠা পড়ার পর ক্লান্ত লাগে, বেশিক্ষণ কথা বললে কাশি উঠে, ক্লান্ত লাগে। আর কোভিড রেষ্ট্রিকশনের কারণে দর্শনার্থী নিষিদ্ধ। অপারেশনের আগেরদিন ওরা সেই যে ড্রপ করে গেছে তারপর আর রুমা, অন্তরা আর সৌরভের সাথেও দেখা নেই। আমার যেহেতু বিভিন্ন রকম খাদ্যে (গ্লুটেন, ল্যাকটোজ, ফ্রুক্টোজ) ইনটলারেন্স আছে, তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাসা থেকে খাওয়া পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন। রুমা, অন্তরা ও আমার শ্যালক শোভন নিয়মিত খাওয়া ড্রপ করে যাচ্ছে রিসেপশনে। তাই কিছুটা হলেও খেতে পারছি।

আপনাদের সবার দোয়া ও শুভকামনার কথা এখানে লিখছি না। তার জন্য আলাদা করে লিখবো। আপনারা অনেকে আমাকে ভালোবাসেন জানতাম, এতোটা ভালোবাসেন জানতাম না। এই নিয়ে অনেক কিছু লেখার আছে, অনেক কিছু বলার আছে। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাকে সেই সুযোগ দেন। তাঁর দরবারে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

আমার অসুস্থতা আর এই পথপরিক্রমা নিয়েও অনেক কথা বলার আছে, লেখার আছে। আমার এই পথপরিক্রমা থেকে অনেকেরই অনেক কিছু জানার এবং শেখার আছে। আমি যদি তা শেয়ার না করি তাহলে নিজের কাছে দায়বদ্ধ থাকবো।

আপনাদের অব্যাহত দোয়া কামনা করি।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়