SAHA ANTAR

Published:
2021-11-03 22:07:45 BdST

মর্গ থেকে মর্মান্তিকযাকে স্নেহ করতেন ৯১ বছরের বৃদ্ধা, প্রতিদানে সেই গাড়ি চালকই খুন করলো তাঁকে


 

অর্ণব আইচ______

মা ঘুম থেকে উঠছেন না। ব্যাডমিন্টন খেলে ছাদ থেকে নেমে ফ্ল্যাটে ঢুকতেই এই কথা বলেছিলেন পরিচারক। এই কথা শুনেই মায়ের ঘরের ভেজানো দরজা খুলে ঢুকে যান বাড়ির কর্তা অভয় চৌধুরী। পেশায় তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ৯১ বছরের বৃদ্ধা মাকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছেন তিনি। গা, হাত, পা ঠান্ডা। মুখের ডানদিকের একপাশ দিয়ে বের হচ্ছে রক্ত। কয়েক ফোঁটা রক্ত পড়েছে বালিশেও। বৃদ্ধা রেণুকা চৌধুরীর শরীর থেকে খোয়া গিয়েছে সোনার বালা, আংটি, হার, কানের দুল-সহ যাবতীয় গয়না। ঘর থেকে উধাও দু’টি মোবাইল ও আলমারির চাবি। ফলে লুঠপাট হয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের। এই ঘটনায় পরিবারের প্রাক্তন গাড়িচালক দুধকুমার ডল ওরফে সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

পুলিশ ওই বহুতল ও তার আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুধকুমারকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জেনেছে, সোমবার বিকেলে ফ্ল্যাটে রেণুকা চৌধুরির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল দুধকুমার। রাত ১২টা ৫ মিনিটে এক ব্যক্তি ফ্ল্যাট থেকে বের হয়। প্রথমে সে ছাদে ওঠে। কিন্তু দরজা বন্ধ দেখে ১২টা ৯ মিনিটে একতলায় নেমে এদিক ওদিক তাকায়। এরপর বাঁদিক ঘুরে চলে যায় বহুতলের পার্কিং লটে। ফুটেজে তাকে দেখা যায়নি। সম্ভবত মূল গেট দিয়ে বাইরে না বেরিয়ে বহুতল আবাসন চত্বরে পার্কিং করা গাড়ির উপর উঠে দেবদারু গাছ বেয়ে পাঁচিল টপকে হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট ধরে পালায় সে। মোবাইলের সূত্র ধরেই ডানকুনিতে তার সন্ধান মেলে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিচারক পবন যাদবের ভূমিকাও।


শেক্সপিয়র সরণি (Shakespeare Sarani) থানার ঢিলছোঁড়া দূরত্বে ১১ তলা বহুতলটির ১০ তলার ফ্ল্যাটে থাকে চৌধুরী পরিবার। মৃতা রেণুকা চৌধুরি ছিলেন এমএ এবং এলএলবি। তিনি একটি নামী স্কুলে একসময় শিক্ষকতাও করতেন। তিন মাস আগে মৃত্যু হয় স্বামীর। তিনি ছিলেন একটি নামী সংস্থার এমডি। বড় ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন আমেরিকায়। ছোট ছেলে অভয় চৌধুরী থাকেন মায়ের কাছে। সঙ্গে থাকেন পরিচারক পবন যাদব। অভয়ের দুই সন্তান থাকেন বিদেশে। বহুতলের একেক তলায় চারটি ফ্ল্যাট। চৌধুরীদের চারটি ঘর ও হল ছাড়াও ফ্ল্যাটের একদিকে রয়েছে পরিচারকের থাকার জায়গা। ফ্ল্যাটের মূল দরজা ছাড়াও পরিচারকের ঘর লাগোয়া একটি দরজা ও গ্রিলের গেট রয়েছে। গেটে তালা দেওয়া থাকত।

অভয় চৌধুরি জানান, সোমবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ তাঁর মা ঘুমোতে যান। এরপর পরিচারক ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে দেন। তিনি ঘুমিয়ে পড়েন রাত দশটা নাগাদ। সকাল পৌনে ৬টা নাগাদ তিনি যখন ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য ছাদে যান, তখনও মূল দরজা ভেজানোই ছিল। তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর পরিচারক দরজা খুলেছেন। তিনি ছাদের কোর্টে ব্যাডমিন্টন খেলে নেমে আসেন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। তখনই খেয়াল করেন যে, পরিচারকের ঘর লাগোয়া গ্রিলের তালাটি পড়ে রয়েছে মেঝেয়। সন্দেহ হয়। তিনি দেখেন, মূল দরজা ভেজানোই রয়েছে। অচেতন অবস্থায় মাকে দেখে ওই বহুতলেরই বাসিন্দা এক চিকিৎসককে ডাকেন। চিকিৎসক জানান, তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সন্দেহের বশে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন।

অভয় চৌধুরির দাবি, এখন তাঁর কোনও গাড়ি নেই। ৬ বছর ধরে গাড়িটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। যদিও পুলিশ জানতে পারে, সাত বছর আগে চালক হিসাবে নিযুক্ত হয় দুধকুমার ওরফে সুমন নামে ওই যুবক। বছর দেড়েক গাড়ি চালিয়েছিল সে। এরপর গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। চালককে স্নেহ করতেন বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলে। তাই কয়েকমাস অন্তর সে তাঁদের ফ্ল্যাটে আসত। তাঁদের কাছে টাকাও চাইত। পরিচারক পবনকে নিয়ে দীপাবলী পালনের আয়োজন করছিলেন বৃদ্ধা। তখনই সে এসে টাকা চেয়েছিল। যদিও তার উদ্দেশ্য ছিল গয়না লুটপাট। গভীর রাত পর্যন্ত বৃদ্ধার ঘরে সে লুকিয়ে ছিল বলেই ধারণা পুলিশের। অভিযুক্তকে ধরার পর তাকে জেরা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে অন‌্য কেউ জড়িত কি না তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। সংবাদ প্রতিদিন

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়